ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ করতে পাঁচ বছরে অন্তত ৩০ ঘণ্টার ‘ক্রেডিট আওয়ার’ বাধ্যতামূলক করল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। বিভিন্ন সেমিনার, প্রশিক্ষণ, সম্মেলন বা আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে ওই পয়েন্ট সংগ্রহ করতে হবে। তবে এর পিছনে কাউন্সিলের আয় বাড়ানোর মতলব রয়েছে বলেই কিছু চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগ। ডাক্তাররা জানান, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি)-র নির্দেশিকা অনুযায়ী পদোন্নতি এবং গবেষণার ক্ষেত্রে নানা সেমিনার, তালিমে ন্যূনতম ৩০ ঘণ্টার ‘ক্রেডিট আওয়ার পয়েন্ট’ দরকার হয়।
চিকিৎসকদের সংগঠনগুলির দাবি, রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণে তা অন্যতম শর্ত করা হলে, প্রত্যন্ত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে পরিষেবা দেওয়া চিকিৎসকদেরই সমস্যা হবে। প্রধানত কলকাতায় হওয়া সম্মেলন বা প্রশিক্ষণ শিবিরে বার বার যোগ দেওয়া তাঁদের জন্য সোজা নয়। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সম্মেলন, প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সব ডাক্তারেরইই উচিত। কিন্তু তা রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণের জন্য বাধ্যতামূলক করা ঠিক নয়।”
চিকিৎসকেরা জানান, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে সেখানে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক পিছু ১০০ টাকা করে মেডিক্যাল কাউন্সিলে জমা দিতে হয় আয়োজকদের। পাঁচ বছরে ৩০ ঘণ্টার ক্রেডিট আওয়ার পয়েন্ট সংগ্রহে বছরে ছ’ঘণ্টা করে সেমিনার, প্রশিক্ষণ, সম্মেলন বা আলোচনাসভায় অংশ নিতে হবে এক জন চিকিৎসককে। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন জানাচ্ছে, বছরে গড়ে দু’টি করে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে অংশ নিলে ওই ছ’ঘণ্টার পয়েন্ট সংগ্রহ সম্ভব। তাতে চিকিৎসক পিছু বছরে ২০০ টাকা পাবে কাউন্সিল। অর্থাৎ ৬০ হাজার ডাক্তার থেকে বছরে এক কোটি ২০ হাজার টাকা আয় হবে।
‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নিয়ে স্বচ্ছ, বিজ্ঞানভিত্তিক নির্দেশিকা আগে তৈরি হোক। রাজ্য সরকার ও মেডিক্যাল কাউন্সিলকেই সব ডাক্তারের জন্য শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।”
অন্য দিকে, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি বিধায়ক-চিকিৎসক সুদীপ্ত রায়ের দাবি, “চিকিৎসকদের উন্নতির জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)