প্রতীকী ছবি।
মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলায় বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার যে হারে ডিএ দেয়, রাজ্য সরকারকেও সেই হারেই দিতে হবে বলে শুক্রবার জানিয়ে দিল রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)। শুধু তাই নয়, চলতি বেতন কমিশনের কার্যকাল শুরু হওয়ার আগের ১০ বছরে অনিয়মিত ভাবে ডিএ দেওয়ার কারণে রাজ্য সরকারি কর্মীরা যে টাকা কম পেয়েছেন, বকেয়া হিসেবে ধরে সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে স্যাট। রাজ্যের সরকারি কর্মীরা উল্লসিত স্যাটের এই রায়ে।
সর্বভারতীয় মূল্য সূচক বা কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী ডিএ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় মূল্য সূচকে মূল্যবৃদ্ধির হার যা দাঁড়ায়, সেই হারে ডিএ-ও বৃদ্ধি হয়। ছ’মাস অন্তর কেন্দ্র ডিএ ঘোষণা করে। ১ জানুয়ারি এবং ১ জুলাই—দু’বার ঘোষিত হয় ডিএ। অধিকাংশ রাজ্য সরকারই কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দেয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনেক বছর ধরেই সেই হার এবং রীতি অনুসরণ করে না।
কেন্দ্রীয় হার বা সর্বভারতীয় মূল্য সূচক অনুযায়ী ডিএ, বছরে দু’বার ডিএ এবং বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া— মূলত এই সব দাবিতেই মামলা করেছিল একাধিক কর্মী সংগঠন। কংগ্রেসের সংগঠন কনফেডারেশনের করা মামলার রায় শুক্রবার ঘোষিত হল। সে রায়ে দেখা গেল, রাজ্যের কর্মীদের প্রায় সব দাবিই স্যাট মেনে নিয়েছে।
স্যাটের রায়ের প্রতিলিপি এখনও কর্মী সংগঠনগুলি হাতে পায়নি। তবে রায় ঘোষণার পরে মামলাকারীদের আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারকেও কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে বলে স্যাট নির্দেশ দিয়েছে। ডিএ দেওয়ার নতুন নীতি কী হতে চলেছে, তা ‘গভর্নমেন্ট অর্ডার’ (জিও) আকারে আগামী তিম মাসের মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশও স্যাটের দুই বিচারপতি দিয়েছেন।
আরও পডু়ন: চিঠির লড়াই! অপর্ণাদের স্বঘোষিত অভিভাবক বলে তোপ, পাল্টা খোলা চিঠি ৬১ বিশিষ্ট জনের
শুধু কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েই স্যাট ক্ষান্ত হয়নি। চলতি বেতন কমিশনের কার্যকাল শুরু হওয়ার আগের ১০ বছর ধরেও রাজ্য সরকারি কর্মীরা অনিয়মিত ভাবে ডিএ পেয়েছেন এবং তার জেরে তাঁরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে স্যাট। ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৬-র ১ জানুয়ারির আগে পর্যন্ত ১০ বছরে যে টাকা বকেয়া হয়, তা মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
কনফেডারেশনের তরফে সুবীর সাহা বলেন, ‘‘ওই ১০ বছরেও ডিএ আমরা পেয়েছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় হারে নয়, বছরে দু’বারও নয়। কেন্দ্রীয় হারে যদি পেতাম, তা হলে যে টাকা অতিরিক্ত পেতাম, সেটাই বকেয়া হিসেবে মিটিয়ে দিতে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে।’’
স্যাটের এই নির্দেশকে যদি রাজ্য সরকার চ্যালেঞ্জ না করে, তা হলে এখন থেকে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ তো দিতেই হবে। বকেয়া বাবদও মোটা টাকা মেটাতে হবে সরকারকে।কত দিনের মধ্যে বকেয়া মেটাতে হবে, সে নির্দেশও স্পষ্ট ভাবেই দিয়েছে স্যাট। আগামী এক বছরের মধ্যে এই বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে বলে রায়ে জানানো হয়েছে। তবে তার আগেই যদি বেতন কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ে এবং নতুন বেতন কাঠামো স্থির হয়, তা হলে সেই কাঠামো চালু হওয়ার আগেই এই বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে— নির্দেশ স্যাটের।
আরও পড়ুন: ‘এ কী সাজা দিলেন বিচারক!’, ফাঁসি চেয়ে হাইকোর্টে যাচ্ছেন অনুপমের বাবা-মা
কর্মী সংগঠনগুলির কাছে খবর, আর কয়েক দিনের মধ্যেই জমা পড়তে চলেছে বেতন কমিশনের সুপারিশ। সেই সুপারিশ কার্যকর করতে রাজ্য সরকার যদি খুব দেরিও করে, তা হলেও ২০২০-র ১ জানুয়ারিতে নতুন কাঠামো অনুযায়ী বেতন হাতে পাওয়া যাবে বলে কর্মীরা আশাবাদী। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে ২০০৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বকেয়া ডিএ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যে কর্মীরা দিল্লি এবং চেন্নাইতে কর্মরত, তাঁদের ক্ষেত্রে কিন্তু এত দিন কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিত রাজ্য সরকার। এই বন্দোবস্তকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়েছে স্যাট। একই রাজ্য সরকারের কর্মী, কিন্তু ডিএ পাবেন ভিন্ন হারে, এমনটা অবৈধ— জানিয়েছে স্যাট। রাজ্য সরকারের সব কর্মীই সম হারে ডিএ পাবেন বলে জানানো হয়েছে। দিল্লি এবং চেন্নাইতে যাঁরা কর্মরত, তাঁদের জন্য আলাদা কোনও ‘প্রোৎসাহন’ বা ‘ইনসেন্টিভ’ দেওয়া যেতে পারে, রায় স্যাটের।
২০১৭ সাল থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চালাচ্ছে একাধিক কর্মী সংগঠন। কংগ্রেসের ছাতার তলায় থাকা সংগঠন কনফেডারেশনের তরফে যে মামলা করা হয়েছিল, সেই মামলার রায়ই ঘোষিত হচ্ছে শুক্রবার। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতেই ডিএ সংক্রান্ত দাবি নিয়ে স্যাটের দ্বারস্থ হয়েছিল কনফেডারেশন। কিন্তু স্যাট সে সময় মামলাটি শুনতেই চায়নি। শুরুতেই মামলাটি খারিজ করে দেয়।
স্যাটে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ২০১৭ সালেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কর্মী সংগঠনটি। ২০১৮ সালে হাইকোর্ট জানায় যে, ডিএ হল কর্মীদের অধিকার। রাজ্য সরকারের তরফে তার আগে হাইকোর্টকে বলা হয়েছিল, ডিএ কোনও অধিকার নয়, ডিএ সরকারের ইচ্ছাধীন। কিন্তু হাইকোর্ট স্পষ্ট জানায়, ডিএ কোনও দয়ার দান নয়, ন্যায্য অধিকার। তবে বছরে ক’বার ডিএ দেওয়া হবে, কী হারে দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের ভার ফের স্যাটের হাতেই ছেড়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ পেয়ে ফের বিষয়টি নিয়ে শুনানি শুরু করে স্যাট। কিন্তু মামলা চলাকালীনই রাজ্য সরকার ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাইকোর্টকে তার রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয় সরকারের তরফে। সে সময়ে স্যাটের শুনানি ফের বন্ধ হয়ে যায়। হাইকোর্টে যে হেতু ফের মামলাটি উঠেছে, সে হেতু স্যাটে শুনানি বন্ধ থাক— এই আর্জি রাজ্য সরকারি কৌঁসুলিরাই জানিয়েছিলেন।
হাইকোর্ট অবশ্য আগের রায় বদলায়নি। ডিএ যে কর্মীদের অধিকার, সেই পর্যবেক্ষণ থেকে পিছিয়ে আসতেও বিচারপতিরা রাজি হননি। ফলে ফের স্যাটেই ফেরে মামলা। সে মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল আগেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy