বাঁকুড়ার সোনামুখীতে ‘বহিরাগতদের’ তাড়া করলেন স্থানীয় মহিলারা। রবিবার। ছবি: অভিজিৎ অধিকারী
হাতে উঁচিয়ে ধরা লাঠি। মুখে হুঙ্কার, ‘‘বেরো এখান থেকে!’’
রুদ্র মূর্তিতে বেশ কিছু মহিলা-সহ এলাকার জনা চল্লিশ বাসিন্দার প্রতিরোধের জেরে ‘বহিরাগত’দের এলাকাছাড়া হওয়ার এমন দৃশ্যের সাক্ষী রবিবার, পুরভোটের দিনের সোনামুখী। বাঁকুড়ার এই পুরসভার অন্তত দু’টি ওয়ার্ডে শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এলাকায় ‘বহিরাগতদের’ দিয়ে ‘দাপাদাপি’ করানোর। তবে অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতৃত্ব।
সোনামুখীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক জন মহিলার দাবি, সকাল থেকে এলাকায় দেখা যাচ্ছিল, মুখে মাস্ক ও মাথায় কাপড় বাঁধা কিছু ‘বহিরাগত’ যুবককে। ব্যোমশঙ্কর হাইস্কুলের বুথের সামনে কিছু ভোটারকে তারা ভয় দেখানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এর পরেই, লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে জনতা তাড়া করে ওই যুবকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলাদের দাবি, ‘‘আমরা এলাকার বাসিন্দা। শান্তিতে ভোট দিতে চাই। কিছু বাইরের লোক গোলমাল পাকাতে চেষ্টা করছিল। পুলিশ কিছু করেনি। বাধ্য হয়ে লাঠি হাতে ওদের তাড়া করি।’’
জনা পাঁচেক ‘বহিরাগত’ যুবক সোনামুখীরই ১১ নম্বর ওয়ার্ডে এ দিন দুপুরে একটি গাড়ি নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা ধাওয়া করলে, গাড়ি নিয়ে যুবকেরা পালানোর চেষ্টা করে বলে দাবি। কিছুটা দূরে গিয়ে বিদ্যুতের পোস্টে ধাক্কা দেয় গাড়িটি। ওই যুবকেরা পালায়। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, যুবকেরা পালানোর সময়ে গুলিও ছুড়েছে। সে সময় তাদের মারধরে এক জন আহত হন। পুলিশের অবশ্য দাবি, গাড়ির ধাক্কায় জখম হন ওই ব্যক্তি। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) কুতুবউদ্দিন খানের বক্তব্য, ‘‘গুলি চালানোর চিহ্ন মেলেনি। গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে তদন্ত চলছে।’’ বহিরাগত আটকাতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও মানতে চাননি তিনি।
সোনামুখীর সিপিএম নেতা মনোজ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘কয়েক দিন ধরেই বহিরাগতেরা সোনামুখীতে ঘোরাফেরা করছিল। মানুষ রুখে দাঁড়ানোয় পালিয়েছে।’’ বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহেরও দাবি, ‘‘শাসক দল বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক এনেছিল। তবে সাধারণ মানুষ প্রতিহত করছেন।’’ তবে বহিরাগত আনার অভিযোগ উড়িয়ে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বাবলি গোস্বামীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যদি তেমন লোকজন এসে থাকে, তাদের কাউকে আটকে রাখা হল না কেন!’’ তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অলক মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। বিরোধীদের বলা বহিরাগত-তত্ত্ব একেবারে মিথ্যা।’’
পূর্ব বর্ধমানের গুসকরায় ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিপুর গোকুলসুন্দরী প্রাথমিক স্কুলে এ দিন তৃণমূল কর্মী ও পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ভোটারদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। এলাকাবাসীর দাবি, ‘‘ভোট পড়ে গিয়েছে জানিয়ে পুলিশ বুথ থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছিল।’’ অভিযোগ, জটলা থেকে পুলিশকে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। পরে, পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের সরায়। বিরোধীদের অভিযোগ, মানুষ প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও, তা ‘দমন’ করা হয়েছে। ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) সৌরভ চৌধুরীর দাবি, ‘‘পুলিশ অবৈধ জমায়েত সরিয়েছে। কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।’’
বীরভূমের দুবরাজপুরে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দুপুরে ঝড়-বৃষ্টির সময়ে বুথে ঢুকে তাঁদের এজেন্টদের বার করে দিয়ে তৃণমূলের লোকজন ছাপ্পা ভোট দিতে শুরু করে বলে অভিযোগ বিজেপি এবং সিপিএমের। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা হাতের সামনে যা পান, তা নিয়ে ছুটে আসেন। তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীর ঘর, দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের বড় বাহিনী গিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। ছাপ্পা-ভোট দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, বিরোধীরা জোর করে অশান্তি পাকিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy