ছবি সংগৃহীত।
মফস্সলের এক তরুণ আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের করা আরটিআই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। কেন্দ্রের প্রতি লাগাতার আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ করে এলেও এই আরটিআইয়ের জেরে জানা গিয়েছে, গত ছয় বছরে জাতীয় আয়ুষ মিশনে কেন্দ্রের দেওয়া প্রায় ৯৪ কোটি টাকার মধ্যে ৪৮ কোটির বেশি টাকা খরচই করতে পারেনি রাজ্য।
খোদ আয়ুষ মন্ত্রক লিখিত ভাবে এট জানানোর পরে আর অস্বীকার করার জায়গায় নেই রাজ্য। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। কোন-কোন কাজে এই টাকা কী ভাবে দ্রুত খরচ করা যায় তার রূপরেখা ডিজি (আয়ুষ) তৈরি করছেন। আয়ুষ ওয়েলনেস ক্লিনিকগুলিও দ্রুত চালু হচ্ছে। পুরো বিষয়গুলি উনি কার্যকর করছেন।’’
কিন্তু কেন টাকা খরচ হয়নি, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর স্বাস্থ্যকর্তারা দেননি। যদিও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। প্রথম থেকেই যেহেতু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আয়ুষ চিকিৎসাপদ্ধতিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তাই রাজ্যে তৃণমূল ওই পদ্ধতিকে খানিকটা এড়িয়ে চলেছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: এ বার দুর্গোৎসবের উদ্যোক্তাও বিজেপি
আরও পড়ুন: ভুয়ো সংস্থার আঁতুড়ঘর কলকাতায়
এমনকি করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরেও আয়ুষ চিকিৎসাকে রাজ্যে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলের বাসিন্দা তরুণ আয়ুর্বেদ চিকিৎসক কেশব লাল প্রধান জানিয়েছেন, আয়ুষ চিকিৎসাপদ্ধতি রাজ্যে এ ভাবে অবহেলিত হচ্ছে দেখে তিনি আর সহ্য করতে পারেননি। তাই গত ২২ জুলাই আয়ুষ মন্ত্রকে তিনি একটি আরটিআই করেন। আয়ুষের বিভিন্ন খাতে কেন্দ্র কত টাকা পশ্চিমবঙ্গকে গত কয়েক বছরে দিয়েছে এবং রাজ্য তার মধ্যে কত খরচ করতে পেরেছে তার বিস্তারিত তথ্য চান তিনি।
গত ১৮ অগস্ট আরটিআইয়ের উত্তর লিখিত ভাবে পাঠান স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডেপুটি অ্যাডভাইজ়ার (আয়ুর্বেদ) সুরেশ কুমার। তাতে দেখা যায়, জাতীয় আয়ুষ মিশনে ২০১৪ থেকে ২০২০-র ৩০ জুন পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য অনুমোদিত হয়েছে ১৫০ কোটি ১৩ লক্ষের মতো টাকা। তার মধ্যে কেন্দ্র দিয়েছে ৯৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। রাজ্য ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত তার মধ্যে মাত্র ৪৬ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা খরচ করতে পেরেছে। অব্যবহৃত থেকে গিয়েছে ৪৮ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা!
আবার কেন্দ্রের দেওয়া অংশের যতটুকু খরচ করা গিয়েছে তার মধ্যে রাজ্য ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে পেরেছে মাত্র ২৭ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকার। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা ২০১৯-২০ আর্থিক বর্ষের। ওই বছর কেন্দ্রের দেওয়া ১৮ কোটি ৪৯ লক্ষের মধ্যে কোনও টাকাই খরচ করতে পারেনি রাজ্য।
২০২০-২১ সালে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের জন্য কোনও টাকা দেওয়াও হয়নি ফলে খরচের প্রশ্ন নেই। ২০১৮-১৯ সালে কেন্দ্র দিয়েছিল ২২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে মাত্র ৫ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা খরচ করেছে রাজ্য। তার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে পেরেছে মাত্র ১২ কোটি টাকার।
সরকারি আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, টাকা খরচ না-হওয়ার পিছনে অনেক কারণ আছে। যেমন, কোভিড-কালে আয়ুষ পদ্ধতির চিকিৎসাকে রাজ্যে গুরুত্ব না-দিয়ে বেশির ভাগ আয়ুষ চিকিৎসককে দিয়ে বিভিন্ন আইসোলেশন সেন্টারে রোগীর জ্বর আর অক্সিজেনের মাত্রা
মাপানো হচ্ছে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে ২০টি আয়ুষ ওয়েলনেস সেন্টার হওয়ার কথা। কিন্তু একটাও হয়নি। আয়ুষ গ্রাম খুবই কম হয়েছে। কল্যাণীতে রাজ্যের একমাত্র সরকারি আয়ুর্বেদ ওষুধ তৈরির ফার্মেসি ধুঁকছে। দীর্ঘদিন রাজ্যের প্রচুর আয়ুর্বেদিক ডিসপেন্সারি বন্ধ হয়ে ছিল। আলিপুরদুয়ারে ও পূর্ব মেদিনীপুরে ইন্টিগ্রেটেড আয়ুষ হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল করে দিয়ে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy