পুরুলিয়ায় প্রথম বার ভোট দিতে আসা কলেজ ছাত্রী স্নিগ্ধা সরকারের কথায়, ‘‘প্রচারের সময়েও নানা পক্ষের প্রার্থীদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখেছি। আজও দেখলাম। ভাল লাগে দেখতে।’’ বছর চুরাশির প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের ইচ্ছে, ‘‘এমন সম্পর্ক বজায় থাক।’’
পুরুলিয়ার শান্তময়ী গার্লস হাইস্কুলের বুথে নানা দলের প্রার্থীদের আড্ডা। ছবি:রথীন্দ্রনাথ মাহাতো
ভোট এক ব্যাপার। সম্পর্ক আর এক।
ভোট-বাক্সে ভাগ্য নির্ধারণ চলাকালীন হোক বা ভোটের পাট মেটার পরে, বুথ চত্বর বা কিছুটা দূরে গল্পে মজেছেন, এক সঙ্গে খাচ্ছেন নানা পক্ষের প্রার্থীরা রবিবার, পুরভোটের দিন এমন ছবি দেখা গেল বহু জেলায়।
বীরভূমের বোলপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বোলপুর কলেজের বুথে এ দিন সকালে পাশাপাশি বসে গল্প করতে দেখা যায় ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বিমলাশিস ভট্টাচার্য এবং সিপিএম প্রার্থী প্রবীর ইসলাম চৌধুরীকে। দু’জনেরই দাবি, ভোটের জন্য ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক নষ্ট করার মানে হয় না।
বুথ থেকে খানিক দূরে পাশাপাশি বসেছিলেন বিজেপি, তৃণমূল এবং সিপিএমের মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বীরা। শাসক দলের তরফে টিফিন পৌঁছলো তিন জনের কাছেই। নদিয়ার নবদ্বীপের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সৌহার্দ্যের এমন ঘরানার ছবি ঘুরে-ফিরে এসেছে অন্যত্রও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডই হোক, বা উত্তর ২৪ পরগনার টাকি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড।
পুরুলিয়ার ঝালদার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বুথ থেকে কিছুটা দূরে, চেয়ার পেতে পাশাপাশি বসে আড্ডায় মজেছিলেন বিজেপি প্রার্থী সুজাতা দরিপা, তৃণমূল প্রার্থী সুষমা পাঠক ও নির্দল প্রার্থী শিলা চট্টোপাধ্যায়। পুরুলিয়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতির্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই এগিয়ে যান বিজেপি প্রার্থী সত্যজিৎ অধিকারী। ভোট কেমন চলছে, আলোচনা শুরু হয় দু’জনের। যোগ দেন কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন দাসও। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের ময়দানে আমরা প্রার্থী। তবে জ্যোতির্ময়বাবু আমার শিক্ষক।’’ জ্যোতির্ময়ের কথায়, ‘‘আমরা সহ-নাগরিক, এটা ভুললে চলবে না।’’ পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে গার্লস হাইস্কুলের সামনে এক বেঞ্চে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেল তৃণমূল প্রার্থী প্রণব দেওঘরিয়া, বিজেপি প্রার্থী বাণেশ্বর মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস প্রার্থী রমাকান্ত দত্ত ও সিপিএম প্রার্থী দীনবন্ধু শিকদারকে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘রাজনীতির বাইরে, ব্যক্তিগত সম্পর্কও তো রয়েছে।’’
বাঁকুড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক বুথে নির্দল প্রার্থী দিলীপ আগরওয়াল, সিপিএম প্রার্থী রাজু বাউরি, তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বনাথ সিংহ ও বিজেপি প্রার্থী দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায় ছবি তোলানোর জন্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়েন। প্রায় একই ঘটনা ঘটল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে হাসি মুখে পাশাপাশি ছবি তোলালেন বিজেপি,বামফ্রন্ট ও তৃণমূল প্রার্থী। পুরুলিয়ার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে শান্তময়ী গার্লস হাইস্কুলের বুথেও গল্প করতে করতেই পাশাপাশি ছবি তোলান বাম, বিজেপি এবং তৃণমূলের প্রার্থীরা।
পূর্ব বর্ধমানের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী— তৃণমূলের শেখ নুরুল আলম ওরফে সাহেব ও সিপিএমের প্রার্থী তথা তাঁর শিক্ষক লুৎফর রহমান মুন্সি এ দিন দুবরাজদিঘি প্রাথমিক স্কুলের বুথে পরস্পরকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন। কাটোয়া বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে পাশাপাশি বসে চা খান ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী মাসুদা খাতুন ও সিপিএম প্রার্থী মনজ়িদা খাতুন। গুসকরা শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী রেখা দলুই। তাঁকে দেখে এগিয়ে যান সিপিএম প্রার্থী দিলীপ সাহা। কুশল বিনিময়ের পরে দু’জনেই বলেন, “কোথায়, কী হচ্ছে বলতে পারব না। তবে আমাদের ওয়ার্ডে সৌজন্য বজায় রাখার ধারা রয়েছে।’’
পুরুলিয়ায় প্রথম বার ভোট দিতে আসা কলেজ ছাত্রী স্নিগ্ধা সরকারের কথায়, ‘‘প্রচারের সময়েও নানা পক্ষের প্রার্থীদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখেছি। আজও দেখলাম। ভাল লাগে দেখতে।’’ বছর চুরাশির প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়ের ইচ্ছে, ‘‘এমন সম্পর্ক বজায় থাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy