অর্পিতা মণ্ডল নিজস্ব চিত্র
বিল মেটাতে না পারায়, বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। আঁধার সে ঘরে আলো জ্বালালেন কৃতী কন্যা। বাঁকুড়ার সোনামুখীর পাথরমোড়ার অর্পিতা মণ্ডল উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান পাওয়ার পরে, তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ ফেরাতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। অভাবের সংসারে মায়ের সঙ্গে বিড়ি বাঁধা, ছাগল চরানোর ফাঁকে পড়ে পঞ্চম হয়েছেন বাঁকুড়ারই গোয়েঙ্কা বিদ্যায়তনের ছাত্র সোমনাথ পাল।
পাথরমোড়ার পশ্চিমপাড়ায় দু’কামরার মাটির বাড়িতে বাবা-মা-দাদার সঙ্গে বাস অর্পিতার। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবা সঞ্জীব মণ্ডল মানসিক ভারসাম্যহীন। মা রাজশ্রী বাড়ির কাজকর্ম করেন। অভাবের কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে, আর পড়া হয়নি দাদা অমিতের। বেসরকারি সংস্থায় সদ্য চাকরি পেয়েছেন তিনি। অর্পিতার কাকা চণ্ডীদাস মণ্ডল কাপড়ের ব্যবসা করেন। তাঁর সাহায্যে সংসার চলে। ভাইঝির পড়াশোনার খরচও তিনি চালান।।
পাথরমোড়া হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রী অর্পিতা জানান, বছরখানেক আগে, বিদ্যুতের বিল বাকি পড়ায় সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। জ্যাঠা বুদ্ধদেব মণ্ডলের বাড়িতে দিনে ইমার্জেন্সি আলো চার্জ দিয়ে, রাতে সে আলোয় পড়তেন অর্পিতা। ৪৯৫ নম্বর পেয়ে পাশ করে তিনি বলছেন, ‘‘শিক্ষকদের সাহায্য ভোলার নয়।’’ এ দিন মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) অনুপকুমার দত্ত স্কুলে গেলে, অর্পিতা বিদ্যুতের সমস্যা জানান। মহকুমাশাসক তখনই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিসে ফোন করে সংযোগ জুড়তে বলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অর্পিতাকে আমরা সাহায্য করব।’’ মা রাজশ্রী বলেন, “মেয়েকে বলতাম, অভাবের সংসারে পড়াশোনা করে কী হবে! কিন্তু ওর শিক্ষাই ঘরে আলো আনল।’’
বাঁকুড়ার তমালতলার বাসিন্দা সোমনাথের বাবা নন্দ পাল আনাজ ব্যবসা করতেন। বছর চারেক আগে, এক দুর্ঘটনার পরে শয্যাশায়ী। মা মুক্তা পাল বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘‘দু’দিনে এক হাজার বিড়ি বেঁধে ১৭০ টাকা পাই। তাতে চার জনের সংসার চলে।’’ সোমনাথ ও তার বোন বর্ষাও মাকে কাজে সাহায্য করেন। সোমনাথের বাড়তি দায়িত্ব, ছাগল চরানো। কলা বিভাগে ৪৯৪ নম্বর পেয়ে সোমনাথ বলেন, ‘‘বিজ্ঞান পড়ার ইচ্ছে থাকলেও, অভাবের জন্য হয়নি।’’ ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করতে চান, জানাচ্ছেন দুই কৃতী।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy