Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Barabani

West Bengal By Election: বিক্ষিপ্ত গোলমাল ছাড়া অকাল ভোট নিস্তরঙ্গই

গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙেছে কংগ্রেস প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর। সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের গাড়ির বনেট চাপড়ে গোলমাল পাকানোর অভিযোগও ওঠে।

বারাবনির কাপিষ্ঠায় আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের কনভয়ের একটি গাড়িতে হামলা।

বারাবনির কাপিষ্ঠায় আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের কনভয়ের একটি গাড়িতে হামলা। ছবি: পাপন চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও আসানসোল শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২৮
Share: Save:

বেলা ১১টায় কলকাতার বেনিয়াপুকুরের একটি বুথ। ভিতরে হাতে গোনা লোক ভোট দিচ্ছেন। ভোট কেমন হচ্ছে দেখে তারকা-প্রার্থী বেরিয়ে যেতেই এক পোলিং এজেন্ট বললেন, ‘‘এই প্রার্থীর সঙ্গেই কয়েক জন যা ঢুকল। ফাঁকাই বসে আছি।’’

বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনের সামগ্রিক চিত্রটাই যেন উঠে এল সেই এজেন্টের বক্তব্য থেকে। অল্প সংখ্যক মানুষই নেমে সেখানে ভোট দিয়েছেন মঙ্গলবার। তুলনায় আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে বেশি। যেখানে বালিগঞ্জে মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৪১.১০%, সেখানে আসানসোলে ভোট পড়েছে ৬৪.০৩%।

আসানসোল থেকে কিছু বিক্ষিপ্ত গন্ডগোলের খবরও এসেছে। সেখানকার বারাবনিতে ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি, সংবাদমাধ্যমকে বাধার অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীরা আঙুল তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। যদিও শাসক দল সে অভিযোগ মানেনি। ভোটযন্ত্র খারাপ এবং ভোট জালিয়াতির বিক্ষিপ্ত কিছু অভিযোগ বালিগঞ্জেও এসেছে। বিরোধী সিপিএম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূলের জমানায় রাজ্যে কোনও নির্বাচনই যে সুষ্ঠু ভাবে ও নির্বিঘ্নে সম্ভব নয়, তার উদাহরণ ফের দেখা গিয়েছে আসানসোল ও বালিগঞ্জে। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘রমজানের সময়, তীব্র গরম ও বিজেপির সব রকম প্ররোচনা উপেক্ষা করে মানুষ দু’টি কেন্দ্রেই ভোট দিয়েছেন। বিজেপি-বিরোধী শক্তির মূল স্তম্ভ তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন মানুষ। দু’টি আসনেই আমাদের জয় নিশ্চিত।’’

নিবার্চন কমিশনও জানিয়েছে, ভোট হয়েছে ‘শান্তিপূর্ণ’। যেখান থেকে যখনই কোনও অভিযোগ এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে তার নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সারা দিনে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

বারাবনিতে এ দিন বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে জটলা করা যুবকদের বচসার পরে ইট-বৃষ্টি শুরু হয় বলে অভিযোগ। বারাবনির মাজিয়াড়ায় সকালে সৌমিক সেনগুপ্ত নামে এক এসিপি তাঁর তিন গাড়ির ‘কনভয়’ আটকান। আটকে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমের কিছু গাড়িও। অগ্নিমিত্রা তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি আমার ও সংবাদমাধ্যমের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছেন!’’ কেন ২৫ মিনিট আটকানো হল সবাইকে? জবাব দেয়নি পুলিশ।
দিনভর বালিগঞ্জ উপনির্বাচন কেন্দ্রের বুথে বুথে ঘুরেও কোথাওই ভোটারের লাইনের দেখা মেলেনি। কত কম সংখ্যক ভোটার এ দিন ভোট দিতে গিয়েছিলেন, দিনের শেষে ভোট শতাংশের হারেও তা স্পষ্ট। যা নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘এমনিতেই রমজান মাস চলছে। তার মধ্যে এত গরম। তাই ভোট কম পড়ছে।’’

তবে এই নিরুত্তাপ, ক্লান্তিকর ভোটেও গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙেছে কংগ্রেস প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর। সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের গাড়ির বনেট চাপড়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টার অভিযোগও ওঠে। রয়েড স্ট্রিটে সায়রার এক এজেন্ট রোহিত ম্যাথু শাহের হাতে হেলমেট ঢাকা আরোহীরা ব্লেড মারেন বলেও অভিযোগ। বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ শাসক দলের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ করেন। শাসক দলের প্রার্থী বেজায় গরমে নিজের বাড়িতে বিশ্রামের সুযোগ পেলেও বাম প্রার্থী সায়রা, কংগ্রেসের কামরুজ্জামান বা বিজেপির কেয়াকে বুথে বুথে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। বিক্ষিপ্ত উত্তেজনার ঘটনা ঘটলেও বড় মাপের অশান্তি হয়নি। ভোটযন্ত্র খারাপ থাকায় কয়েকটি বুথে ঘণ্টা দুয়েক বাদে ভোট শুরু হয়।.

আসানসোলের উপনির্বাচনের তুলনায় ভোট শতাংশের হার সন্তোষজনক বলেই জানিয়েছে সব রাজনৈতিক দলই। সবারই ব্যাখ্যা, একে প্রবল গরম, তার উপরে অনেকেই রোজা রেখেছেন। তাই ভোট শতাংশ কিছুটা কম। আসানসোল রেলপাড়ের কয়েকটি বুথে দুপুর ১টা নাগাদ গিয়ে দেখা গেল কার্যত ভোটার-শূন্য পরিস্থিতি। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, “মহিলাদের ভোটদানের হার বেশ কম।”

বিজেপির প্রতিনিধিদল এ দিন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে গিয়ে ভোট নিয়ে অভিযোগ জানায়। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। বুথে পুলিশ ঢুকেছে, প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, এমনকি প্রার্থীর উপরে শারীরিক ভাবে হামলাও হয়েছে।

ছাপ্পা ভোট ও অশান্তির অভিযোগ করে বিজেপি জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট নয়। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে ও উদ্বেগের কথাও কমিশনকে জানায় বিজেপি। বিক্ষিপ্ত রিগিং ও গোলমালের অভিযোগ করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও। বালিগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী সায়রা যেমন অভিযোগ করেছেন, ‘‘তৃণমূল প্রার্থীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। তৃণমূল ভয় পেয়েছে হেরে যাওয়ার। তাই বহিরাগতদের ভোটার সাজিয়ে এনে কিছু জায়গায় ছাপ্পা ভোট করিয়েছে।’’

প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ও বালিগঞ্জের প্রার্থী কামরুজ্জামানের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও নীরবে রিগিং হয়েছে। বালিগঞ্জে মহিলাদের এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। কমিশনকে বারবার অভিযোগ করেছি।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও দাবি, তৃণমূল মানুষের উপরে আস্থা রাখে না। রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘বিধানসভা ও লোকসভা উপনির্বাচনের সময়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে, পুলিশ-প্রশাসনও কমিশনের অধীনে। এখানে আমাদের কী করার আছে? যাদের পরাজয় নিশ্চিত, তারা নানা অভিযোগ করছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy