Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal State Election Commission

Election Commission: দু’বছরেই উল্টো ভোট-সিদ্ধান্ত, প্রশ্নে কমিশনও

কমিশন সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, রাজ্য সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী ভোট প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা হয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৩১
Share: Save:

মাত্র দু’বছর আগের কথা। কোভিডের প্রথম ঢেউ আছড়ে পড়ার আতঙ্কে তখন রাজ্যে যাবতীয় পুরভোট পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অথচ এখন, ঝড়ের গতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির এই সময়েও চার পুর-নিগমের ভোট পিছোনোর কোনও প্রস্তাব তাদের মুখে

নেই! পর্যবেক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, ‘ভোটে কোভিড-বিধি যে চুলোয় যায়, বারবার তা প্রমাণিত। তা হলে খোদ মুখ্যমন্ত্রী আগামী ১৫ দিনকে কঠিন বলে চিহ্নিত করার পরেও ২২ জানুয়ারি এমন ঝুঁকি কেন?’ অনেকের কটাক্ষ, ‘একই ভোটের এমন ভাগ্যবদল কি বিধানসভা নির্বাচনে ফলের দৌলতে?’ এ নিয়ে সরব বিরোধীরাও।

২০২০ সালের ১৬ মার্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, “সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাঁদের বক্তব্যে করোনার প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজ্য সরকার এবং সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরে আপাতত নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।”

ওই দিনই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাসও ক্যামেরার সামনে জানিয়েছিলেন, “কমিশন এবং রাজ্য সরকারের ভোট করার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি খুবই চিন্তার। চার দিকে ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। একসঙ্গে অনেক লোকের আসা এখন নিষিদ্ধ। আমরা এখন এটাকে পিছিয়ে দিয়েছি কোভিড পরিস্থিতির কারণে।”

বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, যে দিন কমিশন পুরভোট পিছিয়ে দিয়েছিল, সেই দিন রাজ্যে এক জন বাসিন্দাও কোভিড পজ়িটিভ ছিলেন না। বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের বিচ্ছিন্নবাসে রাখা হচ্ছিল পর্যবেক্ষণের জন্য। সে দিন পর্যন্ত ৬২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু কারও কোভিড ধরা পড়েনি। ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৭০ জনের নমুনা পরীক্ষার পরে পজ়িটিভ ছিলেন মাত্র এক জন। সেখানে বৃহস্পতিবার সংক্রমণ ১৫ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ এখন আর পরিস্থিতি প্রতিকূল বলে মনে হচ্ছে না কমিশনের! বৃহস্পতিবার পুরভোট নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, তা হয়নি। বেশির ভাগ সময় কেটেছে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়েছে, আজ, শুক্রবার পুরভোট নিয়ে শুনানি হবে।

এই অবস্থায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বামেরা চিঠি দিয়ে বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিক কমিশন। সর্বদল বৈঠক ডাকা হোক। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “রাজ্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। তাদের উপরে নিশ্চয়ই উপর থেকে তাড়াতাড়ি ভোট করানোর চাপ আছে। ...আমরা কমিশনের উপরেই বিষয়টি ছাড়ছি। ... আমরা প্রস্তুত। ভোটের জন্য করোনা বাড়লে, দায় রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের।”

কমিশন সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, রাজ্য সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী ভোট প্রস্তুতি শুরু করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। কিন্তু ভোট পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকার কমিশনকে এখনও প্রস্তাব দেয়নি। বিরোধীদের বক্তব্য, স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কমিশনই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমন নেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালে। কমিশনের এক কর্তার আশ্বাস, “পরিস্থিতি নিয়মিত নজরে রয়েছে। সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এ দিনই ভোটমুখী জেলাগুলির প্রশাসনকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে কমিশন জানিয়েছে, বাইরের বড় সভায় জমায়েত ৫০০-র পরিবর্তে সর্বাধিক ২৫০ জন হবে। প্রচারসভা বা মিছিলের বদলে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারেও বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। বিরোধী এবং জেলা প্রশাসনগুলির একাংশের অবশ্য বক্তব্য, এখন ২৫০ জনের জমায়েতও ঝুঁকিপূর্ণ। কলকাতা পুরভোট বা আসন্ন ভোটের মনোনয়ন পেশ এবং প্রচারে হামেশাই বিধিভঙ্গের নজির সামনে আসছে। তাই লোকসংখ্যা আড়াইশোয় সীমাবদ্ধ থাকবে কিংবা তাঁরা মাস্ক পরে ও দূরত্ব-বিধি মেনে সভা করবেন, এমন সম্ভাবনা বেশ অল্প।

বিধানসভা ভোটের সময়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, বড় প্রচারসভায় আসা প্রত্যেকের

মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। সভায় ঢোকার আগে প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা মাপা দরকার। কিন্তু সে সব কার্যত খাতায়-কলমেই ছিল বলে অভিযোগ স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের অনেকের। বস্তুত, সেই ভোটের পরে সংক্রমণের রেখচিত্রও ঊর্ধ্বমুখী হয়। প্রশ্ন, এ বার যে তা হবে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?

রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্র অবশ্য এ দিনই জেলা প্রশাসনগুলিকে মনে করিয়ে দিয়েছে, কোভিড-বিধির লঙ্ঘন হলে, তাকে গুরুতর অপরাধ ধরে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দল বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অতিমারি আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে হবে।

এ দিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে সাংবাদিক বৈঠকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পরিস্থিতি তেমন হলে, নিয়ন্ত্রণবিধি আরও কঠোর

ভাবে প্রয়োগের কথা ভাবতে হবে। এ দিনই জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে কন্টেনমেন্ট ও মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন যথাযথ ভাবে প্রয়োগের উপরে জোর দিয়েছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। নৈশ নিয়ন্ত্রণবিধি যাতে কঠোর ভাবে পালিত হয়, সে ব্যাপারেও জেলা প্রশাসনগুলিকে সতর্ক করেছেন তিনি। বিরোধী শিবিরে প্রশ্ন, কোভিড-পরিস্থিতি যেখানে এত সঙ্গিন, সেখানে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার কথা মুখে নেই কেন?

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal State Election Commission COVID-19 Coronavirus Pandemic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy