আজ, বুধবার থেকে ছুটি পড়ে যাচ্ছে সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সমস্ত স্কুলে। কিন্তু গরমের ছুটির পরে কবে আবার স্কুল খুলবে, সেই ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি শিক্ষা দফতর। ফলে, শিক্ষকেরাও এ নিয়ে অন্ধকারে। তাঁদের মতে, এ ভাবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটি দিলে পঠনপাঠনের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বিশেষ করে, আগামী বছর যারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে, তাদের অবস্থা বিশ বাঁও জলে। উচ্চ মাধ্যমিকের নতুন নিয়মে তাদের মূল্যায়ন হবে তৃতীয় ও চতুর্থ সিমেস্টারে। তৃতীয় সিমেস্টার সেপ্টেম্বরে হওয়ার কথা। অর্থাৎ, সময় বেশি নেই। এরই মধ্যে অনির্দিষ্ট কালের জন্য গরমের ছুটি পড়ে গেল। এ দিকে, তারা এখনও হাতে বাংলা পাঠ্যপুস্তকই পায়নি।
সরকারি স্কুলের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গরমের ছুটি পড়ার কথা ছিল ১২ মে। সেই ছুটির পরে স্কুল খোলার কথা ছিল ২৩ মে। কিন্তু গত ৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে ঘোষণা করে দেন, তীব্র গরম পড়ায় গরমের ছুটি পড়বে ৩০ এপ্রিল থেকে। প্রশ্ন ওঠে, এত আগে থেকে কী ভাবে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হল? তা ছাড়া, স্কুল খুলবেই বা কবে? পরের দিনই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দেন, আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি দেখে স্কুল কবে খুলবে, তাড়াতাড়ি জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় এক মাস কেটে যাওয়ার পরেও জানানো হয়নি, গরমের ছুটির পরে স্কুল কবে খুলবে। শিক্ষকদের একাংশের মতে, কয়েক দফা ঝড়-বৃষ্টির পরে আবহাওয়া তো এখন আগের থেকে কিছুটা হলেও সহনীয়। তা হলে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হচ্ছে কেন? এর ফলে ক্ষতি হবে পড়ুয়াদের।
‘শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা জিজ্ঞাসা করছে, কবে স্কুল খুলবে? আমাদের কাছে এর কোনও উত্তর নেই। শিক্ষা দফতর স্কুল নিয়ে যে মনোভাব দেখাচ্ছে, তাতে সরকারি স্কুলগুলি আরও বেশি করে রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। এ ভাবে চললে সরকারিস্কুল পড়ুয়াদের হারাবে। একেই তো স্কুলগুলিতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। তার উপরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটি। কোনও ক্লাসেই শিক্ষকেরা পাঠ্যক্রম শেষ করাতে পারছেন না। পড়ুয়ারা অনেকেই বেসরকারি স্কুলে চলেযেতে চাইছে।’’
শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, সব থেকে খারাপ অবস্থা দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। তাদের হাতে এখনও পৌঁছয়নি বাংলা পাঠ্যবই। একাদশ, দ্বাদশের বাংলা ও ইংরেজি বই দেয় শিক্ষা দফতর। বাংলার শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ তাদের ওয়েবসাইটে বাংলা পাঠ্যবই আপলোড করেছে। সেখান থেকে ডাউনলোড করেতার প্রিন্ট-আউট নিয়ে পড়ুয়াদের পড়তে হচ্ছে।
ইংরেজির শিক্ষকেরাও জানাচ্ছেন, ইংরেজি বই পড়ুয়ারা একাদশ শ্রেণিতে হাতে পেলেও তাতে কিছু নতুন পরিচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে। সেই নতুন অংশটি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে পড়তে হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, কেন পরিমার্জিত সংস্করণ পড়ুয়ারা হাতে পেল না?
চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গরমের ছুটির মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের তৃতীয় সিমেস্টারের পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাস করাতে বলা হয়েছে। আর বাংলা বইয়ের ছাপার কাজ চলছে। প্রয়োজনে গরমের ছুটির মধ্যেই এক দিন পড়ুয়াদের স্কুলে ডেকে বই দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)