শারদোৎসব শুরুর আগেই প্রশাসনে প্রস্তুতি শুরু পুজোর কার্নিভালের। ফাইল ছবি।
আরজি কর-কাণ্ডের জেরে রাজ্য জুড়ে যে আন্দোলনের পরিবেশ তাতে এ বারের দুর্গাপুজো উৎসবের চেহারা নেবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে রাজ্য সরকার বসে নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুলাই মাসেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ১৫ অক্টোবর কলকাতায় পালিত হবে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। আর তার জন্য সময় থাকতেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের পূর্ত দফতর। মঞ্চ তৈরি থেকে রেড রোড এলাকার বড় গাছের ডাল কাটা কিংবা রাস্তায় বালি ছড়ানো থেকে আলোর ব্যবস্থা করা— সবের জন্যই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হল। প্রতি বছর কার্নিভালের সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ বারেও একই পরিকল্পনা সরকারের। সে জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট পরিষেবার জন্যও দরপত্র চাওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষে। বহু ‘ভিভিআইপি’ সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলেও দরপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সবক’টি বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয়েছে, ৯ অক্টোবর অর্থাৎ ষষ্ঠীর মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে।
৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নির্যাতিতার ধর্ষণ ও মৃত্যু হয়। এর পর থেকে গোটা রাজ্যে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর এক মাস পূর্ণ হওয়ার রাতেও কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় পথে নামেন মানুষ। দু’মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে ৯ অক্টোবরেই পঞ্জিকা অনুসারে দেবী দুর্গার বোধন। কিন্তু সে ভাবে উৎসবের আবহ তৈরি হবে কি না তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে যে আন্দোলন তাতে বড় ভূমিকা নিয়েছে সমাজমাধ্যম। আর সেই সমাজমাধ্যমেই এমন প্রশ্ন উঠছে যে, এ বারের পুজোর রীতি মানা হলেও উৎসবের চেহারা দেওয়া কি ঠিক হবে? তা নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকলেও সম্প্রতি এই বিতর্ক উস্কে দিয়েছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি আহ্বান। গত ১২ সেপ্টেম্বর নবান্নে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারে মমতা বলেন, ‘‘এক মাস তো হয়ে গেল। আমি অনুরোধ করব, পুজোয় ফিরে আসুন, উৎসবে ফিরে আসুন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ‘আহ্বানের সুর’ থাকলেও অনেকেই এর মধ্যে আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেওয়ার রাজনীতি দেখেছেন। তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন রাজ্যের মানুষ উৎসবে মেতে উঠলে টানা চলতে থাকা জনগণের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে। অন্য একটি অংশ অবশ্য মনে করছেন, পুজো মানেই বিরাট অর্থনীতি। বিভিন্ন আর্থিক অবস্থার বহু মানুষ এই সময় বাড়তি রোজগারের সুযোগ পান। উৎসব মার খেলে সার্বিক ভাবে ক্ষতি হবে অর্থনীতির। এটা মাথায় রেখেই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
এ বছর দুর্গাপুজোর দশমী ১২ অক্টোবর। এর পরে একাদশী ও দ্বাদশী তিথিতেও কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা রাখা যাবে বলে জানানো হয় গত ২৩ জুলাই ৮৫ হাজার টাকা করে দুর্গার ভান্ডার ঘোষণার দিনেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আগামী ১৬ অক্টোবর লক্ষ্মী পুজো। তার আগের দিন ১৫ অক্টোবর কলকাতায় পুজো কার্নিভালের আয়োজন করা হবে। জেলাগুলিকেও বলা হচ্ছে লক্ষ্মী পুজোর আগে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল করে নিতে। ১২ তারিখ দশমী, তা হলে হাতে ১৩ ও ১৪ তারিখ সময় থাকবে। এই দিনগুলোতে ঠাকুর বিসর্জন হবে। আর শেষ বিসর্জন হবে ১৫ তারিখ। ১৬ তারিখ যে হেতু লক্ষ্মীপুজো তাই এর বেশি আর রাখা যাবে না।’’
মুখ্যমন্ত্রী দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিতেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। এ নিয়ে পূর্ত বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রথমত মুখ্যমন্ত্রী যখন এই ঘোষণা করেছিলেন তখন আরজি করের ঘটনা ঘটেনি। তার পরে আমরা দরপত্র চেয়েছি কারণ, সরকারি নিয়মে নির্দিষ্ট সময় দিতে হয় আবেদনের জন্য। সেই মতো নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। কার্নিভাল সরকারি কর্মসূচি তাই হোক বা না হোক প্রস্তুতি তো আগে থেকেই শুরু করতে হয়।’’ প্রসঙ্গত, পূর্ত দফতর ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য আলাদা দরপত্র চাওয়ার সঙ্গে এক সঙ্গে আরও অনেকগুলি কাজের জন্য প্রায় ৭০ লাখ টাকার কাজের জন্য দরপত্র চেয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্র অনলাইনে জমা দেওয়া যাবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৬ সালে রেড রোডে কার্নিভালের সূচনা করেন মমতা। সেই বছর থেকে আকারে ও জমকে প্রতি বছর আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে কার্নিভাল। কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো ২০২২ সালে ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। এর পরে ২০২৩ সালে জমক আরও বাড়ে। এ বারেও তেমনই পরিকল্পনা সরকারের। সেই কারণে, শুধু রেড রোড নয়, আশপাশের রাস্তাগুলির মেরামতের জন্যও দরপত্র চেয়েছে পূর্ত দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy