তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের কুবাক্য প্রয়োগের প্রবণতা নিয়ে। কিন্তু শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ শো ‘অ-জানাকথা’য় রাজ্য বিজেপির বর্তমান সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কৌশলে সেই ‘তির’ ঘুরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। দাবি করলেন, মমতা যে রকম ‘নিম্নরুচির শব্দ’ ব্যবহার করেন, দিলীপ ঘোষও না কি কখনও তেমনটা করেননি!
রাজনীতিতে কুবাক্য প্রয়োগের প্রবণতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে সুকান্ত প্রথমে নিশানা করেছিলেন পূর্বতন বাম জমানার প্রধান শাসকদলকে। প্রয়াত সিপিএম সাংসদ অনিল বসুর মতো ‘কয়েক জন’ নেতার কটুবাক্য ব্যবহারের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। দাবি করেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অতীতে কুকথা প্রয়োগের প্রবণতা বাংলার রাজনীতিতে ছিল না।
আরও পড়ুন:
সঙঅগে সঙ্গেই আসে দিলীপ-প্রসঙ্গ। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই দ্রুত কথা ঘোরানোর চেষ্টা করেন সুকান্ত। দাবি করেন, দিলীপের কুকথা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মমতাকে সেই প্রশ্ন করার সাহস বাংলা সংবাদমাধ্যমের নেই! তাঁর অভিযোগ, মমতা আইআইটি (ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি) এবং আইটিআই (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) গুলিয়ে ফেলে ভুল তথ্য দিলেও সংবাদমাধ্যম কিছু বলেনি (যদিও ‘তথ্যভ্রান্তি’র সঙ্গে ‘কুকথা’র সংযোগ নেই)।
গত বিধানসভা ভোটের প্রচারের সময় মমতার ‘হোঁদলকুতকুত’ এবং ‘কিম্ভূত কিমাকার’ মন্তব্যের প্রসঙ্গও তোলেন সুকান্ত। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে নিশানা করেই মমতা ওই মন্তব্য করেছিলেন দাবি করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে এমন নিম্নরুচির শব্দ! বস্তির লোকেরাও এখন ব্যবহার করেন না।’’ দিলীপও কখনও এমনটা করেননি বলেই দাবি করেন সুকান্ত।
আরও পড়ুন:
তবে সুকান্ত তাঁর পূর্বসূরিকে দরাজ ‘শংসাপত্র’ দিলেও ইতিহাস এবং বলছে, দিলীপের বিরুদ্ধে কুবাক্য ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে ভূরি ভূরি। এমনকি, তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেছেন তিনি। নীলবাড়ির লড়াই-পর্বে নন্দীগ্রামে গিয়ে বাঁ পায়ে আঘাত লেগেছিল মমতার। সে সময় প্লাস্টার-করা (প্লাস্টার কাটার পরে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধা) বাঁ-পা হুইলচেয়ারের একটি পাদানির উপর রেখে মমতা বিভিন্ন জনসভায় বক্তৃতা করতেন। সেই সময়ে দিলীপ মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘পা তুলে সবাইকে দেখাচ্ছেন! শাড়ি পরে আছেন। একটা পা ঢাকা আর একটা খোলা। এই রকম করে শাড়ি পরতে আমি কাউকে কখনও দেখিনি। যদি পা-টা বার করেই রাখবেন, তবে শাড়ি কেন, বারমুডা পরতে পারেন। তা হলে পা পরিষ্কার দেখা যায়!’’
এক জন মহিলা রাজনীতিক সম্পর্কে দিলীপের সেই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কোনও মহিলা সম্পর্কে এমন কটূবাতক্য প্রয়োগ করা যায় কি না, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েও। কিন্তু অনড় দিলীপ সাফ বলেছিলেন, ‘‘আমি কিছু ভুল বলিনি। মানুষের কাছে গিয়ে শাড়ি সরিয়ে পা দেখানো কোনও ভদ্রতা নয়। তার চেয়ে বারমুডা পরা ভাল।’’ কয়েক মাস আগেও মমতা এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কুরুচিকর শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল দিলীপের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। দিলীপের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল।
বাংলার রাজনীতিতে বর্তমানে কুকথা প্রয়োগের ‘গড্ডলিকা প্রবাহে’ তিনি শামিল হতে চান না বলেও শুক্রবার দাবি করেছেন সুকান্ত। যদিও আনন্দবাজার অনলাইনে আলোচনাপর্বে মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে ‘মুর্খ’ শব্দটি প্রয়োগ করেছেন তিনি। তবে পরমুহূর্তেই সাফাই দিয়ে কলেজ শিক্ষক সুকান্ত বলেছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাকে এই শব্দটা ব্যবহার করতে হচ্ছে।’’