Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

৩ ঘণ্টা গেট বন্ধ করে তল্লাশি তিস্তায়

শুক্রবার সকাল থেকেই সেবকে ছিলেন রাজস্থান সরকারের বুঁদি জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক কর্তার সিংহ, দার্জিলিং জেলা পুলিশের অফিসারেরা।

খোঁজ: কুয়াশা ঢাকা তিস্তায় চলছে তল্লাশি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

খোঁজ: কুয়াশা ঢাকা তিস্তায় চলছে তল্লাশি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজস্ব সংবাদদাতা 
সেবক শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৯ ০৬:৪৭
Share: Save:

ভরা বর্ষার খরস্রোতা তিস্তা। তার জল সামাল দিয়ে এনএইচপিসি-কে কিছুক্ষণের জন্য কালীঝোরা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের লকগেট বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছিল রাজ্য। বলা হয়েছিল, না হলে তল্লাশি অভিযান চালানো সম্ভব নয়। সেই অনুরোধ মেনে শুক্রবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটে অবধি বন্ধ রাখা হল লকগেট। তল্লাশি পর্বে এই প্রথম এতক্ষণের জন্য লকগেট বন্ধ রাখা হল। ওই সময়ে নৌসেনার দুই ডুবুরির তত্ত্বাবধানে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের প্রশিক্ষিত দুই ডুবরি তিস্তায় তল্লাশি চালান। কখনও র‌্যাফ্টিং করে কিছু দূর গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নদীতে নামলেন তাঁরা। কখনও জলের নীচে লোহার পাইপ বা শেকল নামিয়ে খোঁজ চলল গাড়িটির। এরই মধ্যে বিকেলের দিকে জোর বৃষ্টি নামে। কুয়াশায় ছেয়ে যায় তিস্তা। ফলে এক সময়ে ‘অপারেশন’ শেষ করেন ডুবুরিরা। জানানো হয়, আজ, শনিবার জল বন্ধ করা গেলে ফের তিস্তায় খোঁজ হবে।

শুক্রবার সকাল থেকেই সেবকে ছিলেন রাজস্থান সরকারের বুঁদি জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক কর্তার সিংহ, দার্জিলিং জেলা পুলিশের অফিসারেরা। তাঁরা দফায় দফায় নৌসেনার অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন। এনএইচপিসি-র অফিসারেরা নিয়মিত ম্যানপ্যাকের মাধ্যমে করোনেশন সেতু থেকে কালীঝোরা লকগেটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু বিকেল গড়াতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়। এ দিন শেষবারের মতো গজলডোবা, মেখলিগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকায় তিস্তায় কোনও দেহ দেখা গিয়েছে কি না, তাও খোঁজ করে দেখা হয়। কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারেনি। রাজস্থানের এডিএম বলেন, ‘‘এনডিআরএফ, নৌসেনা সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে কথা চলছে। দেখা যাক, কী হয়।’’

নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা এ দিন কিছুটা আশার আলো দেখলেও এখনও পুরোপুরি আশ্বস্ত নন। তাঁদের অভিযোগ, তিস্তায় বিভিন্ন জায়গায় দেহ ভেসে উঠলেও পুলিশ-প্রশাসন জানাতে দেরি করছে। তাই শনাক্ত করার জন্য নিজেদের উদ্যোগে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকছে না। উদ্ধারকাজের দলগুলির মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব আছে বলে দাবি তাঁদের।

সরকারি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তখন মুখ্যসচিব মলয় দে’কে দিল্লিতে কথা বলতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর ফলেই এ দিন বেলা দেড়টায় লকগেট বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তা করার পরে তিস্তার জল কমতে থাকে। নদীর দুইপাশে পাথর, বালিমাটি উঠে আসে। তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে জলে নামেন ডুবুরিরা। তবে তিস্তার গভীরতা নিয়ে কোনও সঠিক তথ্য না থাকায় সরকারি উদ্ধারকারী দলটি আগ বাড়িয়ে ঝুঁকি নিতে পারেনি।

এনএইচপিসি-র অফিসারেরা জানান, ১০ জুলাইয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। তার পর দিন জলাধার অনেকটাই খালি থাকায় গেট অল্পবিস্তর বন্ধ করা হয়। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বাঁধ কানায় কানায় ভর্তি। উপরে রম্ভি রয়েছে। সিকিমে আরও দু’টি জলাধার রয়েছে। বেশিক্ষণ কালীঝোরায় লকগেট বন্ধ রাখাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ দিন পরিস্থিতি বুঝে সময় বাড়ানো হয়েছে। নইলে জলের তোড়ে লকগেট ভেঙে বিপদ হতে পারে। এনএইচপিসি’র সিনিয়র ম্যানেজার লোকেধ গুপ্ত বলেন, ‘‘উচ্চ মহলের নির্দেশে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করা হচ্ছে।’’

গত সপ্তাহে করোনেশন সেতুর পাশেই রাজস্থানের তিন পর্যটক ও চালককে নিয়ে গাড়িটি প্রায় ৪৫০ মিটার নীচে তিস্তায় গিয়ে পড়ে। পরে একজনের দেহ গজলডোবায় মেলে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy