মহম্মদবাজার ও কলকাতা: প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি নেবে না সরকার এবং উচ্ছেদ হতে হবে না কাউকে— ডেউচা নিয়ে এই আশ্বাসই দিল রাজ্য সরকার। শনিবার বিদ্যুৎ ভবনে ডেউচা সংলগ্ন এলাকার ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি বি সালিম এবং বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়। অন্য দিকে, মহম্মদবাজারের ডেউচা পাঁচামিতে, প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকায় যে কোনও রকম সমস্যার মোকাবিলায় ৩১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হল। এ দিনই সন্ধ্যায় মহম্মদবাজার ব্লক অফিসে গিয়েছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা এসআরডিএ-র চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর উপস্থিতিতেই এই কমিটি গঠিত হয়েছে।
গত বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে ডেউচায় কাজ শুরু করার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করলেও, তা পুরোপুরি বাধামুক্ত করা যায়নি এখনও। এই অবস্থায় সেখানকার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে রাজ্য। এ দিন দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠক করা হয় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বৈঠকের পরে সালিম দাবি করেন, সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা তথ্যের কারণে ডেউচা পাঁচামি নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে। তা কাটানোর জন্যই এই বৈঠক। এমন বৈঠক যে প্রতি এক-দেড় মাস অন্তর হবে, তা জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য। সালিম বলেন, “বৈঠকে বলা হয়েছে, সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না, যে জমি প্রয়োজন সেটা কিনে নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্যাকেজে যারা সন্তুষ্ট হবেন তাঁরা লিখিতভাবে সরকারকে সম্মতি-বার্তা দিলে তাঁদের জমি কিনে নেওয়া হবে। যাঁরা লিখিত ভাবে তা জানাবেন না, তাঁদের থেকে জমি নেওয়া হবে না।”
রাজ্যের আশ্বাস, খোলা-মুখ খননের বদলে সেখানে বন্ধ-মুখ খনন (আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং) হবে। সালিমের কথায়, “ওপেন কাস্ট মাইনিং হচ্ছে না বলে উচ্ছেদের প্রশ্ন নেই। আবার কেউ কেউ ছড়িয়ে দিচ্ছেন সেখানে ১০-১৪ হাজার একর জমি দরকার সরকারের। আমরা সংগঠনকে জানিয়েছি, প্রকল্পের জন্য ৩৪০০ একর জমিই প্রয়োজন।” সংগঠনের অন্যতম নেতা বৈদ্যনাথ হাজরা, সুখচাঁদ সোরেন বলেন, “সমাজমাধ্যম এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে অনেক কিছু বলা হচ্ছিল। যা নিয়ে তৈরি হচ্ছিল বিভ্রান্তি। এটাই সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে স্পষ্ট করাতে চেয়েছিলাম। আগামী দিনেও কোনও প্রশ্ন বা মানুষের আপত্তি নিয়ে সরকারের সঙ্গে যাতে নিয়মিত আলোচনার পথ খোলা থাকে, তা চাইব।”
অন্য দিকে, ডেউচা পাঁচামিতে প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকায় বিশেষ নজরদারি চালাতে লাগানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রকল্প এলাকার পাশাপাশি রাস্তা ও আশপাশেও এই ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি আরও কড়া নজরদারি চালাতে এই ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। আপাতত ৩০টি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও ক্যামেরা লাগানো হবে। প্রশাসনের দাবি, বহিরাগতেরা এখানে এসে আদিবাসীদের ভুল বুঝিয়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়ারচেষ্টা করছে। সূত্রের খবর, কারা তা করছে, তা চিহ্নিত করতেই সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত। রাজ্য জানিয়েছে, জনজাতি গোষ্ঠীর প্রিয় মহুয়া বা অর্জুন গাছ কেটে ফেলা হবে না। সেই গাছগুলিকে অন্যত্র বসিয়ে দেওয়া হবে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)