বাড়ি থেকে জল আনে পড়ুয়ারা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
স্কুলে বইয়ের ব্যাগের সামনে জলের বোতল গোঁজা। সেই ভারে নুইয়ে পড়ছে ছোট ছোট শরীরগুলো। অথচ, স্কুলের সামনেই নলকূপ। তা হলে কেন পড়ুয়ারা ঢাউস বোতল নিয়ে আসছে? এক শিক্ষিকা জানালেন, স্কুলের কলের জলে মিলেছে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক। সরকারি ভাবে পরীক্ষা করার পরে ওই জল খেতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে মিড ডে মিলের রান্না এখনও চলছে ওই কলের জলেই।
দেগঙ্গার সহায়-কুমারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৩ জন ছাত্রছাত্রীকে চলছে এ ভাবেই।
দেগঙ্গার বিভিন্ন প্রান্তে ভুগর্ভস্থ জলে রয়েছে আর্সেনিক। হাওড়ার বালি থেকে আসেন শিক্ষিকা দেবলীনা পাড়ুই। বললেন, ‘‘সারা দিনের জল ব্যাগে করে বাড়ি থেকে আনতে হয়।’’ স্কুলের পড়ুয়া শাহারিন পরভিন, আরিয়ান ইসলাম, নুর ফতেমারা জানায়, স্কুলের কলের জলে আর্সেনিকের বিষ রয়েছে বলে খেতে বারণ করা হয়েছে। তাই বোতলে করেই জল আনি।’’
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহানাজ খাতুন জানালেন, পাঁচ বছর আগেই আর্সেনিক ধরা পড়েছিল স্কুলের কলে। আর্সেনিক-মুক্ত জল পেতে বিডিও থেকে পঞ্চায়েত, জেলার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে আবেদন করা হয়। কিন্তু এখনও পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি।’’ অগত্যা শিশুদের বোতলে বাড়ি থেকে জল আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ওই জলেই মিড ডে মিলের রান্না চলছে। রান্নার কাজে যুক্ত রহিমা বিবি বলেন, ‘‘পাশের বাড়ি থেকে রান্নার জল মেলে না। তাই বাধ্য হয়ে ওই জলেই চলছে রান্না।’’
১৯৯৬ সালে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির দেওয়া রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, দেগঙ্গার প্রতিটি পঞ্চায়েতের প্রতিটি গ্রামের ভুগর্ভস্থ জলে রয়েছে আর্সেনিক। ইতিমধ্যে দেগঙ্গা ব্লকে আর্সেনিকের দূষণে মারাও গিয়েছেন বেশ কয়েকজন। আক্রান্তের সংখ্যা অনেক।
আক্রান্তদের পিঠে-বুকে দেখা গেল, ছোট-ছোট বৃষ্টির ফোঁটার মতো বাদামি রঙের ছোপ। কারও হাতে ও পায়ের তালুতে খসখসে গুটি। রাজ্যের আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক অশোক দাস এ দিন বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আর্সেনিক নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখনও গ্রাম বাংলায় ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার চলছে। আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় ভূপৃষ্ঠের জল শোধন করে পরিস্রুত পানীয় জলের পরিষেবা এখনও চালু করতে পারেনি রাজ্য সরকার।’’
বিডিও দেবব্রত সাউ অবশ্য দাবি করেছেন, বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই শিশুরা যাতে পরিস্রুত পানীয় জল পায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy