বীরভূমের সিউড়ির বাসিন্দা পিনাকী রায়চৌধুরী মেয়েকে বিশ্বভারতীতে ভর্তি করাতে গিয়ে দেখেন, সাধারণ শ্রেণির সংরক্ষণ কোটা তিনি পেতে পারেন। কিন্তু তার জন্য যে-শংসাপত্র দরকার, বীরভূম প্রশাসন তা দিতে রাজি নয়। পিনাকীবাবু বলেন, ‘‘কেন শংসাপত্র পাব না, তথ্য জানার অধিকার আইনে তা জানতে চেয়েছি। জবাব পাইনি।’’ প্রশাসনিক কর্তারা তাঁকে জানান, সরকার এমন কোনও শংসাপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি। তাই এ রাজ্যে তা দেওয়া যাবে না।
একই ভাবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন সল্টলেকের বাসিন্দা ঋতুপর্ণা রায়ের ছেলে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছ থেকে শংসাপত্র না-মেলায় সাধারণ শ্রেণির ১০% সংরক্ষণের সুযোগ নিতে পারেননি তিনিও।
আর্থিক ভাবে দুর্বল সাধারণ শ্রেণির জন্য ১০% সংরক্ষণের ঘোষণা করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে তা মানেননি। ফলে এখানকার সাধারণ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী বা চাকরিপ্রার্থীরা রাজ্যের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা চাকরিতে সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। সমস্যা এখানেই শেষ হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাধারণ শ্রেণির ১০% কোটা চালু করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে এ রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাঙালি প্রার্থীদের কেউ সুযোগই পাচ্ছেন না।
কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা বা চাকরিতে সাধারণ শ্রেণির কোটার সুবিধা পেতে হলে নির্দিষ্ট বয়ানে মহকুমাশাসক বা তদূর্ধ্ব অফিসারদের শংসাপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। তাতে সরকারি সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে বলতে হবে, আবেদনকারীর পরিবারের বার্ষিক আয় আট লক্ষ টাকার কম, পরিবারের পাঁচ একরের বেশি জমি নেই, শহরে ফ্ল্যাটের আয়তন ১০০০ বর্গফুটের কম ইত্যাদি। কিন্তু রাজ্যে এই শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না। অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, বিভিন্ন জেলাশাসকের দফতর, কলকাতা পুরসভা এবং দুই ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে অজস্র আবেদন জমা পড়লেও কাউকে এই বিষয়ে শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না।
রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বিষয়ে খোঁজ নেব। তার আগে কিছু বলছি না।’’ মন্ত্রী সাবধানি হলেও ওই দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, নবান্নের শীর্ষ স্তর থেকে সাধারণ শ্রেণির জন্য মোদীর দেওয়া কোটা মানা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই জন্য এই বিষয়ে কোনও শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না। পড়ুয়া বা চাকরিপ্রার্থীরা ঠিক কী ধরনের অসুবিধায় পড়ছেন? অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের একাংশ জানাচ্ছে, এ রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে এখানকার বাসিন্দাদের কেউ সাধারণ শ্রেণির সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে সেই কোটায় ভিন্ রাজ্যের পড়ুয়ারা ভর্তি হচ্ছেন। যেমন, বিশ্বভারতীর মতো প্রতিষ্ঠানে এ বার সাধারণ শ্রেণির কোটার সব আসনে ভর্তি হবেন অন্যান্য রাজ্যের পড়ুয়ারা। একই ভাবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়-সহ কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার কোনও পড়ুয়া সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন না। শুধু উচ্চশিক্ষায় নয়, রেলের চাকরিতেও এই সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তাতেও রাজ্যের প্রার্থীরা সুযোগ নিতে পারছেন না।
অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যে সুবিধা না-দিলেও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে যাতে রাজ্যের পড়ুয়া বা চাকরিপ্রার্থীরা সংরক্ষণের সুযোগ পান, তার ব্যবস্থা করা হলে ভাল। কিন্তু মোদীর দেওয়া সংরক্ষণে নবান্ন আপত্তি করায় সেই সুযোগও দেওয়া যাচ্ছে না। নবান্নের নির্দেশ পেলেই তাঁরা জেলাগুলিকে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেবেন বলে জানান কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy