বেশি করোনা পরীক্ষা ও প্রতিষেধক দেওয়ার উপর জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। ফাইল চিত্র।
পুজোর ক’দিনের লাগামছাড়া ভিড় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় বাড়ছে সংক্রমণের হার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও বেশি করোনা পরীক্ষা ও প্রতিষেধক দেওয়ার উপর জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামোও তৈরি রাখা হচ্ছে।
মণ্ডপে মণ্ডপে মাস্কবিহীন জনতার ঢল, হোটেল-রেস্তরাঁয় খানাপিনার হুল্লোড়ের যে ছবি গত কয়েকটা দিন দেখা গিয়েছে তাতে স্বাস্থ্য কর্তাদের আশঙ্কা, আগামী সাত-দশ দিনে সংক্রমণ বাড়তে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরে পুজোর আগে করোনা সংক্রমণের হার যেখানে ছিল ১ শতাংশের আশেপাশে, সেখানে এখনই তা ছুঁয়েছে ২ শতাংশ। পশ্চিম বর্ধমানেও ২ থেকে ৮ অক্টোবর সংক্রমণের হার ০.৮ শতাংশ থাকলেও চতুর্থী থেকে দশমী তা বেড়ে হয়েছে ১.০৭ শতাংশ।
পুজো মিটতেই তাই জোরকদমে শুরু হয়েছে টিকাকরণ। পশ্চিম মেদিনীপুরে শনিবার জেলা জুড়ে মেগা ক্যাম্পে এক লক্ষেরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘‘মাঝে টিকার চাহিদা এবং জোগানে সামঞ্জস্য ছিল না। এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা রয়েছে।’’ বাড়ানো হচ্ছে করোনা পরীক্ষাও। ঝাড়গ্রামে এখন দিনে গড়ে সাতশো জনের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। লক্ষ্মীপুজোর পরে সংখ্যাটা দৈনিক এক হাজার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলছেন, ‘‘এখনই সতর্ক না হলে দীপাবলির আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে। তখন কাটাতে হতে পারে নিভৃতবাসে অথবা করোনা হাসপাতালে। তাই যাঁরা ভিড়ে বেরিয়েছিলেন, তাঁরা করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিন।’’
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় করোনা পরীক্ষার হার বেশ কম। আলিপুরদুয়ারে ১৫০, কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে বড় জোর ৩০০ করে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে দৈনিক। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ভাইরাল রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে দৈনিক ২০০-৩০০ জনের লালারসের নমুনার আরটিপিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে। অথচ এখানে দৈনিক ২৫০০ নমুনা পরীক্ষা হতে পারে। দ্রুত নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আবার পুজোর আগে যে ৪৬টি এলাকায় কনটেনমেন্ট জ়োন করা হয়েছিল, সেগুলি বহাল রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে সমীক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলায় দিনে এক লক্ষ টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। বীরভূমে ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। আজ, সোমবার থেকে ফের লাগাতার টিকাকরণ শুরু হচ্ছে। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান জানান, সোম-মঙ্গল দু’দিনে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টিকা দেওয়া হবে।
পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া, হাওড়ার মতো জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার এখনও বাড়েনি। তবে সেখানেও সক্রিয় স্বাস্থ্যকর্তারা। হাওড়ার জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘পুজোয় ভিড় দেখে অনুমান, সংক্রমণ বাড়তে পারে। তবে জেলায় দ্রুত গতিতে টিকাকরণ করা হচ্ছে।’’ জেলায় জেলায় জোর দেওয়া হচ্ছে করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামোতেও। হুগলিতে তৃতীয় ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিকাঠামো অনেকটাই উন্নত করা হয়েছে। শিশুদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানেও বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড তৈরি রাখা হচ্ছে। পশ্চিম বর্ধমানে আসানসোল জেলা হাসপাতাল এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ৩০০টি কোভিড শয্যা রাখা হয়েছে। শিশুদের জন্য এই দুই হাসপাতালে ৬০টি ‘পেডিয়াট্রিক আইসিইউ’ এবং দশটি সদ্যোজাতদের আইসিইউ চালু করা হয়েছে। রাজ্যের কোভিড মনিটরিং কমিটির পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলা কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু জানান, প্রশাসন ও মনিটরিং কমিটির প্রতিনিধিরা সপ্তাহে দু’টি করে বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড মোকাবিলার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy