সব্যসাচী ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
হোটেলে নাবালিকাদের নিয়ে গিয়ে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে হাওড়ায় সব্যসাচী ঘোষ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, তিনি বিজেপির নেতা। দলের হাওড়া সদর সাংগঠনিক জেলার কিসান মোর্চার সম্পাদক। সন্দেশখালিকাণ্ডের আবহে এ নিয়ে শাসকদল তৃণমূল আসরে নামতেই বিজেপির তরফে শুক্রবার জানিয়ে দেওয়া হল, কোনও পদে থাকা তো দূরের কথা, ধৃতের সঙ্গে দলের কোনও যোগই নেই। যদিও চলতি মাসে হাওড়া সদরে বিজেপি পদাধিকারীদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে নাম ছিল সব্যসাচীর। সব্যসাচীকে এর আগে বিজেপি নেতা বলেই জানিয়েছিলেন দলের হাওড়া সদরের সম্পাদক ওমপ্রকাশ সিংহ। কিন্তু শুক্রবার হাওড়া সদর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্য দাবি করেন, দলের সঙ্গে সব্যসাচীর কোনও সম্পর্ক নেই।
দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে সব্যসাচীর গ্রেফতারি নিয়ে শাসকদল সুর চড়াতে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির দাবি, সন্দেশখালিতে ধর্ষণ ও অত্যাচারের অভিযোগ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই বিজেপিকে নিয়ে কুৎসা করছে রাজ্য পুলিশ। শুক্রবার হাওড়া সদর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি রমাপ্রসাদ এক বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘‘সব্যসাচী দলের কোনও পদে নেই। দলের সঙ্গে তাঁর কোনও রকমের কোনও যোগ নেই। এই বিষয়টি রাজ্য বিজেপি স্পষ্ট করে দিতে চায়।’’ কিন্তু গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিজেপি নেতৃত্ব যে পদাধিকারীদের তালিকা প্রকাশ করেছিল, তাতে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষাকারী সেলের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল সব্যসাচীকে। ঘটনাচক্রে, সেই তালিকাতেও সই ছিল রমাপ্রসাদের।
বৃহস্পতিবার সব্যসাচীকে দলীয় কর্মী বলেই বিবৃতি দিয়েছিলেন বিজেপির হাওড়া সদরের সম্পাদক ওমপ্রকাশ সিংহও। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সন্দেশখালির ঘটনা থেকে দৃষ্টি ফেরানোর জন্য এই ধরনের ঘটনা হচ্ছে। সব্যসাচী সরাসরি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কি না, তা নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে দেখুক পুলিশ। তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন, তবে দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং দলও এ ব্যাপারে আলাদা করে তদন্ত করবে। তবে বিরোধী দলের কর্মীদের পুলিশ হামেশাই মিথ্যে মামলায় জড়াচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’’ প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি গ্রেফতার হওয়ার কারণেই দল দূরত্ব রচনা করল?
শুক্রবারের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘সন্দেশখালিতে ধর্ষণ ও অত্যাচারের অভিযোগ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই বিজেপিকে নিয়ে কুৎসা করছে রাজ্য পুলিশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এবং পুলিশ-প্রশাসনের কাছে শুধু একটাই প্রশ্ন, শাহজাহান শেখ কোথায়? তারা আগে এই উত্তরটা দিক।’’
গোপন সূত্র মারফত খবর পেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় সাঁকরাইলের ধূলাগড়ে ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি হোটেল থেকে ১১ জনকে গ্রেফতার করে সাঁকরাইল থানার পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে ছিলেন হোটেলের মালিক এবং আন্দুলের বাসিন্দা সব্যসাচী। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এবং তাঁর দলবল দীর্ঘ দিন ধরে ওই হোটেলে নাবালিকা মেয়েদের এনে দেহব্যবসা চালাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে দু’জন নাবালিকা ও চার জন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাকেও উদ্ধার করে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে মানবপাচার এবং পকসো আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। মহিলাদের উদ্ধার করে পাঠানো হয় লিলুয়া হোমে। দু’জন নাবালিকাকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃতদের বৃহস্পতিবার হাওড়া আদালতের পকসো এজলাসে হাজির করানো হয়। ওই হোটেলের মালিক ও ম্যানেজারের সাত দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। বাকিদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy