কাটোয়া-আহমেদপুর ট্রেন। কীর্ণাহার স্টেশনে। ছবি: কল্যাণ আচার্য
স্টেশনে স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল সে দিনও। ছোট লাইনের ট্রেনের শেষ যাত্রায় শামিল হতে এসেছিলেন হাজার-হাজার লোক।
পাঁচ বছর পরে এ দিনও তেমনই ভিড়। ফুল-মালা, মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে হাজির অনেকে। প্রথম যাত্রায় সঙ্গী হওয়ার হুড়োহুড়ির মাঝে ট্রেন ছুটতে শুরু করল কাটোয়া-আহমেদপুর ব্রডগেজ লাইনে।
গেজ পরিবর্তনের পরে বৃহস্পতিবারই ট্রেন চালু হল এই লাইনে। বড় লাইনের ট্রেনে চড়ার বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ করতে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন বাসিন্দারা। প্রতি স্টেশনে ট্রেন থেকে নামিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হল ট্রেনের চালক ও গার্ডকে। তাঁরা বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের আবদারে মিষ্টি খেতে গিয়ে ট্রেনের দেরি হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু কেউ তা শুনছেন না।’’
১৯১৭ সালে ট্রেন চলা শুরু হয় এই লাইনে। ন্যারোগেজে কাটোয়া থেকে আহমেদপুরের মধ্যে ১৩টি স্টেশন ছিল। ৫২ কিলোমিটার পথ পেরোতে সময় লাগত প্রায় চার ঘণ্টা। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ছোট
রেল বন্ধ করে ৩৫৭ কোটি ব্যয়ে ব্রডগেজ লাইন তৈরি শুরু করে পূর্ব রেল। স্টেশনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৪টি। আপাতত একটিই ট্রেন চলবে। সময় লাগবে প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা।
স্ত্রীকে নিয়ে এ দিন ছোট রেলের বদলে বড় ট্রেন চালু দেখতে এসেছিলেন আহমেদপুরের সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘মধ্য চল্লিশেও নিজেকে যেন পথের পাঁচালির অপু বলে মনে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ট্রেনে চড়ে কয়েকটি স্টেশন যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু টিকিট কাউন্টারে ভিড় দেখে আর সেই চেষ্টা করেননি। তবে ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলেছেন। কেতুগ্রামের নিরোলের প্রভাত রায়, কাটোয়ার জয়ন্ত আচার্যেরা বলেন, ‘‘কবে থেকে এই ট্রেনের আশায় ছিলাম। অনেক সমস্যা মিটল।’’
এমন দিনেও অবশ্য সেই দুলকি চালে চলা ছোট রেলের জন্য মন ভার অনেকের। তাঁদের আক্ষেপ, বড় লাইন চালুর সঙ্গেই মুছে গেল বহু স্মৃতি জড়িয়ে থাকা সেই ট্রেন। আদতে কীর্ণাহারের বাসিন্দা, কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকা সমরজিৎ চট্টোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন ট্রেনের ছবি দেখে বলেন, ‘‘ব়ড় লাইন চালু হওয়ায় খুশি। কিন্তু ছোট রেলের কথা খুব মনে পড়ছে।’’
কলকাতা থেকে লাভপুরের বাড়িতে ফেরার সময়ে কাটোয়া থেকে ওই ট্রেন ধরতেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বহু লেখাতেও ছোট রেলের কথা পাওয়া যায়। কীর্ণাহারের প্রবীণ বাসিন্দা বনমালি রায়ের কথায়, ‘‘ছোট ট্রেন ধরে আহমেদপুর থেকে কীর্ণাহারে আসতেন চিকিৎসক কৃষ্ণগোপাল চন্দ্র। তাঁর জন্য অপেক্ষা করতেন শত-শত গ্রামবাসী। এই সব কাহিনিগুলো যেন হারিয়ে গেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy