Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Amit Shah

Bengal Polls 2021: শোচনীয় হারের কারণ কী? জানতে চান অমিত, ফোন যাচ্ছে বিজেপি-র নিচুতলার কর্মীদের কাছে

একেবারে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করছেন অমিতের দফতরের কর্মীরা। পাশাপাশিই খোঁজ নিচ্ছেন ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়েও।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২১ ১১:২৭
Share: Save:

বাংলার ভোটে শোচনীয় হারের কারণ খুঁজতে ময়দানে নেমে পড়লেন অমিত শাহ। গত কয়েকদিন ধরে তাঁর রাজনৈতিক দফতর থেকে রাজ্যের নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের কাছে ফোন আসা শুরু হয়েছে। উদ্দেশ্য— হারের কারণ অনুসন্ধান। সেই কারণে বড়মাপের কোনও নেতা নয়, একেবারে তৃণমূল স্তরের কর্মীদের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করছেন অমিতের দফতরের কর্মীরা। পাশাপাশিই খোঁজ নিচ্ছেন ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়েও।

বাবুল সুপ্রিয়, স্বপন দাশগুপ্ত, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিংহদের মতো রাজ্য বিজেপি-র প্রথম সারির নেতারা কেন জিততে পারলেন না, সে বিষয়েও বিস্তারিতভাবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, নিচুতলার কর্মীদের মারফৎ শাহের দফতর জেনেছে, সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং বিজেপি-র রাজ্য তথা জেলার নেতাদের ‘অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিই’ ভরাডুবির কারণ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং ভোটে বিজেপি-র ‘হাওয়া’র উপর ভরসা করেই রাজ্যের নেতারা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিলেন। অন্তত নিচুতলার কর্মীদের তেমনই অভিমত। পাশাপাশিই, উঠে এসেছে আদি এবং নব্য দ্বন্দ্বের কথাও। বলা হচ্ছে, তৃণমূল থেকে যে সমস্ত সাংগঠনিক নেতাকে আনা হয়েছিল, তাঁদের সে ভাবে বড় কোনও সাংগঠনিক দায়িত্ব দিতে চাননি আদি নেতারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক দফতর থেকে আসা ফোন এবং তার কথোপকথন সম্পর্কে এক বিজেপি কর্মী বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘আমার কাছে অমিত শাহের দপ্তর থেকে ফোন এসেছিল। হারের সব কারণ খুলে বলতে বলা হয়েছিল। মিনিট ৪০ আমার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাতে বুথ স্তরের সংগঠন খারাপ হওয়াকেই মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরেছি। বলেছি, বুথ স্তরের সংগঠন ভাল না হওয়ায় ভোটের প্রচারে যেমন আমরা অনেকটা পিছিয়ে শুরু করেছিলাম, তেমনই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপও বিলি করতে পারিনি।’’ অমিতের দফতরের অনুসন্ধিৎসুদের ওই কর্মী আরও বলেছেন, ‘‘ভোটের দিন বুথ এজেন্ট দেওয়া থেকে শুরু করে গণনার দিনও এজেন্ট দেওয়া যায়নি। আমাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে তৃণমূল যে সব জায়গায় জেতার কথা নয়, সেখানেও জিতে গিয়েছে।’’

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে ১২১টি আসনে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও কেন শুধু ৭৭টি আসনে জয় এল, সেই প্রশ্নের জবাবের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছে অমিতের রাজনৈতিক দফতর। যে সমস্ত সম্ভাবনাময় আসনে ভাল ফলের আশা করেছিল বিজেপি, সেখানে কেন বিফল হতে হল, তা-ও জানতে চাওয়া হচ্ছে। দলের নিচুতলার কর্মীদের পাশাপাশি গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে আসা নেতাদেরও ফোন করা হচ্ছে অমিতের দফতর থেকে। কেন ভোটের ফল এমন শোচনীয় হল, তা খোলামনে বলতে বলা হয়েছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীদের ধরে রাখতে কী রণনীতি নেওয়া উচিত, তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা নেতাদের কাছে তার জবাবও চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। বেশ কিছু কর্মী অমিতের দফতরকে জানিয়েছেন, ভোটগণনার দিন শেষ পর্যন্ত গণনাকেন্দ্রে থাকতে দেওয়া হয়নি বিজেপি-র এজেন্টদের। বেশকিছু আসনের কথা উল্লেখ করে কর্মীরা জানিয়েছেন, ওই আসনে বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিজেপি কর্মীদের সেখান থেকে ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই দেখা যায় সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে বড় ব্যবধানে জিতে গিয়েছে তৃণমূল। ওই ঘটনা সাংগঠনিক ত্রুটির কারণেই ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে অমিতের দফতরকে। বিধানসভায় বিধায়কদের শপথগ্রহণ পর্ব এবং বিরোধী দলনেতার মনোনয়নের পরই বিজেপি সাংগঠনিক মেরামতির কাজে হাত দিতে চায়।

ঘটনাচক্রে, এ বারের ভোটে বিজেপি-র মূল সেনাপতি ছিলেন অমিতই। প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথরা এলেও সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ছিল অমিতের হাতেই। মূলত তাঁর নির্দেশেই বাংলায় বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতারা। এসেছিলেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিজেপি-র পদাধিকারীরাও। ভোট পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই নেতাদের হাতেই। সূত্রের খবর, নিচুতলার কর্মীদের কাছে সরসারি প্রশ্ন করা ছাড়াও বিভিন্ন বিধানসভার দায়িত্বে থাকা নেতাদেরও হারের কারণ খুঁজতে বলেছেন অমিত।

বিজেপি-র অভিযোগ, ভোটের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন শাসক তৃণমূলের হাতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক দফতর থেকে সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে কর্মীদের থেকে। কীভাবে কারা কেন হামলা চালাচ্ছে, তা-ও বিস্তারিত জানতে চাওয়া হচ্ছে। সমস্ত মতামতই যেমন জানানো হচ্ছে বিজেপি রাজ্যনেতৃত্বকে, তেমনই হারের সম্ভাব্য কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে অমিতের জন্যও। প্রাথমিক ভাবে নিচুতলার কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy