ফাইল চিত্র
দেশের অর্থনীতি এখনও নড়বড়ে। রাজস্ব আদায় অঢেল নয়। তাই খরচও মেপে। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবার গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে (বিশেষত কোভিড পরবর্তী অধ্যায়ে) সেই ‘সীমিত সামর্থ্যের’ মধ্যেও আগামী অর্থবর্ষে ওই খাতে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বাজেটে ঘোষণা করল রাজ্য। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বরাদ্দ বেড়েছে ৫৩০ কোটি।
এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েও স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের প্রশ্ন, ‘দুয়ারে সরকার’-এর প্রতিটি শিবিরে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে শামিল হওয়ার উৎসাহ যে ভাবে চোখে পড়ে, যে ভাবে বাড়ছে উপভোক্তার সংখ্যা, তাতে এই বরাদ্দ বৃদ্ধিতে চিঁড়ে ভিজবে তো? এ দিন বিধানসভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাজেট পড়া চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীও। তাঁর দাবি, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও, চিকিৎসা পেতে কারও সমস্যা হবে না। যে পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা-ও করা হবে।’’
২০২১ সালের জুলাইয়ে তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকার চলতি আর্থিক বছরের (২০২১-২২) বাকি ন’মাসের জন্য যে বাজেট পেশ করেছিল, তাতে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ছিল ১৬,৩৬৮.৩৮ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৭,৫৭৭ কোটি। আর স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বরাদ্দ ১৯৭০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এ বার হচ্ছে ২৫০০ কোটি। এই বৃদ্ধি নিয়েই সংশয় এবং মন্ত্রীর আশ্বাস।
বাজেট বিবৃতি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২.২ কোটি পরিবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন। চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৪.৮৫ লক্ষ জনকে ওই প্রকল্পের সুবিধা দিতে ৩,২১২.৭২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তার পরেও এই প্রকল্পের আওতায় হাসপাতালে বিল বকেয়া থাকার অভিযোগ উঠেছে। অনেক সময়ে বিলের টাকা সময়ে না পাওয়ার আশঙ্কায় রোগী ভর্তিই করতে চায়নি হাসপাতাল। এই প্রেক্ষিতে পূর্ব ভারতে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়ার কথায়, ‘‘বরাদ্দ বৃদ্ধি অবশ্যই স্বাগত। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে এখন রোগীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে এই টাকা পর্যাপ্ত বলে মনে হয় না। কিছুটা ঘাটতি হয়তো থেকেই যাবে। ফলে বকেয়া (বিল) নিয়ে চিন্তা রয়ে যাচ্ছে। তবে বকেয়া মেটানোর চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।’’ তাঁর বক্তব্য, গত জুলাইয়ে ন’মাসের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ১৯৭০ কোটি। অর্থাৎ, মাসে গড়ে ২১৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবর্ষে যে বরাদ্দ, তাতেও প্রতি মাসের হিসাব প্রায় একই থাকছে। অথচ বাড়ছে উপভোক্তার সংখ্যা।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবা পুরোটাই বিমা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বরং ওই টাকা পরিকাঠামো উন্নয়নে ঢেলে আরও বেশি নিখরচায় চিকিৎসা দেওয়া উচিত ছিল।’’ করোনার প্রকোপ খানিকটা কমার প্রতিফলনও বাজেটে স্পষ্ট। রাজ্যের হিসাব অনুয়ায়ী, অতিমারির সঙ্গে লড়তে তাদের এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৯১৩ কোটি টাকা। জুলাইয়ে কোভিড ব্যবস্থাপনায় ১৮৩০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছিল। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭৬০ কোটি। এ দিন অবশ্য কোভিডের জন্য নতুন করে আলাদা বরাদ্দ আর হয়নি।
নতুন ৬টি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি হওয়ায় এমবিবিএসে ৬০০ আসন বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়েছে বাজেটে। স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের দাবি, অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক-চিকিৎসকদের বদলি করে নিয়ে গিয়ে নতুন কলেজ খোলা হচ্ছে। কিন্তু তাতে শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি মিটছে না। রাজ্যের অবশ্য বক্তব্য, স্বাস্থ্যে বরাদ্দ তৃণমূল সরকারের আমলে বেড়েছে যথেষ্ট। ২০১০-১১ সালে ওই খাতে ৩,৫৮৪ কোটি তুলে রাখা হয়েছিল। ২০২১-২২ সালে তা বেড়ে হয় প্রায় ছ’গুণ। মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষ কেন্দ্র, ক্যানসার চিকিৎসা হাব, নতুন ট্রমা কেয়ার ইউনিট-সহ নানা পরিকাঠামো উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে বাজেটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy