রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে আরও ‘সিরিয়াস’ হওয়ার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দফতরে আধিকারিক স্তরে মতানৈক্য কমাতে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করতে বললেন তিনি। আরজি কর-কাণ্ড এবং তার পরবর্তী আন্দোলনে বার বার প্রশ্ন উঠেছিল স্বাস্থ্যসচিবের ভূমিকায়। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম দাবি ছিল স্বাস্থ্যসচিব পদ থেকে নিগমের অপসারণ। তবে মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই পাশে থেকেছেন নিগমের। প্রতি বারই তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণের দাবি মানা সম্ভব নয়। সেই নিগমের কাজ নিয়ে এ বার চিকিৎসকদের সম্মেলনেই প্রকাশ্য মঞ্চে অনুযোগের সুর মমতার গলায়।
সোমবার কলকাতার আলিপুরের ‘ধনধান্য’ প্রেক্ষাগৃহে রাজ্যের সর্বস্তরের চিকিৎসকদের নিয়ে একটি সম্মেলন আয়োজিত হয়। সেখানে রাজ্যের সিনিয়র ডাক্তার, জুনিয়র ডাক্তার এবং অন্য ডাক্তারি পড়ুয়ারা ছিলেন। সম্মেলনে প্রায় ৩৮ মিনিট বক্তৃতা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তৃতার সময়ে মঞ্চেই বসেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নিগম। বক্তৃতার শেষ ভাগে স্বাস্থ্যসচিবের কাজ নিয়ে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। নিগমকে আর একটু ‘সিরিয়াস’ হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রশাসনিক কাজকর্মে সাহায্য করার জন্য ৮-১০ জন আইএএস আধিকারিককে নিযুক্ত করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। পাশাপাশি, চিকিৎসকেরাও রয়েছেন। নিগমের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে কিন্তু একটা মতানৈক্য সব সময় হয়। তোমরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আরও একটু বৃদ্ধি করে, সুন্দর করে, ভাল করে কাজ করো।”
বক্তৃতায় আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার যে দোষীর উপযুক্ত শাস্তিরও পক্ষে, তা-ও স্পষ্ট করে দেন তিনি। মমতা মনে করিয়ে দেন, আরজি কর-কাণ্ডে দোষীর শাস্তির দাবিতে তিনি নিজেও রাস্তায় নেমেছিলেন। রাজ্য সরকারের ‘অপরাজিতা’ বিলের প্রসঙ্গও আসে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। স্বাস্থ্য দফতরের ‘বদনাম’ রুখতে আধিকারিকদের আরও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মমতার কথায়, “অনেক কাজ হয়েছে স্বাস্থ্যে। কিন্তু একটি-দু’টি কাজের জন্য কেউ কেউ আমাদের নামে বদনাম করে।” মুখ্যমন্ত্রী সমবেত চিকিৎসকদের জানান, (আরজি কর কাণ্ডের পরে শুনানিতে) সুপ্রিম কোর্টে কেউ অভিযোগ জানিয়েছিলেন, রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে নাকি তুলোও পাওয়া যায় না! সে কথা শুনে ব্যথিত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে সরকারপক্ষের দফায় দফায় আলোচনায় বার বার উঠে এসেছিল স্বাস্থ্যসচিব নিগমের অপসারণের দাবি। নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচার, হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ ১০ দফা দাবিতে সল্ট লেকের সেক্টর ফাইভে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অনির্দিষ্ট কাল অবস্থানে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ওই ১০ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ। মমতা সেখানে আচমকা চলে যান। তার পরে তাঁর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একাধিক বৈঠক হয়। প্রতিটি বৈঠকেই নিগমকে অপসারণ করার দাবি ওঠে। কিন্তু প্রতিটি বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, নিগমকে সরানোর প্রশ্ন ওঠে না। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ কয়েক জন পদস্থ পুলিশ অফিসার এবং স্বাস্থ্য আধিকারিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে নবান্নে শেষ বৈঠকেও মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, নিগমকে সরানোর দাবি তিনি মানবেন না।
ঘটনাচক্রে, সোমবার চিকিৎসকদের সম্মেলন থেকে সেই স্বাস্থ্যসচিব নিগমকেই কাজের ব্যাপারে আরও ‘সতর্ক’ করে দিলেন মমতা। যদিও নির্দিষ্ট ভাবে কোনও অভিযোগের কথা তিনি উল্লেখ করেননি। দফতরে আধিকারিক স্তরে সার্বিক সমন্বয়ের বিষয়ে নজর দেওয়ার কথা বলেছেন।