স্ত্রীয়ের সঙ্গে কেমপা। ছবি সৌজন্যে ফেসবুক
তখন তিনি তৃতীয় শ্রেণি। তখন তিনি নয়। চারপাশে আঁধার নেমে এসেছিল ওই বয়সেই। জানা গিয়েছিল, এই অন্ধকার কোনও দিন ঘুচবে না। তবে হাল ছাড়েননি কেমপা হোন্নাইয়া। স্বপ্নপূরণে অবিচল থেকেছেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়— একটার পর একটা গণ্ডি পেরিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে। তার পর সফল ইউপিএসসি-তে। বৃহস্পতিবার থেকে কেমপা কাজ শুরু করলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসেবে। রাজ্যের প্রথম একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন আইএএস অফিসার তিনি।
কথায় বলে, প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে থাকেন একজন মহিলা। কেমপার জীবনও ব্যতিক্রম নয়, জানালেন নিজেই। অচিন্ত্যা নামে সেই মহিলা কেমপার স্ত্রী। কেমপা বলছেন, ‘‘ভাল কিছু করতে গেলে কাউকে না কাউকে তোমার পাশে অবশ্যই পাবে। সেটাই ঈশ্বরের আশীর্বাদ।’’
কেমপার বাড়ি কর্নাটকের টুমকুর জেলায়। ছোটবেলায় ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা পড়তে অসুবিধা হত। চিকিৎসা করিয়ে লাভ হয়নি। ন’বছর বয়সে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, দৃষ্টি ফিরবে না। বাড়ির লোক তাঁকে ভর্তি করেন মহীশূরের দৃষ্টিহীনদের স্কুলে। বরাবর মেধাবী ছিলেন। কন্নড় সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন কেমপা। কেমপা যখন স্নাতকোত্তরের ছাত্র, তখনই বাসস্ট্যান্ডে অচিন্ত্যার সঙ্গে প্রথম দেখা তাঁর। অচিন্ত্যা বুঝতেই পারেননি, কেমপা দৃষ্টিহীন। যখন জানতে পারেন, তখনই সিদ্ধান্ত নেন পাশে থাকার। ২০০৯ সালে কলেজে পড়াতে শুরু করেছিলেন কেমপা। ওই বছরই বিয়ে করেন তাঁরা।
জীবন সম্পর্কে কেমপার ভাবনাই বদলে দেন অচিন্ত্যা। স্ত্রীর উৎসাহে আইএএস হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। তারপর জেদ চেপে যায়। পড়াশোনায় নিরন্তর সহযোগিতা করেছেন স্ত্রী। ইউপিএসসি পরীক্ষার সময় অচিন্ত্যা দিনে দশ ঘন্টা করে বই পড়ে শোনাতেন তাঁকে। অডিয়ো নোট তৈরি করে দিতেন। একাধিকবার পরীক্ষা দিয়েছেন। শেষে ইউপিএসসি পাশ করেন ২০১৬ সালে। কেমপা পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের ২০১৭ সালের আইএএস।
‘প্রবেশনার’ হিসেবে তিনি কাজ করেছেন হুগলিতে। তারপর রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ এবং সমাজকল্যাণ দফতরের ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর পশ্চিম মেদিনীপুরে বদলি হয়েছে। এ দিন কেমপা বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে এসে খুব ভাল লাগছে। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।’’
চোখে রোদচশমা থাকে। তাই চট করে দেখে বোঝার উপায় নেই যে কেমপা দৃষ্টিহীন। এ দিন যখন তিনি নিজের দফতরে আসেন, তখন কর্মীদের কয়েকজনও বুঝতে পারেননি। তবে কেমপা যখন মেদিনীপুরে কালেক্টরেটের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠছিলেন, বুঝতে পেরে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি পরে বলছিলেন, ‘‘অদম্য সাহস আর জেদ না থাকলে উনি জীবনের সিঁড়ি বেয়ে এই জায়গায় পৌঁছতে পারতেন না।’’ প্রতিকূলতা কাটিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছনো এই আইএএস এখন আমলা-মহলে সকলের ‘চোখের মণি’। জানা যাচ্ছে, ভাবী আইএএসদের শোনানো হয় কেমপার লড়াইয়ের কথা। তাঁর স্বপ্নপূরণের কথা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলও বলেন, ‘‘অধ্যবসায় ও জেদ থাকলে কী করা যায়, উনি তার দৃষ্টান্ত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy