সংক্রমণের প্রথম ধাক্কার পরে সংক্রমণের সূচক ৯ হাজারে নেমে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। —ফাইল চিত্র
সোমবারে ৬৫৩১ জন। মঙ্গলবারে ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯১৯৫ জন। আর বুধবারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩,১৫৪। এই প্রবণতা সপ্তাহের বাকি দিনগুলিতে জারি থাকলে দেশে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার ঘোষণা সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য কর্তারা।
সংক্রমণের প্রথম ধাক্কার পরে সংক্রমণের সূচক ৯ হাজারে নেমে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। দেশে দেখা দিয়েছিল দ্বিতীয় ঢেউ। সংক্রমণ দৈনিক সাড়ে চার লক্ষে পৌঁছে যাওয়ার পরে ফের তা নামতে শুরু করে। রবিবার ৬,৩৫৮ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার পর থেকেই সংক্রমণের সূচক ফের ঊর্ধ্বমুখী। সূচক রোজ যে ভাবে লাফ দিয়ে বাড়ছে, তা যথেষ্ট চিন্তার কারণ বলেই স্বীকার নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে যে হারে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, তা দেখে তিনি নিশ্চিত বিহারে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ এসে গিয়েছে। বৃদ্ধির ওই হার লক্ষ করা গিয়েছে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, কর্নাটক ও গুজরাতের মতো আয়তনে বড় রাজ্যগুলিতেও।
তবে তিন-চার দিনের সূচক দেখেই তৃতীয় ঢেউ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লভ অগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘বড় সংখ্যক দেশবাসীর শরীরে করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে রয়েছে। তাই হতে পারে, পাঁচ-ছয় দিনের মাথায় আবার সংক্রমণের সূচক নামতে শুরু করল। তাই আগাম কিছু এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে বৃদ্ধির প্রবণতা যদি আগামী দিনগুলিতেও দেখা যায়, তা হলে সত্যি চিন্তার বিষয়।’’
উল্লেখযোগ্য ভাবে সংক্রমণ লাফ দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তেও। আজ তাই যে ক’টি রাজ্যকে কেন্দ্র চিঠি দিয়ে সাবধান করে দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ চিঠি দিয়ে আজ কলকাতায় সংক্রমণের হার এক সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে পরীক্ষা বাড়ানো, কোভিড বিধি মেনে চলার উপরে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে লেখা ওই চিঠিতে রাজেশ লিখেছেন, গত দু’সপ্তাহে কলকাতায় করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। ওই সংক্রমণ যাতে নতুন করে ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেরিতে রোগ চিহ্নিতকরণের জন্য তা যাতে মৃত্যুর কারণ না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর দিতে বলেছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার পর্যবেক্ষণ, ‘‘কলকাতায় বড়দিনের সময়ে যে ভাবে মানুষ পথে নেমেছিল, তার পরিণতিতে সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে নববর্ষ উদ্যাপনে পথে নামা আটকাতে না পারলে বছরের শুরু থেকেই সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে।’’
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার মোট সংক্রমণ যেমন উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে, ওই সময়ের মধ্যে ভারতে ওমিক্রন ধরা পড়েছে ১৮০ জনের। এটিও রেকর্ড। কেন্দ্রের হিসাবে, দেশের ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ওমিক্রন সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬১। ভারতে ইতিমধ্যে ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ওমিক্রন সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। মোট আক্রান্ত ৯৬১ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন ৩২০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ২৬৩ জন দিল্লির, ২৫২ জন মহারাষ্ট্রের এবং ৯৭ জন গুজরাতের। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানিয়েছেন, বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই, এমন মানুষেরাও এ বার ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ ক্রমশ সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে অতি-সংক্রামক স্ট্রেনটি। জৈনের আশঙ্কা সত্যি হলে খুব দ্রুত তৃতীয় ঢেউয়ের শিকার হবে রাজধানী। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলের কথায়, ‘‘ইংল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো দেশে ডেল্টাকে ছাপিয়ে এখন সংক্রমণের প্রধান প্রজাতি হল ওমিক্রন। আমেরিকাতেও ৪১ শতাংশ করোনা সংক্রমণের পিছনে দায়ী ওমিক্রন। অবিশ্বাস্য গতিতে ছড়িয়ে পড়া এই প্রজাতি বিশ্বের ১২১টি দেশে পৌঁছে গিয়েছে।
মহারাষ্ট্রে এক দিন আগে ১৭২৮ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯০০। তার মধ্যে ২৫১০ জন মুম্বইয়ের বাসিন্দা। গত ৮ মে-র পর থেকে বাণিজ্যনগরীতে এটাই সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ। আজ সারা দিনের হিসাব ধরলে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ৩৬৭১। অর্থাৎ দ্রুত গতিতে টিকাকরণ ও সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপ সত্ত্বেও এক দিনের মধ্যে মুম্বইয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। গত কাল থেকে আজ পর্যন্ত ৮৫ জনের ওমিক্রন ধরা পড়েছে মহারাষ্ট্রে। এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে বলেছেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। নয়া ভেরিয়েন্টে শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়ে মুম্বইয়ের মেয়র কিশোরী পেডনেকরের হুঁশিয়ারি, সংক্রমণের আগের দু’টি ঢেউয়ের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি এ বার হতে পারে।
প্রকাশ্যে বর্ষবরণের উৎসব আগেই নিষিদ্ধ করেছিল তামিলনাড়ু। আজ তামিলনাড়ু পুলিশ জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার পরে আর কোনও গাড়ি চেন্নাইয়ের রাস্তায় নামতে পারবে না। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। কাল রাত ৯টার পরে সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন রাস্তায় থাকা যাবে না। আমজনতাকে রাত ১২টা বাজার আগে বাড়িতে ঢুকে পড়তে হবে। শুধুমাত্র জরুরি ও অত্যাবশ্যক পরিষেবাকে এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য এমন কোনও কড়াকড়ি বা নিষেধাজ্ঞা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy