Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Kalyani AIIMS

দূষণ ছাড়পত্র ছাড়া মোদী কল্যাণী এমসের উদ্বোধন করলে পরিষেবাও কি অবৈধ? প্রকারান্তরে মানল পর্ষদ

কল্যাণী এমস ভবনের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। এই দাবি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। রবিবার যার উদ্বোধন করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। ছাড়পত্র ছাড়াই কি উদ্বোধন হয়ে যাবে? উঠছে প্রশ্ন।

রাত পোহালেই মোদীর হাতে উদ্বোধন কল্যাণী এমসের।

রাত পোহালেই মোদীর হাতে উদ্বোধন কল্যাণী এমসের। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৩১
Share: Save:

রাত পোহালেই কল্যাণী এমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তার আগে নয়া বিতর্ক শুরু হয়েছে হাসপাতালের পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে। শুক্রবারই আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছিল, তাদের ছাড়পত্র ছাড়াই কী ভাবে উদ্বোধন হবে এমসের, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চলেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র অভিযোগ করলেন, কল্যাণীর এমস পরিবেশগত ছাড়পত্র পায়নি। এবং সেই ছাড়পত্র ছাড়াই এর উদ্বোধন হতে চলেছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কল্যাণী এমস আগামিদিনে মানুষকে যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেবে তার বৈধতা থাকবে কি? পর্ষদ কর্তাদের দাবি, এই কারণেই সাংবাদিক বৈঠক করে এই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন তাঁরা। নিজে মুখে না বললেও চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র প্রকারান্তরে সে কথা মেনেও নেন।

রবিবার দেশের আরও কয়েকটি এমসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর হাতে উদ্বোধন হওয়ার কথা কল্যাণী এমসের। তার আগের দিনই সাংবাদিক বৈঠক করে পর্ষদ। কল্যাণ বলেন, ‘‘যত দিন পর্যন্ত মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট তার দেওয়া পূর্ববর্তী নির্দেশ প্রত্যাহার করে নতুন নির্দেশ জারি করছে, তত দিন পর্যন্ত আমরা এমসকে কোনও পরিবেশগত ছাড়পত্র দিতে পারব না।’’ এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠছে যে, পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র ছাড়া যদি কল্যাণী এমস পরিষেবা দেওয়া শুরু করে তা হলে প্রদেয় পরিষেবার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও জবাব দেয়নি পর্ষদ। যদিও চেয়ারম্যান প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, সেই কারণেই সাংবাদিক বৈঠক করে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত।

সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র।

সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। — নিজস্ব চিত্র।

পর্ষদের দাবি, কল্যাণী এমস তার ভবন নির্মাণের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন করেছিল ‘ভায়োলেশন ক্যাটেগরি’-র আওতায়। নির্মাণকাজ শুরুর পর পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদন করা হলে তাকে বলা হয় ‘ভায়োলেশন ক্যাটেগরি’-তে আবেদন। নিয়ম হল, নির্মাণকাজ শুরুর আগেই ছাড়পত্রের আবেদন করা। পর্ষদের দাবি, তা করেনি এমস কর্তৃপক্ষ। সে কারণেই পরে ‘ভায়োলেশন ক্যাটেগরি’-তে আবেদন। এর পর এমসকে ১৫ কোটি ১০ লক্ষ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার অর্থ মকুবের দাবি জানান এমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট পর পর দু’টি নির্দেশ দেয়। যে নির্দেশে বলা হয়েছে, জরিমানা নিয়ে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। কল্যাণের দাবি, শীর্ষ আদালতের এই সংক্রান্ত জোড়া নির্দেশের জেরেই রাজ্যে অন্তত ২৫টি প্রকল্পে কোনও পরিবেশগত ছাড়পত্র দিতে পারছে না দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, তার মধ্যে রয়েছে কল্যাণী এমসও। রবিবার, যে প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তা হলে কি পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই উদ্বোধন হয়ে যাবে হাসপাতালের?

কল্যাণী এমসের ডিরেক্টর রামজি সিংহ বলেন, ‘‘পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছিলাম। কাজ শুরু করার এনওসি-ও দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা। তাই কাজ শুরু করি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আমাকে কিছু জানায়নি, সাংবাদিকদের বলেছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা জানাব। এটা তো জাতীয় ব্যাপার, তাই কাল (রবিবার) উদ্বোধন হবে। তার পর পরিষেবা দেওয়াও শুরু হবে।’’ ছাড়পত্র ছাড়া চিকিৎসা শুরু হবে কী করে? রামজির কথা, ‘‘রোগীদের তো ফেরাতে পারি না! পরবর্তী কালে এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা এলে তা মেনে কাজ করব।’’

যদিও রাজ্যের একমাত্র এমস ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়। এর আগে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাতে নাম জড়ায় রাজ্য বিজেপির একাধিক নেতার। তা নিয়ে তদন্তও চলছে। সেই বিতর্কের রেশ কাটার আগেই এ বার নতুন বিতর্ক শুরু হল কল্যাণী এমসকে ঘিরে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE