Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

‘কত বোমা পড়েছে, আর শূন্যে কত যে গুলি চলেছে, তা গোনা অসাধ্য কাজ’! বলছেন ভাঙড়ের ব্যবসায়ীরা

ভাঙড়ের স্থানীয় এক জনের বর্ণনায়, ‘‘ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল রাস্তা। বারুদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল বাড়ি থেকে। বারুদের দাগে ভরে গিয়েছিল রাস্তা। ছড়িয়ে ছিল গুলির খোল আর বোমার সুতলি।’’

bhangar.

পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজারে। ছবি: সামসুল হুদা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ০৭:০২
Share: Save:

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা। ভাঙড়-২ ব্লকের এক কিলোমিটার দূরে বিজয়গঞ্জ বাজারে তখন মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছে। প্রাণ বাঁচাতে বাজার সংলগ্ন খালে ঝাঁপ দিলেন কয়েক জন তৃণমূলকর্মী। খাল সাঁতরে আশ্রয় নিলেন ভাঙড় থানায়। খালপাড়ের ঝোপে লুকিয়ে পড়েছেন বেশ কিছু তৃণমূলকর্মী। অদূরে তখন আইএসএফ কর্মীদের হাতে মার খাচ্ছেন তাঁদের সহকর্মীরা। আইএসএফ কর্মীদের তাড়ায় পিছু হটছে তৃণমূল। একের পর এক বোমা পড়তে দেখে পাশেই ফলপট্টিতে ঢুকে পড়লেন কয়েক জন পুলিশকর্মী।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ভাঙড়ে এ দৃশ্য দেখা যায়নি, জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘কত বোমা যে পড়েছে, আর শূন্যে কত গুলি যে চলেছে, তা গোনা অসাধ্য কাজ। বুক ধুকপুক করছিল। কী ভাবে পালাব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। পুলিশ না এলে কত লাশ যে পড়ত, ভেবে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল এখানে বরাবরই শক্তিশালী। কিন্তু আইএসএফের যে এত লোক আছে, তা জানা ছিল না।’’ আর এক জন বললেন, ‘‘ভাঙড়ে ছোট-বড় অশান্তি মাঝেমধ্যেই হয়। এখন সব গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ দিন যা হয়েছে, তা আগে দেখিনি।’’ বিজয়গঞ্জের বাজারে এসেছিলেন কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা। বোমাবাজি শুরু হতেই দৌড়ে বিজয়গঞ্জ বাজার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন তাঁরা। তৃণমূলকর্মী সন্দেহ করে তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আটকে রাখেন আইএসএফ কর্মীরা। অশান্তি থামার পরে, দুই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী-সহ তাঁদের সবাইকে উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের দাবি, অশান্তির আশঙ্কা থাকলেও সকালে বিজয়গঞ্জ বাজারে মাত্র চার-পাঁচ জন পুলিশকর্মী ছিলেন। বড় বাহিনী মোতায়েন করা হলে এত বড় ঘটনা ঘটত না।

কাঁঠালিয়া এলাকার চিত্রটাও কম ভয়ঙ্কর ছিল না। স্থানীয় এক জনের বর্ণনায়, ‘‘ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল রাস্তা। বারুদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল বাড়ি থেকে। বারুদের দাগে ভরে গিয়েছিল রাস্তা। ছড়িয়ে ছিল গুলির খোল আর বোমার সুতলি।’’ এক দোকানদার বলেন, ‘‘অনেকগুলি গাড়িতে ভাঙচুর হয়েছে। তার পরে সে সব গাড়ি থেকে কাগজ ও অন্য জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ আর এক জনের কথায়, ‘‘অশান্তির আশঙ্কা ছিলই। তবে, এত লোক জড়ো হবে, তা ভাবতে পারিনি। সাহস করে দোকান খুলেছিলাম। গোলমাল শুরু হতেই বন্ধ করে দিই।’’

সংঘর্ষে কত জন আহত হয়েছে, তার হিসেব পুলিশও দিতে পারেনি। কাশীপুর থানার এক অফিসারের কথায়, ‘‘এক সময় মনে হচ্ছিল রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে। অনেক চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে।’’

সোমবার মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে ভাঙড়-১ বিডিও অফিসের কাছে আইএসএফের জেলা সভাপতি আব্দুল মালেক মোল্লাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিডিও অফিসে আটকে রাখা হয় আইএসএফ নেত্রী আসমা বিবিকে। চার ঘণ্টা পরে উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের বক্তব্য, ওই দুই ঘটনা থেকেই অশান্তির ইঙ্গিত মিলেছিল। পুলিশ বোধহয় বুঝতে পারেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Bhangar TMC ISF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy