মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ।—ফাইল চিত্র।
এমনটা যে হবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তা জানতেন না। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহও বুধবার রাত ন’টায় নির্দিষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবারের লকডাউনে উড়ান বা ট্রেন চালানোর অনুমতি রাজ্য সরকার দিচ্ছে না। কিন্তু এ দিন কলকাতায় বিমান যে শুধু ওঠা-নামা করেছে, তা-ই নয়, সকাল থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে যে ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে পূর্ণমাত্রায় সরকারি বন্দোবস্তের প্রমাণ ছিল। যার অর্থ— রাজ্য সরকার বিমান চালানোর ছাড় দিয়েছে।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার তফাতে সিদ্ধান্ত বদল কেন হল, তা নিয়ে নবান্নে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও কার নির্দেশে এ দিন বিমান ওঠা-নামা করল, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মুখ্যসচিবের ভূমিকা। সূত্রের খবর, তাঁকে অন্ধকারে রেখে কেন এটা হল, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উষ্মা গোপন করেননি। সে কথা তিনি মুখ্যসচিবকেও সরাসরি জানিয়েছেন। বিষয়টি জানতে চেয়ে মুখ্যসচিবকে ফোন, এসএমএস এবং হোয়াটসঅ্যাপ করা হয়। জবাব মেলেনি।
তবে এ দিনই স্থির হয়েছে, দিল্লিতে বিমান চলাচল মন্ত্রকে চিঠি লিখে নবান্ন জানিয়ে দেবে, আপাতত সপ্তাহে দু’দিন করে লকডাউনের যে সিদ্ধান্ত রাজ্য নিয়েছে, তাকে মান্যতা দিয়ে ওই দিনগুলিতে যেন কলকাতায় কোনও বিমান ওঠা-নামা না করে।
এ দিন কলকাতায় ৮৪টি উড়ান ওঠা-নামা করেছে। শহরে আসা যাত্রীদের হলুদ ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব এমনকি, সরকারি ভলভো বাসও পেয়েছেন। সহায়তায় ছিল পুলিশও।
আরও পড়ুন: লকডাউন কড়া হাতে, সর্বত্রই সক্রিয় পুলিশ, রাজ্য জুড়ে যেন বন্ধের ছবি
প্রশ্ন উঠেছে, এটা কি প্রশাসনের অন্দরে বোঝাপড়ার কোনও বড় খামতি? নাকি, প্রশাসনিক শৃঙ্খলায় চরম শিথিলতার উদাহরণ? মুখ্যসচিব কি সব তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানাননি? নবান্নের একটি সূত্রের দাবি, বিমান চলাচল ও বিমানবন্দরের ব্যবস্থা নিয়ে মুখ্যসচিবের কাছেও নাকি ‘সঠিক তথ্য’ ছিল না। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের শীর্ষ আমলা হিসেবে ‘সঠিক খবর’ রাখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায়বদ্ধতা কার, নবান্নের অন্দরে গুঞ্জন তা নিয়েও। কারণ বুধবার রাতে কলকাতায় উড়ান পরিষেবা নিয়ে যখন নানা রকম পরস্পর বিরোধী কথা শোনা যাচ্ছে, তখন রাত ন’টায় মুখ্যসচিব লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, ‘‘কোন কোন পরিষেবাকে ছাড় (লকডাউনের আওতা থেকে) দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ স্পষ্ট। ট্রেন ও উড়ান পরিষেবা সেই ছাড়ের মধ্যে পড়ছে না।’’ ওই সময়ই মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, বিমান চলবে, এমন সম্ভাবনার কথা তাঁর জানা নেই।
যদিও প্রশাসনের একটি অংশের মতে, এ দিন সরকারের তরফে যা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাতে যাত্রীদের সুবিধেই হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং উড়ান সংস্থার পক্ষ থেকেও সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে।
যদিও তাতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে বোঝাপড়ার ফাঁকটি যে ভরাট হচ্ছে না, এতে অধিকাংশই একমত। সেখানেই প্রশ্ন উঠেছে, এক রাতের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত বদলানো হল, নাকি আগে থেকেই ভিতরে-ভিতরে এমন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল? অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে না জানানো সেই পরিকল্পনার অঙ্গ?
বুধবার বিকেলে প্রথমে রাজ্যের তরফে ফোন করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, রাজ্য চায় না কলকাতা থেকে লকডাউনের মধ্যে উড়ান চলুক। সে কথা কর্তৃপক্ষ উড়ান সংস্থাগুলিকে ই-মেল করে জানিয়ে দেন। বলা হয়, বিমানবন্দরের বাইরে কোনও পরিবহণ পাওয়া যাবে না। কিন্তু, বিমানবন্দর খোলা থাকবে। উড়ান সংস্থাগুলি পাল্টা জানায়, এত শেষ মুহূর্তে উড়ান সূচি বদল করা সম্ভব নয়। তারা উড়ান চালাবে। রাতে আবার দিল্লি থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরিবহণ পরিষেবা দিতে রাজ্য সম্মত হয়েছে।
বুধবার রাতে এরই জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যসচিব দাবি করেছিলেন, উড়ান পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। নবান্নের অন্দরমহলে তাই আরও একটি প্রশ্ন ঘুরছে। তা হল, মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব— দু’জনকেই অন্ধকারে রেখে অন্য কোনও কর্তা কি এত বড় সিদ্ধান্ত নিলেন? সেটাও কি সম্ভব?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy