Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪
BJP

মুসলিম ভোট ভাঙতে বিজেপির দ্বিমুখী কৌশল

মুসলিম ভোট নিজেদের ঝুলিতে আনতে ‘মোদী মিত্র’ প্রকল্প নিয়েছে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। দেশের অন্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।

Party flag of TMC

বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার ‘মোদী মিত্র’ প্রকল্প। প্রতীকী চিত্র।

বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ০৬:৫৯
Share: Save:

রাজ্যে তৃণমূলের ‘একচেটিয়া’ সংখ্যালঘু ভোট ভাঙতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। তার জন্য ব-কলমে দ্বিমুখী কৌশল নিচ্ছে তারা। তৃণমূলের ভোট যাতে বাম-কংগ্রেস ভাঙতে পারে, সেই সম্ভবনা যেমন তারা দেখছে, তেমনই সেই ভোটে তারাও ভাগ বসাতে পরিকল্পনা করছে। যদিও তারা মুখে বলছে, মোদীজি’র ‘বিকাশের রাজনীতি’ সবার জন্য। তারা সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু ভাগ করি না।

মুসলিম ভোট নিজেদের ঝুলিতে আনতে ‘মোদী মিত্র’ প্রকল্প নিয়েছে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। দেশের অন্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম পর্বে দেশের ৬০টি লোকসভা কেন্দ্র তারা বাছাই করেছে, যে আসনগুলি মুসলিম-অধ্যুষিত। এর মধ্যে রয়েছে বাংলার ১৩টি আসন। এই লোকসভা কেন্দ্রগুলোর জন্য পৃথক পর্যবেক্ষকও নিয়োগ করা হবে বলে সূত্রের খবর।

দ্বিতীয় পর্যায়ে সেই লোকসভাগুলিতে মুসলিম সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব, ধর্মগুরুদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই প্রচার করা হবে, মোদী সরকারের ‘সব কা বিকাশে’র কথা। লক্ষ্য, বিজেপির বিরুদ্ধে ওঠা মুসলিম-বিরোধিতার অভিযোগকে খণ্ডন করা। এর মধ্যে দিয়েই তারা উন্নয়নের পক্ষে একাংশের মুসলিম ভোটকে একত্রিত করতে চাইছে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আমরা বলছি, মুসলিমদের ডিএনএ এবং আমাদের ডিএনএ এক। আপনারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন না ভেবে ভারতীয় সভ্যতা, সংস্কৃতির মূল স্রোতে সম্পৃক্ত হন।’’ চলতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রায়পুরে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী বৈঠক থেকেই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্য বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি চার্লস নন্দীর বক্তব্য, ‘‘আমরা ইতিমধ্যে রাজ্যের ১৩টি সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত লোকসভায় কাজ শুরু করে দিয়েছি। লোকসভা পিছু দু’হাজার সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে জনসংযোগ করা হবে। কোনও বড় সমাবেশ নয়, পাড়ায় পাড়ায় ছোট সভা হবে।’’

সম্প্রতি বগটুই-কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচিতে যোগ দেন মিহিলাল শেখ-সহ ওই গ্রামের বেশ কিছু সংখ্যালঘু পরিবার। ইদের দিন রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে ধর্মীয় সভায় রাজনীতির কথা বলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আম্বেডকর মূর্তির নীচে শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার স্পষ্টই বার্তা দিয়েছেন, ‘‘বিজেপি তোষণের রাজনীতি করে না। তৃণমূল মুসলিমদের ভোটব্যাঙ্ক বানিয়ে রাখতে তাদের উন্নয়ন করেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনা, আবাস যোজনা, প্রতি ঘরে শৌচালয়ের প্রকল্প হিন্দু, মুসলিম না দেখে সবার জন্য দেওয়া হয়েছে। মুসলিমেরা এই প্রকল্প থেকে সব চেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন।’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “ভোটের আশা না করেই তাঁদের কাছে পৌঁছতে হবে।”

সম্প্রতি সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলকে হারিয়ে কংগ্রেসের জয়ের পরে প্রকাশ্যেই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিজেপি নেতারা। শুভেন্দু সেখানে প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, মানুষ যাকে ভোট দেবে, সে জিতবে। কিন্তু তৃণমূলকে আগে হারাতে হবে। ভোটের ফল প্রকশের পরে শুভেন্দু-সুকান্তকে প্রায় একই সুরে বলতে শোনা যায়, সংখ্যালঘু মানুষ তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করায় তাঁরা খুশি। সেই সঙ্গে অবশ্য জুড়ে দেন, এই ভোট তাঁদের ঝুলিতে এলে তাঁরা বেশি খুশি হতেন। তবে তাতে যে তাঁদের বিশেষ ‘অসন্তোষ’ আছে, তেমন নয়। সূত্রের খবর, সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হওয়ায় তাঁরা খুশি। বরং, হিন্দু ভোট এককাট্টা করতেই তাঁরা বেশি আগ্রহী। তাই রামনবমীর সময়ে অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। এই পরিকল্পনার কার্যত মান্যতা মেলে দিলীপের কথায়। সংখ্যালঘু ভোট বিজেপির ঝুলিতে আনতে তাঁদের কি বিশেষ কোনও পরিকল্পনা আছে? জবাবে দিলীপ স্পষ্ট বলেন, “আমাদের কোনও পরিকল্পনা নেই। ওরা ওদের মতো ভোট করুক। ওদের নিয়ে আমাদের ভয় কিংবা ভক্তি কিছুই নেই আলাদা করে। যখন আসার, তখন ঠিকই আসবে!” যদিও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু সব ভোটই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের পক্ষে যাবে। সাগরদিঘি একটি বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম। আমাদের ভুলে আমরা হেরেছি। বিরোধীদের কোনও কৃতিত্ব নেই। এর পুনরাবৃত্তি আর হবে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP BJP Morcha Minority votes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE