E-Paper

এক সময় ছিলেন বাম নেতাদের ঘনিষ্ঠ, শাসক তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রভাব বাড়ে আনিসুর-আলিফের

প্রায় তিন দশক আগে বিদেশের বাবা সিরাজুল ইসলাম এলাকায় একটি ছোট চালকল চালু করেন। রেশন দুর্নীতিতে আগেই গ্রেফতার হওয়া বাকিবুর রহমান সেই সময়ে মামা সিরাজুলের সঙ্গেই চালকলের ব্যবসায় যুক্ত হয়।

নিউ দিঘায় আনিসুরের (ইনসেটে) দাদা আলিফ নুর ওরফে মুকুল রহমানের বিলাসবহুল হোটেল।

নিউ দিঘায় আনিসুরের (ইনসেটে) দাদা আলিফ নুর ওরফে মুকুল রহমানের বিলাসবহুল হোটেল। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৩৭
Share
Save

এক সময়ে পরিচিত ছিল বাম নেতা-মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে। তার পরে জমানা বদলাল, তারাও যোগ দিল বর্তমান শাসক দলে। ঘনিষ্ঠতার পটবদল হল। শেখ শাহজাহান, বাকিবুর রহমানের পরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেফতার হওয়া আনিসুর রহমান বিদেশ এবং আলিফ নুর রহমান মুকুলের ক্ষেত্রেও একই তথ্য জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। একই সঙ্গে তাঁরা সকলের সঙ্গেই যোগ পেয়েছেন বর্তমানে জেলবন্দি তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরও। স্থানীয় রাজনৈতিক লোকজনেরও বক্তব্য, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে অন্যদের মতো আনিসুর, আলিফেরও উত্থান ছিল রকেটের গতিতে। যা সকলেরই চোখে পড়েছে।

প্রায় তিন দশক আগে বিদেশের বাবা সিরাজুল ইসলাম এলাকায় একটি ছোট চালকল চালু করেন। রেশন দুর্নীতিতে আগেই গ্রেফতার হওয়া বাকিবুর রহমান সেই সময়ে মামা সিরাজুলের সঙ্গেই চালকলের ব্যবসায় যুক্ত হয়। পরে আলাদা চালকল তৈরি করে বাকিবুর। সূত্রের খবর, তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী ফরওয়ার্ড ব্লকের (ফব) কলিমউদ্দিন শামসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাদের।

বিদেশ ও তার দাদা মুকুল এক সময়ে বাবার সেই চালকলই দেখাশোনা করত। রাজ্যে পালাবদলের পরেও তারা ফব ঘনিষ্ঠ ছিল বলেই দাবি। সূত্রের খবর, ২০১১ সালে ফব প্রার্থীকে জেতাতে ভূমিকা ছিল বিদেশের। ২০১৬ সালে তৃণমূলের প্রার্থী রহিমা মণ্ডলকে জেতাতে বাকিবুর ও বিদেশের দ্বারস্থ হন জ্যোতিপ্রিয়। বিদেশও দায়িত্ব পেয়ে তৃণমূলের হয়ে কাজ শুরু করে। রহিমা জেতেন। এর পরেই জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বিদেশের। অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয়ের ‘হাত’ মাথায় নিয়ে এলাকায় দুর্নীতির ‘নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলে বাকিবুর, বিদেশ, মুকুলরা। আরও দাবি, ভাল মানের ধান, গম বদল করে খারাপ মানের চাল, গম ও আটা ‘ডিস্ট্রিবিউটারের’ কাছে পৌঁছত ‘নেটওয়ার্ক অধীনস্থ’ চালকল থেকে।

সূত্রের খবর, কিছু দিনের মধ্যে বাকিবুর, মুকুলদের হাতে ব্যবসা ছেড়ে রাজনীতিতে মন দেন বিদেশ। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে কর্মাধ্যক্ষের পদ পান। শোনা যায়, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পরে তাঁকে দেগঙ্গা ১ ব্লকে দলের সভাপতি করা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতিও হন। এর মধ্যেই তিনি দিঘায় বিলাসবহুল হোটেল তৈরি করেন বলে দাবি। নিউ দিঘা হোটেল মালিক সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা তথা স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান অশোককুমার চন্দ অবশ্য জানান, ওই হোটেলের মালিক বিদেশের দাদা মুকুল। এ ছাড়াও বিদেশ বারাসতে হোটেল, দেগঙ্গায় মাদ্রাসা মিশন তৈরি করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২৩ সালের ১২ জুন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ দেগঙ্গায় পৌঁছলে, টাকি রোডে ফুল বিছিয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন বিদেশ। স্থানীয় স্তরে বিদেশের প্রতিপত্তি আরও বাড়তে শুরু করে। এলাকায় শক্তিশালী হতে শুরু করে বিদেশ গোষ্ঠী।

ঘটনাচক্রে, জ্যোতিপ্রিয়, বাকিবুরের গ্রেফতারের পরেও বিদেশের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক তৃণমূল নেতার কথায়, “বিদেশ ও আলিফ নুর দরাজ হাতে দলের কাজে টাকা দিতেন। ফলে প্রভাব প্রতিপত্তিও ছিল।” বিদেশ গ্রেফতার হওয়ার পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের অনেকেরই খোঁজ মেলেনি। অনেকে কথা বলতে চাননি। বিদেশের গ্রাম কাউকেপাড়াও ছিল কার্যত থমথমে। বাড়ি থেকে বেরোননি পরিবারের কেউই।

ফরওয়ার্ড ব্লকের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাকিবুর ও আনিসুরদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক ছিল বলে জানি না। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই ছিল, তা হলে তখনও তো ইডি-সিবিআই ছিল। তারা তখন ধরেনি। তৃণমূলে যাওয়ার পরে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বাকিবুর রহমান, শঙ্কর আঢ্য, শাহজাহানের পরে আনিসুর বেরোচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, এদের খুঁটি বাঁধা দলের আরও উপরমহলে।

তৃণমূলের বারাসত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ ফোন ধরেননি। দেগঙ্গার বিধায়ক রহিমা মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন, তা হলে যে-ই হোন, শাস্তি হবে। অভিযুক্তের সঙ্গে রেশন মামলার সম্পর্ক আছে কি না, তা তিনি আর তাঁর আইনজীবীই বলতে পারবেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Ration Distribution Case arrest TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।