Advertisement
E-Paper

নন্দীগ্রামে ‘বাবুল সিনড্রোম’, ভাষণও দিতে পারলেন না কৈলাস-শুভেন্দু

পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল, যে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিতে হল কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে।

বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা শুভেন্দুর। —নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষুব্ধদের শান্ত করার চেষ্টা শুভেন্দুর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:০৯
Share
Save

তৃণমূল ছেড়ে পদ্মশিবিরে যোগ দিয়েছেন আগেই। এখন লক্ষ্য, হাতের তালুর মতো চেনা নন্দীগ্রামেও পদ্ম ফোটানোর। তাই দলের ‘ওজনদার’ নেতাদের নিয়ে বিশাল জনসভার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু ইট-পাটকেল এবং ‘চোর’ স্লোগানে শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারীর সেই জনসভায় কার্যত দক্ষযজ্ঞ বেধে গেল। জনতাকে সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গেল গেরুয়া শিবিরকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল, যে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে মাইক বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিতে হল কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে। মাথায় উঠল তৃণমূল ছেড়ে আসা নেতাদের বিজেপি-তে ‘মেগা যোগদানের’ পালাও। এমনকি, বক্তৃতা না দিয়ে সভায় ইতি টানতে হল শুভেন্দুকেও!

নন্দীগ্রাম টাউনে ঢোকার মুখে শুক্রবার বিশাল জনসভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়, বাংলায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু— পালা করে সকলেরই বক্তৃতা করার কথা ছিল সেখানে। নন্দীগ্রামের মঞ্চে দিলীপ-শুভেন্দুকে পাশাপাশি দেখতেও মুখিয়ে ছিলেন অনেকে। কারণ, শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন তাঁর দাপটেই লোকসভা নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রাম থেকে ফিরে যেতে হয়েছিল দিলীপকে। শুক্রবার দিলীপকে মঞ্চে এনে সম্ভবত তারই ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতে চেয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু সভা শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়। মঞ্চে তখন সবে বক্তৃতা শুরু করেছেন কৈলাস। আচমকাই বাঁ-দিক থেকে এলোপাথাড়ি ঢিল পড়তে শুরু করে। সমস্বরে ‘চোর-চোর’ স্লোগানও উঠতে শুরু করে। আচমকা এমন ঘটনায় হতচকিত হয়ে যান বিজেপি নেতৃত্ব। দর্শকাসনে তো বটেই, মঞ্চের উপরেও শুরু হয়ে যায় ঠেলাঠেলি। দর্শকাসন থেকে হুড়মুড় করে মঞ্চের উপর উঠে আসতে শুরু করেন দলে দলে মানুষ। মঞ্চের সামনে রাখা চেয়ার তুলে আছাড় মারতে শুরু করেন অনেকে। বাঁশের তৈরি ব্যারিকেডও ভেঙে ফেলা হয়।

পরিস্থিতি দেখে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে দেন কৈলাস। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মঞ্চের একপাশে সরে আসেন তিনি। নির্দেশ দেন মাইক বন্ধ করে দেওয়ার। দর্শকদের ভয় পেতে দেখে সেইসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক। উচ্চৈস্বরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে শুরু করেন তিনি। মঞ্চে উপস্থিত বিজেপি নেতারাও তাতে শামিল হন। সেই ফাঁকেই দলের স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে গিয়ে টেনে টেনে মঞ্চ থেকে লোকদের নামাতে থাকেন তাঁরা। মাইক ধরে সকলকে শান্ত হওয়ার আর্জি জানান শুভেন্দুও। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটিয়ে নিতে হবে।’’ তাতেই ধীরে ধীরে উত্তেজনা কাটে। কিন্তু তত ক্ষণে সভার তাল কেটে গিয়েছে। তবে ভুল বোঝাবুঝির কথা বললেও গোটা ঘটনার জন্য নাম না করে তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় তোলেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘এত বছর সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। সিপিএম কিন্তু কখনও তৃণমূলের মিছিলে ঢিল ছোড়েনি! আর এখন পরিস্থিতি দেখুন। সভা চলাকালীন এলোপাথাড়ি ঢিল পড়ছিল। যাতে সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়। আমি আজ এখানে অতিথিমাত্র। দিলীপদাই মূল বক্তা। আপনারা নিরাপদে বাড়ি ফিরে যান। সেটাই এখন মূল চিন্তা আমার। সকলে নিরাপদে ফিরে এখান থেকে বেরনো না পর্যন্ত আরও এক ঘণ্টা মঞ্চের পিছনে অপেক্ষা করব আমি।’’

দিলীপকে আলিঙ্গন করে নন্দীগ্রামে স্বাগত শুভেন্দুর। —নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: সিঙ্গুরে টাটাকে ফেরাতে অনুরোধ জানাব প্রধানমন্ত্রীকে: মুকুল​

তবে শুভেন্দুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। তাঁর দাবি, তৃণমূল ভাঙিয়ে ‘মেগা যোগদান মেলা’র আয়োজন করা হয়েছিল। দলীয় নেতৃত্বের ওই সিদ্ধান্ত দলের নীচুস্তরের লোকজন মানতে পারেননি। তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের সভাস্থলে দেখে মেজাজ হারান তাঁরা। বিক্ষোভ দেখাতে তাই ভাঙচুর চালান। আনন্দবাজার ডিজিটালকে সুফিয়ান বলেন, ‘‘যাঁদের দলে যোগ দিতে ডাকা হয়েছিল, তাঁদের দেখেই ক্ষেপে ওঠেন বিজেপি-র পুরনো কর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে পদ্মশিবিরে রয়েছেন তাঁরা। তৃণমূলের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। সেই তৃণমূলের লোকজনের দলে যোগদান মেনে নিতে পারেননি তাঁরা। তাই অশান্তি বাধান। ভাঙচুর চালান। তৃণমূল যদি হামলা চালিয়ে থাকে, তা হলে যোগদান মেলা বন্ধ রেখে সভা গুটিয়ে চলে যেতে হল কেন ওঁদের? কারণ ওঁরা জানতেন, তৃণমূল থেকে আসা লোকজনের নাম ঘোষণা করলে বিজেপি সমর্থকরা আরও ক্ষেপে উঠবেন। তখন আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। তাই শুভেন্দুও আর বক্তৃতা করার সাহস দেখালেন না।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, গোকুলনগরের এক তৃণমূল নেতাকে বিজেপি-তে নেওয়ার প্রতিবাদেই গোটা ঘটনার সূত্রপাত। ওই নেতার বিরুদ্ধে বিজেপি কর্মীদের মারধর এবং তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ রয়েছে এলাকায়।

প্রসঙ্গত, বিজেপি-র অন্দরে প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল আসানসোলের নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে দলে নেওয়ার সময়। প্রকাশ্যেই ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। ফেসবুকে তিনি বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কিন্তু তিনি জিতেন্দ্রকে দল থেকে মেনে নিতে পারছেন না। কারণ, এতদিন তাঁর সহকর্মীরা জিতেন্দ্র বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত জিতেন্দ্র বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেননি। নন্দীগ্রামের ঘটনার পর বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, যদি গোটা রাজ্যের জেলায় জেলায় তৃণমূল ‘ভাঙিয়ে’ আনতে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদেরই বাধা এবং বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়, তা হলে যোগদানের পুরো পরিকল্পনাই বিশ বাঁও জলে পড়বে!

আরও পড়ুন: দলত্যাগীরা ‘হাওয়া মোরগ’ ধ্বংসের রাজনীতি করছে বিজেপি: পার্থ​

সভায় লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়েছে বলে দাবি করেন কৈলাস। যদিও বিজেপি-র স্থানীয় নেতাদেরই একাংশ জানিয়েছেন, ৩০ হাজার মানুষ আসবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন তাঁরা। সেইমতো ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। ভিড় যদিও নিরাশ করেনি। তবে তা ‘লক্ষাধিক’ নয়। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রসঙ্গে সুফিয়ান বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে বৃহস্পতিবার তো আমাদেরও সভা হয়েছিল। বাইরে থেকে বাসে চাপিয়ে লোক আনতে হয়নি। বিজেপি-র সভায় নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষ শামিল হননি। অন্যান্য এলাকা থেকে লোক আনা হয়েছে। ভিড় দেখিয়ে নন্দীগ্রামের মানুষকে ভোলাতে পারবেন না বিজেপি নেতৃত্ব।’’

তবে এই ডামাডোলের মধ্যেও আগাগোড়া শুভেন্দুকে সামনে রেখেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণে শান দিয়ে যান বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের মধ্যে মুকুলই প্রথম বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘যে যত চিৎকারই করুক না কেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে একেবারে বুকের মধ্যে আগলে রেখে যে লড়াই করেছিল, সেই লড়াইয়ের অন্যতম সেনাপতির নাম শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু না থাকলে নন্দীগ্রাম নেতাই স্মৃতি হয়ে যেত। নাম লেখা প্লেটটাও থাকত না।’’ সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা ভুল হয়েছিল বলে দাবি করে মুকুল বলেন, ‘‘সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতার পাশে থেকে বাংলার যুবসমাজ এবং মানুষের সঙ্গে অন্যায় করেছি। টাটাকে তাড়ানোর ফলে বাংলায় কোনও নতুন কলকারখানা হয়নি। সিঙ্গুরের মাটিতে গিয়েও বলেছি, আমরা জিতলে শিল্পোদ্যোগের দাবিকে নিশ্চিত করে সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করব টাটাকে আবার সিঙ্গুরে ফেরানোর জন্য।’’

Nandigram BJP Suvendu Adhikari Mukul Roy Dilip Ghosh Kailash Vijayvargiya West Bengal Assembly Election 2021 Mamata Banerjee TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।