সাক্ষাৎ হবে দু’জনের? —ফাইল চিত্র।
সমর্পণের কোনও প্রশ্নই নেই। রাজ্যপাল বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বিনা যুদ্ধে মাটি ছাড়ছেন না। রবিবার রাতে দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরলেও রাজভবনের বাইরে রাজ্যপালের সাক্ষাৎ চেয়ে ধর্নায় বসা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেননি তিনি। বরং সাক্ষাৎ নিয়ে পাল্টা প্রশ্নে চাপ তৈরি করে বলেছেন, আগে আইনশৃঙ্খলা ঠিক হোক তার পর সাক্ষাৎ করা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য রবিবার দুপুরেই তুলেছিল রাজভবন। নবান্নকে পাঠানো ওই চিঠিতে মূলত তিনটি প্রশ্ন করা হয়েছিল রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে। রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিনটি প্রশ্ন হল— এক, ১৪৪ ধারা কার্যকর রয়েছে এমন এলাকায় মঞ্চ বেঁধে ধর্নার অনুমতি কি আদৌ দিয়েছিল কলকাতা পুলিশ? দুই, যদি দেওয়া হয়ে থাকে তবে কে দিলেন এবং কোন আইন বলে? তিন, যদি অনুমতি ছাড়াই ধর্নামঞ্চ বাঁধা হয়ে থাকে এবং তিন দিন ধরে বিক্ষোভ জমায়েত চলতে থাকে তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এই সব প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব জবাব দিতেও বলেছিল রাজভবন।
এর পাল্টা জবাব অবশ্য অভিষেকও তাঁর ধর্না মঞ্চ থেকে দিয়েছিলেন। অভিষেক প্রশ্ন করেন, ‘‘রাজ্যপাল বলছেন, ১৪৪ ধারা রয়েছে যেখানে, সেখানে কী ভাবে ধর্না করে। কিন্তু বিজেপি সাত বার মিছিলের ক্ষেত্রে কেন এমন বলেননি?’’ গত দু’বছরের উদাহরণ দিয়ে রাজভবনের ওই তিন প্রশ্নের পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাত বার ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে কর্মসূচি করেছে বিজেপি। একাধিক বার বিজেপি বিধায়করা মিছিল করে রাজভবনে গিয়েছেন। রাজভবনের বাইরে ভিড় করে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। তখন রাজ্যপালের দায়িত্ব কোথায় ছিল?’’
রাজভবনের প্রশ্নকে যুক্তি দিয়ে কটাক্ষ করেই অভিষেক বলেন, ‘‘দলে দলে বিজেপি বিধায়কেরা পায়ে হেঁটে রাজভবনে এসেছিলেন। তখন রাজ্যপাল পুলিশকে চিঠি দেননি। অথচ কর্মসূচির সময় আলাদা অবস্থান। রাজ্যপালকে মনে রাখতে হবে তিনি বাংলার রাজ্যপাল। তাঁর বিজেপির প্রতি দায়বদ্ধ না থেকে বাংলার প্রতি দায়বদ্ধ হওয়া উচিত।’’
রাত ৮টার কিছু আগে এই মন্তব্য করেন অভিষেক। তার পর তাঁর ধর্না কর্মসূচি থেকে ধীরে ধীরে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কেরা চলে যান। অভিষেক থেকে যান রাজভবনের উত্তরে ফটকের কাছে বাঁধা ধর্না মঞ্চে। এর কিছু ক্ষণ পরেই রাজ্যপাল রাজভবনে প্রবেশ করেন দক্ষিণের ফটক দিয়ে। সাধারণত রাজ্যপালের যাওয়া আসার জন্য এই ফটকটিই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে সেখান ঢোকার আগে বিমানবন্দরে অভিষেকের ধর্না প্রসঙ্গে রাজ্যপালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি দুর্গতদের সঙ্গে ছিলাম। এক বার সাক্ষাৎ করেছি। দরকারে আবার সাক্ষাৎ করব। কিন্তু তার আগে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ঠিক হতে হবে।’’ অর্থাৎ না বলেও অভিষেকের ধর্নামঞ্চ এবং রাজভবনের কাছে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন নিয়ে নাম না করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন রাজ্যপাল। ফলে জারি রইল স্নায়ু যুদ্ধ।
রাজভবনের দক্ষিণ দিকের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলেন রাজ্যপাল। উত্তরের ফটকের কাছে রয়েছে অভিষেকের ধর্নামঞ্চ।
কলকাতায় নেমে রাজভবনের পথে রওনা হলেন রাজ্যপাল বোস। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি একবার দেখা করেছি। চাইলে আবার দেখা করব। কিন্তু তার আগে আইন শৃঙ্খলা ঠিক করতে হবে। তার পর সাক্ষাৎ।
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এবং রাজ্যপালের মধ্যে এই নয়া সংঘাতের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত হয়েছিল গত মঙ্গলবার রাতে। ১০০ দিনের কাজ করেও যাঁরা টাকা পাননি এবং কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা প্রকল্প থেকে যারা ‘বঞ্চিত’, কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাঁদের নিয়ে দিল্লিতে দু’দিনের কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন অভিষেকেরা। সংঘাতের ওই প্রেক্ষাপট যদি তৈরি করে দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ, তবে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছিল তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের জোর করে দিল্লির কৃষি ভবন থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া।
রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ তথা বাংলার শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবনের উত্তর ফটকের অনতিদূরে মঞ্চ বেঁধে ধর্না কর্মসূচি চলছে তাঁর। যা রবিবার চতুর্থ দিনে পড়ল। কিন্তু অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ধর্না চালিয়ে যাবেন। অভিষেকের সঙ্গে রয়েছেন দলের নেতারাও।
দিল্লি কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন, রাজঘাটে ধর্নার পর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করতে কৃষি ভবনে গিয়েছিলেন বাংলার শাসকদলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু অভিযোগ ওঠে যে, তাঁদের দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রাখার পর পিছনের দরজা দিয়ে মন্ত্রী ‘পালিয়ে’ গিয়েছেন। দেখা করেননি। রাত ৯টা নাগাদ কৃষি ভবনে অবস্থানরত তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে জোর করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে দিল্লি পুলিশ। শুরু হয় তুমুল ধস্তাধস্তি। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের নিয়ে যাওয়া হয় মুখার্জিনগর থানায়। প্রায় দু’ঘণ্টা পর রাত ১১টা নাগাদ ছেড়ে দেওয়া হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। এর পরেই অভিষেক জানান, কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্যপালের হাতেই ‘বঞ্চিত’দের তরফে স্মারকলিপি তুলে দিতে চান তাঁরা। ডাক দেন রাজভবন অভিযানের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy