স্কুল, কলেজ খোলা-সহ নানা দাবিতে ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
পরীক্ষা এড়িয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে মূল্যায়ন। তাতে প্রথমে ফেল হাজার কুড়ি। তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে কয়েক দিনের বিক্ষোভ-অবরোধ। তার জেরে ফের মূল্যায়ন। এবং তাতে পাশ উচ্চ মাধ্যমিকের অকৃতকার্য সব পড়ুয়াই।
এমন ‘ঝটিকা-তৎপরতা’, এমন ‘বিচিত্র’ বলেই করোনাকালের এই মূল্যায়নকে ‘বিশেষ’ বলা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, এর ফলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাল। অনেকের প্রশ্ন, ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়সীমা থাকা সত্ত্বেও মেয়াদ শেষের আট দিন আগে এত তাড়াহুড়ো করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বার করার কী দরকার ছিল? কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, ফল বেরোনোর পরেও অকৃতকার্যদের পাশ করানোর এই যে-দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হল, এর জেরে পরবর্তী বছরগুলিতে উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করা পরীক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাবেন না তো?
হাজারো প্রশ্ন আর বিতর্কের মধ্যেও নতুন আবেদনের ভিত্তিতে নিজেদের সব পড়ুয়া পাশ করে যাওয়ায় স্কুলগুলি খুশি। যেমন কসবা চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর স্কুলের ৫৫ জন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করেছিল। নতুন ব্যবস্থায় তাঁরা পাশ করে গিয়েছেন। “সংসদ যদি আগেই এটা ভাবত, তা হলে ভাল হত,” বলছেন অনিন্দ্যবাবু।
ফেল করে যে-সব পড়ুয়া অবরোধে নেমেছিলেন, পাশের খবর শুনে তাঁদের কয়েক জন মঙ্গলবার জানান, কোন যুক্তিতে ফেল করানো হয়েছিল, সেটা এখনও তাঁদের বোধগম্য হচ্ছে না। তাঁরা মাধ্যমিকে পাশ করেছেন। একাদশে পাশ করেছেন। এ বার তো পরীক্ষাই হয়নি। মাধ্যমিক ও একাদশের নম্বরের ভিত্তিতেই উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন হয়েছে। তাঁরা মাধ্যমিক ও একাদশে পাশ করে গেলে কোন যুক্তিতে তাঁদের উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করানো হয়? উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের বক্তব্য, তারা স্কুল থেকে যে-তথ্য পেয়েছে, তার উপরে নির্ভর করেই মূল্যায়ন করেছে। তাদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ভুল নেই।
সংসদ যা-ই বলুক, এর ফলে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে গিয়ে ঠেকল বলেই মনে করছেন হিন্দু স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রদীপ বসু। তিনি বলেন, “এই সব কারণেই সরকারি স্কুল থেকে সরে মানুষ বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর দিকে ঝুঁকছেন। শহরে সেই সুযোগ থাকলেও গ্রামেগঞ্জে তো সরকারি, সরকার পোষিত স্কুলই মানুষের ভরসা। তাঁরা কোথায় যাবেন?” শিক্ষাবিদ সমীর ব্রহ্মচারীর মতে, “কোথাও একটা ভুল তো হয়েছেই। আরও সতর্ক হয়ে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা যেত। তাতে একটু বেশি সময় লাগলে ক্ষতি ছিল না। মূল্যায়নের বিশেষ নীতিতে যারা ফেল করে যাচ্ছিল, ফলপ্রকাশের আগে আরও এক বার তাদের নম্বর রিভিউ করা যেতে পারত। তা হলে বিপত্তি ঘটত না।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “স্কুল নম্বর পাঠাতে ভুল করেছিল বলে তাদের দিয়ে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছে সংসদ। কিন্তু ভুল তো শিক্ষক-শিক্ষিকারা করেননি। মূল্যায়নের হিসেব কষতেই ভুল হয়েছে। তা হলে এই মুচলকা লেখানো হবে কেন?” যাঁরা আগামী বছরগুলিতে ফেল করবেন, তাঁরা এ বারের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে পাশ করানোর দাবিতে ফের বিক্ষোভ শুরু করে দেবেন না তো, প্রশ্ন সৌগতবাবুর।
মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিকাশ ভবনে আসেন। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাসের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর পরীক্ষার ফল নিয়ে কথা হয় বলে সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy