Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

ছত্তীসগঢ় থেকে হেঁটে পাঁচ দিনে শহরে

সোমবার রাতে দক্ষিণেশ্বরের নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্পের ভিতরে ঠাঁই পেয়েছিলেন ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর থেকে হেঁটে চলে আসা ওই সাত জন শ্রমিক।

পাশে: দীর্ঘ পথ হাঁটার পরে মিলল খাবার। নিজস্ব চিত্র

পাশে: দীর্ঘ পথ হাঁটার পরে মিলল খাবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৪৮
Share: Save:

ভাত আর ডিমের ঝোল দেখে কেঁদেই ফেললেন বছর তিরিশের যুবক। সঙ্গী ছ’জনেরও একই অবস্থা। কোনও মতে চোখের জল মুছে চেটেপুটে ওই খাবার শেষ করে তাঁরা বললেন, ‘‘কত দিন পরে একটু ভাত খেলাম!’’

সোমবার রাতে দক্ষিণেশ্বরের নির্মীয়মাণ মেট্রো প্রকল্পের ভিতরে ঠাঁই পেয়েছিলেন ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর থেকে হেঁটে চলে আসা ওই সাত জন শ্রমিক। টানা পাঁচ দিন ধরে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটে ওঁদের কারও জুতো ছিঁড়ে গিয়েছে। কারও আবার পায়ে ফোস্কা পড়েছে। ক্লান্ত শরীরে মেট্রো প্রকল্পের ভিতরে ঠাঁই পেলেও সফিকুল রহমান, রমজান আলি, মহম্মদ নিগার-সহ দলের সকলেই চাইছিলেন উত্তর দিনাজপুরে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে। কিন্তু কামারহাটির স্থানীয় প্রশাসন তাতে সম্মতি দেয়নি।

পুর চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেছিলেন, ‘‘ওই শ্রমিকদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পরে অবশ্য জানা যায়, সাত জনকেই পাঠানো হয়েছে বেলঘরিয়ার রথতলার কোয়রান্টিন কেন্দ্রে।

আরও পড়ুন: স্মৃতিতে মন্বন্তর, করোনার ত্রাণে দান বৃদ্ধ-বৃদ্ধার

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার রাতে দক্ষিণেশ্বর আইল্যান্ডের কাছে ওই সাত জন রাজমিস্ত্রিকে পিঠে, মাথায় ব্যাগপত্তর নিয়ে হাঁটতে দেখেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাঁরা ওই শ্রমিকদের থেকে সব শুনে তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। এর পরে মেট্রো প্রকল্পে ঠাঁই মেলে সফিকুলদের। অন্য দিকে, ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে খবর পৌঁছয় পুলিশ ও বরাহনগর পুর কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানকার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দিলীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘জায়গাটি কামারহাটি পুরসভার অধীনে। তাই খবর পেয়ে পুলিশ ও কামারহাটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রাতে পুলিশ গিয়ে ওঁদের খাবারের ব্যবস্থাও করে।’’

সফিকুল জানান, তাঁদের দলের তিন জন রায়গঞ্জের, দু’জন কালিয়াগঞ্জের এবং বাকি দু’জন বিহারের বারসোইয়ের বাসিন্দা। লকডাউনের মাত্র ১৫ দিন আগে তাঁরা রায়পুরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা হতেই তাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সফিকুল বলেন, ‘‘ঠিকাদারের ফোন নম্বরও ছিল না। লকডাউন হতেই তিনি পালিয়ে যান। আমাদের কাছে যা টাকাপয়সা ছিল, সব শেষ হয়ে যায়। খেতেও পাচ্ছিলাম না।’’

আরও পড়ুন: দিনভর দৌড়ে বেড়িয়েও শূন্য অনলাইন অর্ডারের ঝুলি

শেষে গত বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল ভোরে ওই সাত জন পায়ে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। রমজান আলি জানান, তাঁরা ছত্তীসগঢ় থেকে বেরিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে ওড়িশা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকেন। দিনের অধিকাংশ সময়ে তাঁরা রাস্তার ধারেই বসে কাটাতেন। সন্ধ্যা নামলেই শুরু করতেন হাঁটা। সারা রাত ধরে হাঁটতেন। চলার পথে বিস্কুট পাওয়া গেলে তা ভাগ করে খেতেন। রমজান বলেন, ‘‘রাস্তায় বেশ কয়েক জায়গায় পুলিশ আটকেছিল। সব জানানোর পরে কপালে যন্ত্র ঠেকিয়ে পরীক্ষা করে ছেড়ে দেয়।’’

কিন্তু দক্ষিণেশ্বরে আসার পরে ওই রাজমিস্ত্রিদের আটকে দিয়েছে প্রশাসন। নিয়মমাফিক পরীক্ষার পরে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বেলঘরিয়ার রথতলার কোয়রান্টিন কেন্দ্রে। তার আগে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের দেওয়া খিচুড়ি খাওয়ার পরে হাসিমুখে রমজানরা বলেন, ‘‘দুটো ভাত খেয়ে পেটটা ভরল। কিন্তু বাড়ি যেতে পারলে মনটাও ভরবে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Migrant Labourer Dakhineshwar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE