প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট)-য় ক’জন বসেছিলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর বিকাশ ভবনে তার একটা অসম্পূর্ণ হিসেব দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও প্রাথমিক টেটে ক’জন প্রশিক্ষিত এবং ক’জন প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন, সোমবার আদালতে তা জানাতেই পারল না রাজ্য সরকার।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে প্রশিক্ষিত আর প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের মধ্যে অগ্রাধিকারের প্রশ্নটাই ছিল অন্যতম মূল সমস্যা। প্রশিক্ষিতদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে ১৪ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। টেটের ফল ঘোষণার উপর থেকে সব ধরনের স্থগিতাদেশও তুলে নেওয়া হয়। রাজ্য সরকারও তড়িঘড়ি টেটের ফল ঘোষণা করে। কিন্তু উত্তীর্ণদের মধ্যে ক’জন প্রশিক্ষিত আর ক’জন প্রশিক্ষণহীন, সরকার সে-দিন তা না-জানানোয় আবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তারই মধ্যে প্রাথমিক টেট নিয়ে দায়ের হওয়া অন্য একটি মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনান ১৫ তারিখে সরকারকে নির্দেশ দেন, টেট-উত্তীর্ণদের ক’জন প্রশিক্ষিত এবং ক’জন প্রশিক্ষণহীন, ১৯ তারিখে অর্থাৎ সোমবার তা জানাতে হবে। উচ্চ আদালতের আরও নির্দেশ ছিল, ক’জন প্রশিক্ষিত ও ক’জন সাধারণ প্রার্থী ওই টেটে বসেছিলেন, রাজ্যকে তা-ও জানাতে হবে হাইকোর্টে।
১৫ তারিখেই বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত ১১ অক্টোবর প্রাথমিকে টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেটে পরীক্ষার্থী ছিলেন ২০ লক্ষ এক হাজার ৩০১ জন। তাঁদের মধ্যে পাশ করেছেন এক লক্ষ ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রী। ২০১৫ সালের অগস্টে উচ্চ প্রাথমিকে (পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণি) শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়। প্রার্থী ছিলেন চার লক্ষ ৯২ হাজার। কিন্তু ক’জন পাশ করেছেন, শিক্ষামন্ত্রী সে-দিন তা জানাতে চাননি।
রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত এ দিন আদালতে একটি রিপোর্ট পেশ করে বলেন, ‘‘টেটে পরীক্ষার্থীর ওই পরিসংখ্যান তৈরির কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ এবং বিশাল। অল্প সময়ের মধ্যে পরিসংখ্যান তৈরি করা সম্ভব নয়। টেট-উত্তীর্ণদের ইন্টারভিউয়ের সময় প্রার্থীদের যাবতীয় নথি খুঁটিয়ে দেখা হবে। তখন জানা যাবে, ক’জন প্রশিক্ষিত এবং ক’জন প্রশিক্ষণহীন প্রার্থী রয়েছেন।’’
এই মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী সৌমেন দত্তের অভিযোগ, রাজ্য সরকার উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবেই ওই পরিসংখ্যান দেবে না। কারণ, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে প্রশিক্ষণহীনদেরই বেশি সুযোগ দিতে চায় তারা। সৌমেনবাবু জানান, প্রাথমিকের টেটে কী ভাবে কারচুপি হয়েছে, কী ভাবে সত্য গোপন করা হয়েছে— সেই ব্যাপারে তিনি একটি অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করতে চান।
তা শুনে বিচারপতি কারনান নির্দেশ দেন, ‘‘ওই হলফনামা আগামী বৃহস্পতিবার পেশ করতে হবে। তবে এই মামলায় কোনও অন্তর্বর্তী রায় আমি দেব না।’’ মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বৃহস্পতিবারেই।
টেট নিয়ে দায়ের হওয়া এই পৃথক মামলার আসল বক্তব্য কী?
আবেদনকারীদের আইনজীবী সৌমেনবাবু জানান, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই-র নির্দেশিকা অনুযায়ী টেটে শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়টি থাকতেই হবে। তা সত্ত্বেও গত ১১ অক্টোবর প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে-টেট নেওয়া হয়, তাতে শিক্ষাবিজ্ঞান বিষয়টি রাখা হয়নি। এনসিটিই-র অন্য নির্দেশিকা হল, যাঁরা টেটে বসবেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাঁদের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। কিন্তু গত বছর নেওয়া টেটে এমন অনেক প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর পাননি। নির্দেশিকার এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ উপেক্ষা করা হয়েছে ওই পরীক্ষায়। তারই সুরাহা চেয়ে মামলা করেছেন কিছু প্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy