Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Digha Jagannath temple

যোগীর রাম মন্দিরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিঘার জগন্নাথ মন্দির শেষ করতে চান মমতা, বরাদ্দবৃদ্ধি ৪৩ কোটি

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেই অযোধ্যার রামমন্দিরের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম দফার কাজ শেষ হওয়ার কথা।

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৩ ১৪:৪৭
Share: Save:

অযোধ্যায় রাম মন্দির আর দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দরজা কি একই সময়ে খুলতে চলেছে? বৃহস্পতিবার বিধানসভায় রাজ্যের তরফে দেওয়া একটি তথ্যে মনে হচ্ছে এমন কাকতালীয় ঘটনা একেবারে অসম্ভব নয়। কারণ রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, দ্রুত গতিতে শেষ করা হচ্ছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির তৈরির কাজ। এ বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে সেটি খুলেও দেওয়া হবে সাধারণ মানুষের দর্শনের জন্য।

বিধানসভায় এ ব্যাপারে রাজ্যকে প্রশ্ন করেছিলেন ডেবরার বিধায়ক তথা প্রাক্তন আইপিএস এবং মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। তিনি গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যের নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিধানসভায় প্রশ্ন করে চলেছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে জানা গিয়েছে, দিঘার জগন্নাথ মন্দির তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই ৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েওছে রাজ্য সরকার। সব ঠিক থাকলে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যার রাম মন্দিরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোকসভা ভোটের আগেই জগন্নাথের মন্দিরেরও উদ্বোধন হবে দিঘায়।

২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগেই অযোধ্যার রাম মন্দিরের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। গত ২২ মে রাম মন্দিরের অছি পরিষদের চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছিলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রথম দফার কাজ শেষ হয়ে যাবে। কারণ, তাঁরা চাইছেন নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকেই রাম মন্দিরের দরজা সাধারণ মানুষের পুজো দেওয়ার জন্য খুলে দিতে। এই ঘোষণার পর রাজনীতির কারবারিরা বলেছিলেন, ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই তাস খেলতে চাইছে বিজেপি। কারণ, রাম মন্দিরের কাজ তখন পুরোপুরি শেষ হবে না। আরও দু’দফা কাজ বাকি থাকবে, যা শেষ হতে অন্তত দু’বছর সময় লাগার কথা। অন্য দিকে, বাংলার সরকার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের ঘোষণা করেছিল ২০২১ সালের বিধান সভা ভোটেরও তিন বছর আগে।

হুবহু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি করার সিদ্ধান্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। পরে অবশ্য নতুন জমি দেখে সমস্ত আয়োজন করে মন্দির তৈরির কাজ শুরু করতে সময় লেগে যায় আরও চার বছর। ২০২২ সালের মে মাসে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন নির্মাণ শুরু হয় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। ঘটনাচক্রে, সে দিনই অযোধ্যার রাম মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তারা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেই মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ করতে চায় ।

ঠিক এক বছর আড়াই মাস পর দিঘার মন্দির তৈরির কাজ অনেকখানি এগিয়েছে। গত ৪ এপ্রিল মমতা নির্মীয়মাণ মন্দির চত্বরটি পরিদর্শন করে বলেছিলেন, ‘‘বিরাট একটা কর্মযজ্ঞ চলছে। হাজার হাজার বছর ধরে জগন্নাথের এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’’ বৃহস্পতিবার বাংলার পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী জানালেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে কাজ শেষ হবে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরেরও। ওই সময়েই জনসাধারণের জন্য খুলেও দেওয়া হবে মন্দিরটি। অর্থাৎ, অযোধ্যার রাম এবং দিঘার জগন্নাথের তীর্থক্ষেত্র হিন্দু পুণ্যার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে একই সময়ে।

বৃহস্পতিবার অবশ্য গোটা বিষয়টিই বিধানসভায় উঠে আসে তৃণমূলের ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুনের প্রশ্নে। সম্প্রতি বিধানসভার ভিতরে এবং বাইরে সরকার-বিরোধী নানা রকম মন্তব্য করে শাসকদলকে অস্বস্তিতে ফেলছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল হুমায়ুনের বিরুদ্ধে। যদিও বুধবার থেকে হুমায়ুনের সেই আচরণে সামান্য বদল এসেছে। তিনি আর আগাম অনুমতি না নিয়ে আলটপকা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন না বিধানসভায়। প্রশ্ন করছেন পরিষদীয় শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির প্রধান ফিরহাদের অনুমতি নিয়ে। যেমন, বুধবার হুমায়ুন জানতে চেয়েছিলেন, রাজ্যে কেন্দ্রীয় শিক্ষা নীতি অনুসরণ করার বিষয়ে। বৃহস্পতিবার তিনি জানতে চান, দিঘায় জগন্নাথের মন্দির তৈরি করতে কত খরচ করা হচ্ছে? কবেই বা সেই মন্দিরের উদ্বোধন হবে? তাঁর প্রশ্নের জবাব দেন ফিরহাদই। তিনি বলেন, মোট ১৪৩ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির তৈরির জন্য। যা এ বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতেই খুলে দেওয়া হবে সাধারণ মানুষের জন্য। এর আগে অবশ্য রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, এই মন্দির গড়তে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে ফিরহাদের দেওয়া হিসাব বলছে সেই বরাদ্দ আরও ৪৩ কোটি টাকা বেড়েছে।

উল্লেখ্য, দিঘায় পুরনো জগন্নাথ মন্দিরের জায়গাতেই সমুদ্রের ধারে এই জগন্নাথ মন্দিরটি করার কথা বলেছিলেন মমতা। কিন্তু আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই পরে দিঘা স্টেশন সংলগ্ন ২০ একর জমি এই মন্দিরের জন্য দেয় দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সেখানেই জোরকদমে চলছে মন্দির তৈরির কাজ। মন্দিরটি তৈরির দায়িত্ব নিয়েছে রাজ্যের হাউসিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন বা হিডকো। দিঘার এই জগন্নাথ মন্দিরের উচ্চতা হবে ৬৫ মিটার বা ২১৩ ফুট। যা পুরীর মন্দিরেরই উচ্চতার সমান। মন্দিরটি বানানোর জন্য রাজস্থানের বাঁশিপাহাড় থেকে বেলেপাথর আনানো হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy