গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে কমপক্ষে ২০০ আসন চাই। লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন খোদ অমিত শাহ। কিন্তু বঙ্গে ঠিক কত আসন পেতে পারে বিজেপি? ভোটের এখনও কয়েকমাস বাকি। এখনও পর্যন্ত দলের ‘অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা’ কিন্তু বলছে ‘টার্গেট’ থেকে খানিকটা দূরেই রয়েছে দল। তবে রাজ্যনেতারা পাশাপাশি এটাও মনে করছেন, যত আসন মিলছে, তাতে নীলবাড়ির ক্ষমতায় আসতে কোনও সমস্যা হবে না। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের নেতাদের ২২টি আসনের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিলেন অমিত। শেষ পর্যন্ত ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। তবে কয়েকটি আসনে হারের ব্যবধান খুব কম ছিল। এ বার মূলত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতেই বিধানসভার লড়াইয়ে নামছে বিজেপি।
গত মঙ্গলবার খড়দহে দলের সভায় শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে ১২০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তাই ক্ষমতায় আসতে দরকার আর ৩০টির মতো আসন। প্রসঙ্গত, নীলবাড়ি দখলে ‘ম্যাজিক ফিগার’ ১৪৮। দলের ‘অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা’র হিসাবের বাইরেও বিজেপি বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়েছে। রাজ্য নেতারা তো বটেই, বাংলায় আসা ভিন্রাজ্যের নেতারাও রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই সব রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যা অবস্থা, তাতে ১৫০ থেকে ১৬০টি আসনে বিজেপি জয় পেতে পারে বলে মনে করছে দল। আনন্দবাজার ডিজিটাল এ নিয়ে কোনও সমীক্ষা করেনি। রাজ্য বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোন জেলায় কত আসনে জয়ের কথা ভাবছে গেরুয়া শিবির। আনন্দবাজার ডিজিটাল ওই সমীক্ষার সত্যতা বা যাথার্থ্যও যাচাই করেনি।
কমপক্ষে ২০০ আসন চাই। লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন খোদ অমিত শাহ।
সাংগঠনিক ভাবে বাংলাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে নির্বাচন লড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের সব জেলা নিয়ে উত্তরবঙ্গ জোন। সেখানে আসনের সংখ্যা ৫৪। দলের হিসাব, ওই জোনে ৩০ থেকে ৩৫টি আসন মিলতে পারে। পাহাড়ে বিমল গুরুং বিজেপির বিরোধিতা করবেন। ফলে সেখানে দার্জিলিং লোকসভা আসনের সাতটি আসনের মধ্যে দু’টির বেশিতে জয় পাওয়া যাবে না বলেই মনে করছে বিজেপি। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি বিধানসভা এলাকাতেও গুরুংয়ের প্রভাব কাজ করবে। তবে বিজেপির আশা, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় গুরুং-প্রভাব সে ভাবে কাজ করবে না। সদ্য নাগরাকাটার তৃণমূল বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় ওই আসনটি নিয়ে আশাবাদী বিজেপি। এর পরেই নবদ্বীপ জোন। আসনসংখ্যা ৬৩। এই জোনে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ। বিজেপির আগাম হিসেব বলছে, এই এলাকায় ২৫ থেকে ৩০টি আসন মিলতে পারে। দলের আশা, বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সব বিধানসভা আসনেই জয় পাওয়া যাবে। কৃষ্ণনগর ও বারাসত লোকসভা এলাকা থেকে চারটি করে আসন পাওয়ার আশা করছে তারা। বিজেপির ‘অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা’ বলছে, লড়াই কঠিন দেগঙ্গা ও রাজারহাট-নিউটাউন আসনে। বসিরহাট লোকসভা এলাকা থেকে একটি আসন মিললেও মিলতে পারে। তবে বিজেপির হিসাব বলছে, অর্জুন সিংহের ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকা থেকে আমডাঙা ছাড়া বাকি ছ’টি আসনেই জয় পাবে তারা।
আরও পড়ুন: ‘১ জানুয়ারি শপথ নিলাম, প্রত্যেক দিন জেলায় যোগদান মেলা হবে’
রাজ্যে বিজেপির শক্তিশালী এলাকা রাঢ়বঙ্গ জোন। এই জোনে রয়েছে দুই বর্ধমান জেলা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম জেলা মিলিয়ে ৫৭টি আসন। এখানকার বেশ কয়েকটি লোকসভা আসন নিজেদের দখলে থাকায় বিজেপি মনে করছে, ওই জোনে ৩০ থেকে ৩৫টি আসন পেতে সমস্যা হবে না। বস্তুত, এই জোনের আসানসোল, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপর এবং পুরুলিয়া লোকসভা এলাকার সব আসনেই জয় মিলতে পারে ধরে নিয়ে অঙ্ক কষছে বিজেপি। দুই মেদিনীপুর ছাড়াও ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও হুগলি জেলার আসনগুলি নিয়ে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক জোন মেদিনীপুর। সেখানে রয়েছে মোট ৬৯টি আসন। তৃণমূল ছেড়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে দলের আশা এখান থেকে বড় সংখ্যায় আসন মিলতে পারে। দলের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ৩৫ থেকে ৪০টি আসন আসবে এই জোন থেকে। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের লোকসভা কেন্দ্র মেদিনীপুর ছাড়াও ঘাটালের আসনগুলিতে দল ভাল ফল করবে বলে মনে করেছে বিজেপি। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, তমলুক মিলিয়ে আসতে পারে ১০ থেকে ১২টি আসন। হাওড়া জেলার আসনগুলি নিয়ে এখনও কিছুটা ধন্দ থাকলেও বিজেপির আশা, বড় সংখ্যায় আসন মিলতে পারে হুগলি, আরামবাগ, শ্রীরামপুর লোকসভা এলাকা থেকে।
আরও পড়ুন: দত্তাবাদ, আমডাঙা, মধ্যমগ্রামে শুরু টিকার মহড়া, নজর বিশেষ সফটওয়্যারে
বাকি রইল কলকাতা জোন। বিজেপি-র এই সাংগঠনিক জোনে রয়েছে ৫১টি আসন। কলকাতা ছাড়া রয়েছে সম্পূর্ণ দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ। এই জোনকে ‘তৃণমূলের দুর্গ’ বলা যায়। তবে বিজেপি মনে করছে, দলের পক্ষে যে ‘হাওয়া’ রয়েছে, তাতে এখানেও খাতা খোলা যাবে। সদ্য এই জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি একটা বড় সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল সভাপতিও ছিলেন। সেই ভরসায় বিজেপির আশা, ১০ থেকে ১২টি আসন মিলতে পারে এই এলাকায়।
আরও পড়ুন: কারা প্রথম টিকা পাবেন, কত দাম হবে, জানালেন এমস-এর ডিরেক্টর
বিধানসভা নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণ যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে, তা এখন থেকেই স্পষ্ট। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেও তার ছায়া দেখা গিয়েছে। পদ্মশিবিরের অনেক নেতারই দাবি, আসন্ন নির্বাচনে হিন্দু ভোট গেরুয়া শিবিরের পক্ষে অনেকটাই এককাট্টা হবে। তাই রাজ্য বিজেপি মনে করছে, বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান-অধ্যুষিত ৬০টির মতো আসন নিয়ে লড়াই শুরু করবে তৃণমূল। বাম-কংগ্রেস জোট লড়াই শুরু করবে ১৫টির মতো আসন নিয়ে। ফলে বিজেপি-র ‘সহজ লড়াই’ থাকবে ২২০টির মতো আসনে।
আরও পড়ুন: বাংলায় কত ভোট পাবে তৃণমূল? অভ্যন্তরীণ হিসেবে স্বস্তিতে ঘাসফুল
তবে আগাম হিসাবনিকেশের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে বিজেপিকে— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও সে ভাবে প্রচারে নামেননি মমতা। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়া তৈরি হলেও তা একাই থামিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী। ভোটের ঠিক আগে ‘নারদা-কাণ্ড’ প্রকাশ্যে আসার পরেও নিজের ভাবমূর্তি দিয়ে যে ভাবে তিনি দলের জয়কে বিপুল আকার দিয়েছিলেন, তা ভুলছে না বিজেপি। এ বারেও নির্বাচনী প্রচার তুঙ্গে ওঠার পরে মমতা কী স্ট্র্যাটেজি নেবেন, তা এখনও পদ্মশিবিরের অজানা। তবে এটা সম্যক জানা যে, সেই কৌশল তাদের সব হিসাব ওলটপালট করে দিতে পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy