গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের গতিপ্রকৃতির দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন আবহবিদেরা। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে হাওয়া অফিসের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ওড়িশার পারাদ্বীপের ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে নিম্নচাপটি। বাংলার সাগরদ্বীপের ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে এটি।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ক্রমশ পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। আরও ঘনীভূত হয়ে বুধবার সকালেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে নিম্নচাপটি। বুধবার দুপুরে এটি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করতে পারে। ফলে উত্তাল থাকবে সমুদ্র। এখনও অবধি নিম্নচাপটির গতিপ্রকৃতি দেখে আবহবিদদের অনুমান, বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ওড়িশার পুরী এবং এই রাজ্যের সাগরদ্বীপের মধ্যবর্তী কোনও অংশ দিয়ে স্থলভাগে ঢুকতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। ‘ল্যান্ডফলের’ সময় এটির সর্বাধিক গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টা ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার সর্বাধিক গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১২০ কিমি।
বঙ্গোপসাগরের একাংশ এখন থেকেই উত্তাল হতে শুরু করেছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার থেকেই পূর্ব ও মধ্য বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সমুদ্র আরও উত্তাল হবে। বাংলা এবং ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ইতিমধ্যে দুই রাজ্যের উপকূলে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। দুর্যোগের প্রভাব পড়তে পারে বাংলার দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা ও বাঁকুড়া— এই আট জেলায়।
বুধবার দুই ২৪ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। বৃহস্পতিবার বৃষ্টি বাড়তে পারে। ওই দিন এবং শুক্রবার হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং উপকূলবর্তী দুই জেলা পূর্ব মেদিনীপুর আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অতি ভারী বৃষ্টির জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব না পড়লেও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পুরে দুই দিনাজপুর এবং মালদহে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় আগামী শুক্রবার পর্যন্ত মৎসজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের জেরে বাংলা এবং ওড়িশা, দুই রাজ্যেই ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতর সোমবারই কৃষকদের জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। ধানের ৮০ শতাংশ দানা পেকে গেলে ফসল দ্রুত কেটে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কাটা ধান জমিতে ফেলে না রেখে দ্রুত খামারে তুলে নেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে কৃষকদের। পেঁপে, কলা, বিভিন্ন সব্জি, পানের বরজ এবং ডাল শস্যের জমিগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি-না হওয়া পর্যন্ত কোনও রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
ওড়িশাতেও গঞ্জাম, পুরী, জগৎসিংহপুর, কেন্দাপাড়া, ভদ্রক, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, ঢেঙ্কানল, জজপুর, আঙ্গুল, খুরদা, নয়াগড় এবং কটকে দুর্যোগের শঙ্কা রয়েছে। আগাম সতর্কতা হিসাবে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওড়িশার এই ১৪ জেলায় সব স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। সৈকত শহর পুরী মঙ্গলবারের মধ্যেই পর্যটকশূন্য করা দেওয়া হচ্ছে। ভিন্রাজ্য থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক ও পুণ্যার্থীদের বুধবারের আগেই পুরী ছাড়ার জন্য বলে দিয়েছে ওড়িশা সরকার। বৃহস্পতি ও শুক্রবার কোনও পর্যটককে পুরী ভ্রমণে না আসার পরামর্শও দিয়েছে সে রাজ্যের সরকার।
দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। ইতিমধ্যে বাংলার জন্য এনডিআরএফের ১৪টি দল এবং ওড়িশার জন্য ১১টি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী দুর্যোগকবলিত এলাকায় তাদের মোতায়েন করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy