Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jal Jeevan Mission

দুই প্রকল্পে বন্ধ অর্থ, কিন্তু জলজীবন মিশনে টাকা পাঠাল কেন্দ্র, বিস্মিত রাজ্য প্রশাসন

কেন্দ্র একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারেও মুর্শিদাবাদে শমসেরগঞ্জের সভায় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন।

Water.

জলজীবন মিশনে পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ০৭:২৮
Share: Save:

তিনটিই গ্রামকল্যাণ প্রকল্প। অথচ হাজারো আলাপ-আলোচনা, তদ্বির-তদারকি সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা আর একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বরাদ্দের বন্ধ দরজা খুলছে না। অথচ জলজীবন মিশনে পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তিনটি গ্রামকেন্দ্রিক প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের দু’রকম অবস্থান কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরেই।

কেন্দ্র একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারেও মুর্শিদাবাদে শমসেরগঞ্জের সভায় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। অভিযোগ করেছেন, লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র টাকা দেবে না। এই অবস্থায় কেন্দ্র জলজীবন মিশনের বরাদ্দ পাঠিয়ে দেওয়ায় রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, আবাস ও একশো দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্র ওই দুই ক্ষেত্রের বরাদ্দ আটকেছে। প্রশাসনের খবর, আগে জলজীবনের বরাদ্দও আটকে দিয়েছিল দিল্লি। রাজ্য সরকার তদ্বির করে টাকা এনেছে।

সূত্রের খবর, জলজীবন মিশন খাতে গত অর্থবর্ষের (২০২২-২৩) প্রায় ৩১৬২ কোটি টাকা বঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। গত অগস্ট, ডিসেম্বর এবং এ বছরের মার্চে কেন্দ্র পাঠিয়েছে যথাক্রমে ৫৮০, ১৫৪৫ এবং ১০৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজ্য ও কেন্দ্রের বরাদ্দ ৫০-৫০। রাজ্যের ভাগের অর্থও বরাদ্দ হয়েছে বলে নবান্নের খবর।

রাজ্যের শাসক দলের প্রতিনিধিরা একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনার টাকা পেতে দিল্লিতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে বার বার দরবার করেছেন। দু’দফায় প্রতিবাদ অবস্থানও হয়েছে কলকাতার রাজপথে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই দুই প্রকল্পে টাকার দেখা নেই। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে আবাস এবং একশো দিনের কাজ প্রকল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় দল ফের এক বার বঙ্গে ঘুরে গিয়েছে। পঞ্চায়েত দফতরের খবর, সেই সফরের কোনও রিপোর্ট এখনও রাজ্যকে পাঠায়নি কেন্দ্র। নেই কোনও উচ্চবাচ্যও। তাই এই খাতে কবে টাকা মিলবে, সেই বিষয়ে কোনও ধারণাই নেই ওই দফতরের কর্তাদের।

আধিকারিকদের একাংশের ধারণা, জলজীবন মিশনকে তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেয় কেন্দ্র। ২০২৪ সালের মধ্যে গ্রামের সব ঘরে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে তারা। বরাদ্দের ঘাটতির কারণে কাজ থমকে যাক, তা চায় না কেন্দ্র। এক আধিকারিক বলেন, “২০১৯ সালের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে জলজীবন মিশনের উল্লেখ ছিল। ফলে কেন্দ্র যে এই প্রকল্পটিকে বেশি নজরে রেখেছে, সেটা বোঝা যায়। তা ছাড়া আবাস বা সড়ক যোজনা বিজেপি সরকারের অনেক আগে থেকেই চলছে।”

কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে জলজীবন মিশনের কাজ একশো শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। আটটি রাজ্যে তার অগ্রগতি ৭৫-৯৮%। অন্য আটটি রাজ্যে কাজ হয়েছে ৬০-৭২%। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ন’টি রাজ্যে ৩৩-৪৯% কাজ হয়েছে। আধিকারিক মহলের অনুমান, শেষের ১৭টি রাজ্যের গতি বাড়াতে পারলে ২০২৪ সালের আগে এর ‘সাফল্য’ তুলে ধরা সম্ভব। আবার ওই বছরেই ভোট।

এ রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে জানাচ্ছেন, এখানে জলজীবন মিশনের কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু হওয়ায় প্রথম দিকে তা তেমন গতিতে এগোতে পারেনি। তবে পরে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সরাসরি ওই প্রকল্পে নজরদারি শুরু করেন। ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১.৮৩ কোটি পরিবারে জলের সংযোগ দেওয়ার কথা রাজ্যের। কিন্তু এ-পর্যন্ত দেওয়া গিয়েছে ৬০.২৫ লক্ষ বাড়িতে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, চলতি বছরের মধ্যে এক কোটি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি বাড়িতে এই কাজ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০% টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। কাজের বরাত দেওয়াও চলছে জোর গতিতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jal Jeevan Mission West Bengal Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy