লাইন ধরে এগিয়ে চলেছে পরিযায়ী শ্রমিকের দল। নিজস্ব চিত্র
হতে পারত অনেক কিছুই। অওরঙ্গাবাদের পুনরাবৃত্তি হওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু, হয়নি। এক কামরার পরিদর্শন ট্রেনের ইঞ্জিনের হলদেটে আলোয় ‘ট্র্যাক’-এর উপর নড়াচড়া করা কালো কালো বিন্দুগুলো দেখেই সন্দেহ হয়েছিল চালকের। চারপাশে ঘন কালো অন্ধকার। তার সঙ্গেই মিশে গিয়েছিল কালো কালো বিন্দুগুলো। ব্রেক চেপে ইনস্পেকশন গাড়ি থামিয়ে টানা তীব্র হর্ন বাজাতে শুরু করেন চালক। বিন্দুগুলো তত ক্ষণে মানুষের মাথা হয়ে দেখা দিয়েছে ব্রাহ্মণী সেতুর উপর। বাকিটা চালকের আর বুঝতে দেরি হয়নি।
পাকুড়ের দিক থেকে আসা পরিদর্শন ট্রেনের চালক সঙ্গে সঙ্গে ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করেন কন্ট্রোল রুমে। খবর যায় নলহাটি স্টেশনে। লাইন ধরে এগিয়ে চলা মানুষের লম্বা সারিকে ওই সেতুর কাছেই আটকে দেয় রেল পুলিশ। ট্রেনের তীব্র হর্ন আর ইঞ্জিনের আলো দেখে তত ক্ষণে সেই পায়ে চলা মানুষরাও থেমে গিয়েছেন।
প্রায় ৫১ জনের দল। সবাই পরিযায়ী শ্রমিক। ধান কাটার কাজ করেছেন বর্ধমানে। দু’জনের বাড়ি মালদহে। বাকিদের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের বরহরওার বিভিন্ন গ্রামে। দলে মেয়ে, পুরুষ, বাচ্চাকাচ্চা— সবই আছে। রেল পুলিশ গোটা দলকে শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ নিয়ে আসে নলহাটি স্টেশনে। খবর যায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। অভুক্ত, ক্লান্ত দলটাকে নিয়ে গিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে নলহাটি পুরসভা এবং ব্লক প্রশাসন। পুরপ্রধান রাজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা খাবার জলের ব্যবস্থা করে দিই। যতটা কথা বলে জানা গিয়েছে, ওরা কোনও গাড়িতে তারাপীঠ পর্যন্ত এসেছিলেন। তার পর লাইন ধরে হাঁটছিলেন।”
আরও পড়ুন: আটকে থাকা শ্রমিকদের ফেরানো এবং পাঠানোয় কী ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য, জানালেন স্বরাষ্ট্রসচিব
নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও জগদীশ চন্দ্র বারুই বলেন, ‘‘আমরা ওঁদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছি। বাসেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাঁদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।” ওই ৫১ জনের দলের একজন জোসেফ টুডু। তিনি বলেন, ‘‘আমি ছিলাম দলের পিছনের দিকে। প্রথমে বুঝতে পারিনি উল্টো দিক থেকে ট্রেন আসছে। দলের বেশির ভাগই তখন ব্রিজের উপর। নামার জায়গা ছিল না।” জোসেফ আবছা শুনেছেন অওরঙ্গাবাদের ঘটনা। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি তো ফিরতেই হবে। না হলে তো অভুক্ত থাকতে হবে।” গোটা দল এখন প্রহর গুনছে কখন সরকার বাস দেবে, বাড়ি ফিরবেন সবাই।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনার শিকার বেড়ে ৯৯, শেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy