Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
Tintin

Tintin: চন্দননগরে টিনটিন! কলকাতা যা পারেনি তা-ই করে দেখিয়েছিল গঙ্গাপাড়ের ফরাসি উপনিবেশ

এ যেন ছাতি ফাটা তেষ্টার মুখে এক গেলাস কেওড়া দেওয়া শরবৎ! টিনটিন-প্রেমীরা অবশ্য অমৃতও বলতে পারেন।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ

ঐন্দ্রিলা বসু সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৪৫
Share: Save:

টিনটিনে মাতোয়ারা বাঙালি পাঠকের আফসোস ছিল একটাই। ব্রাসেলসের রিপোর্টারের বাংলাটা ঘুরে যাওয়া হল না। দক্ষিণেশ্বরের মন্দির, হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ কিংবা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের জমজমাট রাস্তা দিয়ে সে এক বারও ছুটল না ‘দুষ্টু লোকের’ পিছনে। আফসোসটা পাকতে পাকতে এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, কল্পনাপ্রবণ বাঙালি টিনটিনকে ধুতি-পাঞ্জাবি পরিয়ে তবেই দম নিয়েছিল! তবে তাদের বেদম চমকে দেওয়ার মতো একখানি তথ্য প্রকাশ্যে এল টিনটিনের জন্মদিনে। জানা গেল টিনটিন বাংলায় না আসতে পারেন, তবে তাতে তাঁর ‘বং কানেকশন’-এ টান পড়েনি। ছিপছিপে চেহারার সোনালি চুলের বেলজিয়ান রিপোর্টারের একেবারে মুখের গোড়ায় হাজির হয়েছিল খোদ বাংলাই।

এ যেন ছাতি ফাটা তেষ্টার মুখে এক গেলাস কেওড়া দেওয়া শরবৎ! টিনটিন-প্রেমীরা অবশ্য অমৃতও বলতে পারেন। তবে টিনটিনের এই বঙ্গ যোগে কলকাতার নাম-নিশান নেই। তার বদলে আছে হুগলি তীরের এক ফরাসি উপনিবেশ— চন্দননগর।

ঘটনাটা ঘটেছিল আাচমকাই। ‘ফ্লাইট ৭১৪ টু সিডনি’ গল্পে টিনটিনের স্রষ্টা বেলজিয়ান সাহেব জর্জ রেমি বা অ্যার্জে টিনটিন আর তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে গিয়ে ফেলেছিলেন জাকার্তার সন্দোনেশিয়ান আইল্যান্ডে। যেখানে টিনটিনের মোলাকাত হবে তার সবচেয়ে বড় শত্রু রাস্তাপপুলোসের সঙ্গে। কিন্তু তার আগে জাকার্তা বিমানবন্দরে নামতেই বাধে গোলমাল। টিনটিনের দুই বন্ধু ক্যাপ্টেন হ্যাডক ও প্রফেসর ক্যালকুলাসের কথোপকথনে হঠাৎই উঠে আসে চন্দননগরের নাম।

আসলে ‘কানে খাটো’ প্রফেসরকে জাকার্তার নাম বোঝাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন। বিরক্ত হয়ে গালাগালিও দিচ্ছিলেন বিস্তর। তেমনই একটি শব্দ ভুল করে চন্দননগর শুনে ফেলেন ক্যালকুলাস। যদিও গল্পের ইংরেজি অনুবাদে চন্দননগর শব্দটি বাদ পড়ে। বদলে হয় রেঙ্গুন। কিন্তু মূল গল্প অর্থাৎ ফরাসি ভাষায় লেখা চিত্রকাহিনিতে ক্যালকুলাসকে চন্দননগরই বলতে দেখা যায়।

অ্যার্জে অবশ্য এই কাহিনি যখন লিখেছিলেন, তখন চন্দননগরের নাম ছিল চান্দেরনগর। হুগলি নদীর চাঁদের মতো বাঁকের মুখে গড়ে ওঠা শহর। তাই ওই নাম। কমিকসে ক্যালকুলাসও চান্দেরনগর শব্দটিই ব্যবহার করেছেন।

এত নাম থাকতে হঠাৎ বেলজিয়ান কার্টুনিস্ট চন্দননগরের নাম কেন বেছে নিলেন সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে! তবে সে সময় ফরাসি পত্রিকাতেই প্রকাশিত হত টিনটিন। ফরাসিদের কাছে চন্দননগরও ছিল পরিচিত নাম। ফ্রান্সের ৩০০ বছরের পুরনো উপনিবেশ। স্বাভাবিক নিয়মেই চেনা নাম বেছে নিয়েছিলেন অ্যার্জে। তা ছাড়া ক্যাপ্টেনের বলা শব্দের সঙ্গে মিলের জন্যও চন্দননগর অগ্রাধিকার পায়। হেরে যায় কলকাতা।

চন্দননগরের সঙ্গে আরও একটা ছোট্ট সুতো জুড়ে দেওয়া যেতে পারে টিনটিনের গায়ে। বেলজিয়ামের যে পাক্ষিক পত্রিকায় টিনটিন আত্মপ্রকাশ করেছিল তার নাম ছিল ‘লে পেতিত ভিঞ্জটাইম’। ঘটনাচক্রে চন্দননগরেও একটি সমকালীন পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হত। যার নাম ‘লে পেতিত বেঙ্গলি’। অদ্ভুত সমাপতন!

তবে, বেলজিয়ান সাংবাদিকের বঙ্গযোগের সমাপতন এখানেই থামে না। ‘বেলজিয়ান’ শব্দটাকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিলে সেটা ‘বেঙ্গলি’ হয়ে যায়, খেয়াল করেছেন কি! বাঙালিদের সঙ্গে বোধ হয় তাই এমন মধুর যোগ টিনটিনের।

সোমবার, ১০ জানুয়ারি ছিল টিনটিনের ‘জন্মদিন’। ১৯২৯ সালে এই দিনই প্রথম কমিকস হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল টিনটিন। সেই হিসেবে ছটফটে রিপোর্টারের এ বছর ৯৩ পেরিয়ে ৯৪-এ পড়ার কথা। সেই ৯৪তম জন্মদিনেই টিনটিনের বঙ্গযোগ প্রকাশ্যে এল ‘পেপারক্লিপ’ নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের দৌলতে। পর পর বেশ কয়েকটি টুইটে টিনটিনের কমিকসে বাংলার উল্লেখ কী ভাবে এল তা বেশ স্পষ্ট করে বলেছে তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Tintin The Adventures of Tintin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy