রাজু বিস্তা, বিমল গুরুং এবং অজয় এডওয়ার্ড। ফাইল চিত্র।
জল্পনার অবসান। পঞ্চায়েত ভোটে অবশেষে পাহাড়ে শাসক-বিরোধী ‘মহাজোট’। বিজেপির উদ্যোগে এক ছাতার তলায় চলে এল বিমল গুরুঙের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি-সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল। মহাজোটের নাম দেওয়া হল ‘ইউনাইটেড (সংযুক্ত) গোর্খা মঞ্চ’। রবিবার দার্জিলিঙের জিমখানা ক্লাবে বৈঠকের পর জোটের ঘোষণা করা হয়। বৈঠক শেষে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘পাহাড়ে উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমাদের এই জোট। দুর্নীতি রুখতে আমরা এক হয়েছি।’’
দীর্ঘ ২ দশক পর পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সেই ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী দলগুলির মধ্যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছিল। শুক্রবার বিকেলে অজয় এবং বিমলের মধ্যে বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকে জোটের কথাও বলা হয়। ২ দলের তরফে জানানো হয়, পাহাড়ে ‘দুর্নীতিমুক্ত’, ‘উন্নয়নমুখী’ কাজের জন্য জোট গড়া হচ্ছে। জোটে আর কোনও দল আসবে কি না, তা অবশ্য তখন স্পষ্ট করেননি দুই নেতা। এর পর শনিবার সকাল থেকে রাজুর বাড়িতেও পাহাড়ের ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলির বৈঠক চলে। পরে রাতে সাংসদের বাড়িতে নৈশভোজে যোগ দেন অজয় এবং বিমল। মিনিট কুড়ি পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান অজয়। মোর্চা সূত্রে খবর, তার পরেও দীর্ঘ ক্ষণ রাজু এবং বিমলের মধ্যে বৈঠক চলে। বৈঠকের পর রাজু এবং বিমল ২ জনেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, রবিবার মহাজোটের ঘোষণা করা হতে পারে।
মহাজোটে বিজেপি, মোর্চা, হামরো ছাড়াও রয়েছে জিএনএলএফ, সিপিআরএম, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি নিজেদের পদ্ম প্রতীকে লড়লেও বাকিরা নিজেদের চিহ্নে লড়বে না। এ প্রসঙ্গে রাজু বলেন, ‘‘বিজেপি সর্বভারতীয় দল। তাই দলের প্রার্থীরা পদ্ম চিহ্নেই লড়াই করবেন। আর আমাদের জোটসঙ্গীদের সকলের একটাই চিহ্ন হবে। যা দেখে মানুষ বুঝতে পারবে। আমাদের লক্ষ্য পাহাড়ে রাস্তা, নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা। প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল চালু করা।’’ পাহাড়ের রাজনীতির বৃত্তে যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের একাংশের দাবি, আসলে আসন্ন লোকসভা ভোটকে নজরে রেখেই জোট গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল বিজেপি। পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে তার সলতে পাকানো। রাজু অবশ্য বলেন, ‘‘এই জোট শুধু পঞ্চায়েত ভোটের জন্যই। বাকিটা পরে দেখা যাবে।’’
মহাজোট প্রসঙ্গে বিমলও বলেন, ‘‘আমরা এখানে কেউই নিজের জন্য আসিনি। বিভিন্ন ভাবে পাহাড়ের সঙ্গে বঞ্চনা হয়েছে। পাহাড়ের ৪০ হাজার টেট পরীক্ষার্থী বঞ্চিত। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতেই আমরা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে এই মহাজোট গড়েছি। মূলত পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য এই জোট। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা পরের বিষয়।’’ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘এখানে আমরা কেউ নিজের স্বার্থ দেখছি না। কোনও এলাকায় জোটের যে দলের প্রতিনিধির বেশি গুরুত্ব রয়েছে, দলমত নির্বিশেষে সেই ব্যক্তিই ওই এলাকা থেকে নির্বাচনে লড়বেন। মহাজোটের এটাই লক্ষ্য।’’
এই মহাজোটকে কটাক্ষ করেছে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। তাদের বক্তব্য, জিএনএলএফ পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভেঙে ফেলেছিল। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ক্ষমতায় থাকার সময় এই নির্বাচন করাতে চায়নি। এখন তারাই নাকি জোট করেছে! মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘যে দল পঞ্চায়েত নির্বাচন লড়ার জন্য এতগুলো দলকে নিয়ে জোট করে, তাদের কী হাল, এখান থেকেই বোঝা যায়। তাদের জন্য করুণা হয়। এই জোট হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হল। নির্বাচনে হারার পর এরা সকলে এক সঙ্গে হারিয়ে যাবে পাহাড় থেকে।’’ দার্জিলিঙের তৃণমূল সভানেত্রী শান্তা ছেত্রী বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে জোট করে কোনও লাভ নেই। সারা বছর মানুষের কোনও কাজে লাগে না এই দলগুলো। নির্বাচন শেষ হলেই জোট ভেঙে যাবে। তাই এ সবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy