ভিনরাজ্যে আটকে আছেন বাবা-ছেলে
লকডাউন আলাদা করে দিয়েছে মা-ছেলেকে। মাসখানেক হতে চলল, একরত্তি ছেলেকে দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। ছেলের শোকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন তিনি। ছেলেও মাকে দেখতে না পেয়ে কেঁদে কেঁদে অস্থির।
লকডাউনের আগে বছর ছ’য়েকের অঙ্কিতের চিকিৎসার জন্য তাকে ভেলোরে নিয়ে যায় বাবা সমর বিশ্বাস। লকডাউনের কারণে সেখানেই আটকে পড়েছেন তাঁরা।
সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালির বিরিঞ্চিবাড়ি এলাকায় স্ত্রী, ছেলে ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকেন সমর বিশ্বাস। শ্যামলী ঝড়খালির একটি বেসরকারি স্কুলে কর্মরত। সেই স্কুলেই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে অঙ্কিত। ক’দিন আগে খেলতে গিয়ে মাথায় চোট পায় অঙ্কিত। কলকাতার চিকিৎসকরা তার মাথায় অস্ত্রোপচারের কথা বলেন। পেশায় আইনজীবী সমর ১২ মার্চ ছেলের চিকিৎসার জন্য ভেলোরে যান। বাড়িতে শাশুড়িকে দেখাশোনা করার জন্য থেকে যান সমরের স্ত্রী শ্যামলী জানা বিশ্বাস। তবে তাঁর সঙ্গে যান প্রতিবেশী চিত্তপ্রিয় জানা ও তাঁর স্ত্রী বুলা। চিকিৎসা করিয়ে ২৩ মার্চ ট্রেনে কলকাতায় ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেখানেই আটকে পড়েন।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী বলতেই ছুট হাসপাতালে
আপাতত সমর ছেলেকে নিয়ে সেখানকার একটি হোটেলে আছেন। অঙ্কিত মায়ের কাছে ফিরতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। অসুস্থও হয়ে পড়ছে সে। অসুস্থ ছেলেকে সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন সমর। এ জন্য তিনি মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছেন। এ দিকে, ছেলের কান্না সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শ্যামলী। এ নিয়েও সমস্যায় পড়েছেন সমর। একদিকে যেমন ছেলেকে সামলাতে পারছেন না, তেমনই দূর থেকে স্ত্রীকে সামলানোও তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে।
ভেলোরে আটকে পড়া সমর ও তাঁর দুই প্রতিবেশীর অভিযোগ, পকেটের টাকা শেষ হয়ে গিয়েছে। এটিএম কাউন্টার থেকেও তাঁরা টাকা তুলতে পারছেন না। ফলে ঠিকমতো খাবার জুটছে না। স্থানীয় কালেক্টর অফিস থেকে দু’দিন তাঁদের খাবার দেওয়া হলেও তা আপাতত বন্ধ। ঠিকমতো খেতে না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
কিন্তু ছেলে আর মায়ের কবে দেখা হবে? এ জন্য ইতিমধ্যেই সমর এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বিষয়টি জানিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। ১৫ এপ্রিল তাঁদের ফেরানোর একটা ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছিল সেখানকার কালেক্টর অফিস। কিন্তু তা হয়নি। এবং পরে তাঁদের ফেরার কোনও ব্যবস্থা তাদের পক্ষে করা সম্ভব কিনা তা-ও জানানো হয়নি সেখানকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সমর বলেন, ‘‘এমন হবে জানলে ছোট ছেলেকে নিয়ে এ ভাবে আসতাম না। ছেলে মায়ের কাছে ফিরবে বলে অনবরত কেঁদে চলেছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ও দিকে মা-ও ছেলের জন্য অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’’ তিনি আরও জানান, প্রশাসন যদি অনুমতি দেয়, তা হলে কোনও অ্যাম্বুলান্সে করে ছেলেকে নিয়ে গ্রামে ফিরতে পারেন তিনি।
বাসন্তীর প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা সমর বিশ্বাস তাঁর সমস্যার কথা আমাকে জানান। আমি সেখানকার কালেক্টর অফিস এবং আমাদের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমার কথামতো সেখানকার প্রশাসন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে, খোঁজখবর নেয় এবং খাবারও দেয় বলে সমরই জানিয়েছেন। দেখছি, কী ভাবে তাঁদের বাড়িতে ফেরানো যায়।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শ্যামলকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘এ রকম বেশ কিছু রোগী ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়েছেন বলে শুনেছি। আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কী ভাবে তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করা যায়, তা-ও দেখা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: করোনায় সুস্থ হয়ে আরও দুই বাড়িতে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy