Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

উৎসবের আবহে বন্যার্ত মানুষদের ভুললে চলবে না, প্রশাসনের সর্বস্তরে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা

বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেপালের বন্যার প্রভাব উত্তরবঙ্গেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৩৭
Share: Save:

নেপালের বন্যায় উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় প্লাবনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গেও সম্প্রতি ডিভিসির ছা়ড়া জলে একাধিক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এক দিকে সামনেই দুর্গাপুজো। অন্য দিকে প্লাবনের আশঙ্কা। এই সময়ে উৎসবের আবহে বন্যার্ত মানুষদের ভুলে গেলে চলবে না। রবিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির উত্তরকন্যা থেকে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশাসনের সর্বস্তরে এই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হলে উত্তরবঙ্গে কী প্রস্তুতি রয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে রবিবার উত্তরের জেলাগুলির সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি দফতরকে নিজের নিজের কাজ বুঝিয়ে দেন তিনি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষকে পরিষেবা দেওয়াই যে ‘সবার আগে বিবেচ্য’ সেটাও বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

পর্যালোচনা বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এক দিকে পুজো। অন্য দিকে বন্যার ফাঁড়া। প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের পাশে থাকতে হবে। পুজো বলে বন্যা ত্রাণের কাজে মানুষের পাশ থেকে সরে গেলে হবে না। এটিও একটি সেবা। বন্যাত্রাণে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।” বন্যার কারণে কৃষকদের ফসলের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে বাংলার শস্য বীমায় আবেদনের মেয়াদকালও বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, শস্য বিমার জন্য প্রতি বছর ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থাকে। কিন্তু এ বার সেপ্টেম্বেরের শেষ সপ্তাহে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই কারণে, শস্য বিমার আবেদনের সময়সীমা ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। তিনি আশ্বস্ত করেন, বৃষ্টি থেমে গেলেই শস্য বিমার আওতায় টাকা দেওয়া হবে। কৃষকেরা যাতে উদ্বিগ্ন না হন, সেই পরামর্শও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

একই সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বাংলার প্রতি অবহেলার অভিযোগে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ডিভিসিকেও দুষতে ছাড়লেন না মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বন্যায় আমাদের এক পয়সাও দেয় না। যদিও বন্যা নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কেন্দ্রের অধীনে। ফারাক্কা বাঁধও ড্রেজ়িং করা হয় না। ঠিক মতো ড্রেজ়িং করলে ফরাক্কা বাঁধে আরও জল জমা রাখতে পারত। সেই কারণে বিহারও ডোবে, বাংলাও ডোবে। ড্রেজ়িং করা হলে আরও ৪ লাখ কিউসেক জল ধারণ করতে পারত। তা হলে এই জায়গাগুলি অনেকটা কম ভুগত।”

উল্লেখ্য, বৃষ্টি এবং বন্যা পরিস্থিতির সময় গ্রামাঞ্চলগুলিতে সাপের উপদ্রবও বৃদ্ধি পায়। সে দিকেও নজর রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাপের কামড়ে যাতে কারও মৃত্যু না হয়, সেই কারণে প্রতিটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অ্যান্টিভেনম মজুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের উদ্দেশেও তাঁর বার্তা, সাপে কামড়ালে বাড়িতে ফেলে না রেখে দ্রুত নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। সরকারি সহায়তা ছাড়া তিনি নিজেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় শুকনো খাবার পাঠাচ্ছেন। দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতিতে ত্রাণ সরবরাহে পুলিশের ভূমিকারও প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

রবিবার সন্ধ্যার সাংবাদিক বৈঠক থেকে বিশেষ করে গঙ্গা পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুরোধ জানান, এখন বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় জল না থাকলেও তাঁরা যেন সরকারি ত্রাণ শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নেন। কারণ, বাঁধ থেকে ছাড়া জল আসতে কিছুটা সময় লাগবে। মহালয়ার ভরা কটাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং যতক্ষণ না আবহাওয়া দফতর সবুজ সংকেত দিচ্ছে, ততক্ষণ কষ্ট করে হলেও ত্রাণ শিবিরে থাকার জন্য অনুরোধ করেন মমতা। তিনি বলেন, “দয়া করে কষ্ট করে কয়েকটা দিন ত্রাণ শিবিরে থাকুন। জীবন থাকলে বাড়িও বাঁচবে। কিন্তু জীবন চলে গেলে, শুধু বাড়ি থেকে কোনও লাভ নেই। একটি জীবন খুব দামি।”

উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে কোথায় জল উঠেছে, কোথায় ওঠেনি, কী কী সাবধানতা নেওয়া দরকার- সব নিয়েই রবিবারের বৈঠকে আলোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহও। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মহালয়ার ভরা কটাল না কাটা পর্যন্ত ছয় জেলায় দু’জন করে সচিব পর্যায়ের আমলা থাকবেন। এ বিষয়ে মুখ্যসচিবকে প্রয়োজনীয় নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওই সচিবেরা সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন। কোথাও সমস্যা হলে আমাদের জানাবেন, সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।” কোথাও কোনও সমস্যা দেখা দিলে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলেও আশ্বস্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE