বহরমপুরের গোরাবাজারের ২৬/৮ শহিদ সূর্য সেন রোড— যা লোকমুখে স্যুইমিং পুলের গলি নামে পরিচিত। সেখানে একটি মেসবাড়িতে থাকতেন বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রাণিবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা। সেখান থেকে খানিটা দূরে শহরের জনপ্রিয় ‘মোহনের মোড়’। সেই মোড়েই একটি শপিংমলের ‘মাল্টিপ্লেক্সে’ বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে একাই হেঁটে মেসে ফিরছিলেন। আর তখনই তাঁর পিছু নিয়েছিল প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্ত। মেসের সামনে গলিতে সুতপাকে একা পেয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টাও করেছিলেন। তার পরেই কথা কাটাকাটি এবং শেষে ছুরি দিয়ে সুতপাকে কুপিয়ে খুন!
এলাকাবাসীরা জানান, সেই সময় সুশান্ত বলছিলেন, এক জনকে খুন করলেও যা হবে, দশ জনকে খুন করলেও তাই হবে। প্রত্যক্ষদর্শীদের শাসানোর সময়েও সুতপাকে ক্রমাগত কোপ মারতে থাকেন সুশান্ত। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো ফুটেজে তা দেখা গিয়েছে। সুতপা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লে সেখান থেকে পালিয়ে যান যুবক। পরে সেই দিন রাতেই তিনি শমসেরগঞ্জে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
কিন্তু গত ২ মে-ই কেন সুতপাকে খুন? ধরা পড়ার পর পুলিশি জেরায় তা স্বীকার করেছিলেন সুশান্ত। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সুশান্ত জানিয়েছিলেন, সুতপা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলেও তাঁকে মন থেকে ভুলতে পারিনি তিনি। বিহারের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলেও মন টেকেনি সেখানে। শুধু মাত্র সুতপাকে দেখার নেশায় বহরমপুরের একটি মেসবাড়ি ভাড়া করেছিলেন।
উদ্ধার করা হয় ঘটনার সময় ভয় দেখাতে ব্যবহার করা খেলনা পিস্তলটিও। একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘটনার কয়েক দিন আগে সেটি কিনেছিলেন সুশান্ত। বয়ান রেকর্ডের জন্য ডাকা হয় ই-কমার্স সংস্থার প্রতিনিধিকে। যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুতপাকে খুন করা হয়েছিল, সেটি বহরমপুরের প্রাঙ্গণ মার্কেট এলাকার একটি দোকান থেকে কেনা হয়। সেই দোকানমালিক ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সুতপা যে মেসে থাকতেন, সেই মেসের মালিককেও তদন্তের আওতায় আনে পুলিশ।
সরকার পক্ষের হয়ে সাক্ষ্য দেন মৃতার বাবা-সহ দুই প্রত্যক্ষদর্শী, এক সাংবাদিক, ই-কমার্স সংস্থার প্রতিনিধি, দুই ব্যবসায়ী, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, সুতপাকে মৃত ঘোষণা করা চিকিৎসক, পুলিশ এবং আরও অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে বান্টি ইসলাম সেই দিনের ঘটনার নৃশংসতা আদালতকক্ষে বর্ণনা করেন। চলতি মাসের ২৯ অগস্ট আদালত উভয় পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর সুশান্তকে ৩০২, ২০১, ২৮এ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে।
মনোবিদদের একাংশের মতে, প্রেম-ভালবাসার সঙ্গে অধিকারবোধের এক রকম সম্পর্ক রয়েছে। সুতপার প্রত্যাখ্যান মানসিক ভাবে গ্রহণ করতে পারেনি সুশান্ত। প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি তরুণী অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় প্রতিশোধস্পৃহা তৈরি হয়েছিল সুশান্তের মধ্যে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হয় আমার, নয়তো কারও নও— এই প্রবণতা থেকেই সুশান্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এটা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা।’’ বৃহস্পতিবার রায়ের পর একই কথা বলেছেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সমাজে যে কোনও সম্পর্ক থেকেই বেরিয়ে আসার অধিকার রয়েছে সকলের। যেটা মেনে নিতে পারেনি সুশান্ত। এটা এক ধরনের জঘন্যতম অধিকারবোধের উদাহরণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy