জলপাইগুড়ির মহামায়াপাড়ায় জলমগ্ন রাস্তা।—নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার-সহ আলিপুরদুয়ারের একাংশ এলাকা বৃষ্টি বন্যায় ভাসছে। অন্যদিকে মালদহ, দুই দিনাজপুরে টানা দাবদাহের জেরে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বাসিন্দারা। গত এক সপ্তাহ ধরে গরমে ঝলসে চলেছে দক্ষিণ দিনাজপুর। ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে জেলার বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে এক বেসরকারি বাস চালকের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দুপুরে মালদহ-বালুরঘাটগামী ওই বাস চালিয়ে বুনিয়াদপুরে পৌঁছনোর পর গাড়িতে চালকের আসনেই ঢলে পড়েন বালুরঘাটের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা বাসের চালক দয়াময় ঘোষ (৫৩)। সানস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় গরমের বলি হলেন দু’জন। এর আগে বংশীহারিতে গরমে এক ভবঘুরের মৃত্যু হয়েছিল। বালুরঘাট হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার জ্ঞানপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘‘গরমের কারণেই বাসের চালকের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’
মঙ্গলবার সকালের দিকে বালুরঘাটের আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা গেলেও পরে তা উধাও হয়ে চড়া রোদের দাপটে ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। পরিবেশপ্রেমীরা জানান, বালুরঘাটে সবুজায়নের ব্যাপক ঘাটতির জন্যই ফি বছর দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মতোই তীব্র গরম পড়ছে দক্ষিণ দিনাজপুরে। বন দফতর সূত্রের খবর, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মোট ভূখণ্ডের ৩৩ শতাংশ এলাকায় বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুরে বনভূমির পরিমাণ মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ। তার উপর প্রতিরাতে কাঠচোর দুষ্কতীদের হানায় রাস্তার ধার থেকে সারি সারি গাছ কেটে পাচার অব্যাহত। সেটাই গরমের এই তীব্রতার কারণ বলে পরিবেশপ্রেমীদের দাবি।
দুই চিত্র। (বাঁ দিকে) বালুরঘাটে বৃষ্টির আশায় চাষি। (ডান দিকে) জলপাইগুড়িতে জলমগ্ন গোমস্তাপাড়া। অমিত মোহান্ত ও সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
ইতিমধ্যে জেলার তপন ও হরিরামপুর ব্লকের একাংশ এলাকায় খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে চাষিদের দাবি। জেলাজুড়ে মাঠঘাট শুকিয়ে ফুটিফাটা অবস্থা। জমিতে জলের অভাবে চাষের কাজ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকার নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় পানীয় জলের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তপনের মালঞ্চা, হরিবংশীপুর, পাহাড়পুর, অভিরামপুর, আউটিনা হরিরামপুরের শিরসী, গোর্কণ, সৈয়দপুর এলাকাগুলির বাসিন্দারাও জলকষ্টে ভুগছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে নলকূপ সংস্কারে বিডিওরা উদ্যোগী হয়েছেন।’’
অন্যদিকে, কিছুটা হলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ডুয়ার্সে। ডুডুয়া, মুজনাই, বিরকিটের মতো নদীতে জল কমতে শুরু করলেও, উদ্বেগে রেখেছে তিস্তার জল। মঙ্গলবারেও জলপাইগুড়ি লাগোয়া দোমহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত তিস্তায় হলুদ সঙ্কেত জারি ছিল। এ দিন রাত পর্যন্ত তিস্তার জল কমেনি। গত সোমবার তিস্তার জল বেড়ে মালবাজারের কয়েকটি এলাকায় ঢুকে পড়ে। ডুয়ার্সের ফালাকাটা, ধূপগুড়ির কিছু এলাকাও জলমগ্ন ছিল গত সোমবার। জল বেড়ে যাওয়ায় এ দিন সকাল পর্যন্ত জলঢাকা নদীতে হলুদ সঙ্কেত জারি ছিল। মাথাভাঙা পর্যন্ত নদীতে হলুদ সঙ্কেত ছিল। দুপুরের পর সঙ্কেত প্রত্যাহার করা হয়।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সিকিম এবং ডুয়ার্সে বৃষ্টির কারমে তিস্তায় জল বাড়তে শুরু করেছে। সে কারণেই মালবাজারের কিছু এলাকায় নদীর জল ঢুকে পড়ে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া তিস্তা নদীর ধারের বেশ কয়েকটি গ্রামও এ দিন জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জলে ডুবে যায় শহর লাগোয়া রংধামালি, মণ্ডলঘাটের কিছু এলাকাও। জল না কমায় হলুদ সঙ্কেত দিয়ে রাখা হয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে উত্তরবঙ্গ লাগোয়া অসমের ধুবুরিতে। সোমবার রাতে প্রায় আধঘণ্টার বৃষ্টি এবং ঝড়ের দাপটে প্রায় ৬০টি কাচা-পাকা বাড়ি-ঘর এবং গাছ ভেঙে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। ধুবুরি জেলার গৌরীপুর থানার আশারিকান্দি গ্রাম সহ লাগোয়া আরও চারটি গ্রামে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবারের প্রায় ৩০০ বাসিন্দা। ঝড়ের দাপটে বাড়ি-ঘরের টিনের চাল দুমড়ে মুচড়ে উড়িয়ে নিয়ে যায়। ঝড়ের দাপটে ভেঙে যায় আশারিকান্দি হাই মাদ্রাসার ঘর। সারা রাত খোলা আকাশের নীচে থাকতে হয় ঘর বাড়ি হারানো লোকেদের। গ্রামবাসীদের অভিযোগ এই ঘটনার পরেও ধুবুরি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ত্রাণ সামগ্রী বিলি করা তো দূরের কথা মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত দুর্গতদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। আশারিকান্দি পঞ্চায়েতের সম্পাদিকা সাহানাজ বেগম জানান, ঝড়ের পরেই জেলা প্রশাসনকে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছি। ধুবুরির জেলাশাসক নজরুল ইসলাম জানান, “ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ত্রাণ বিলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy