Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sutapa Chowdhury Murder Case

ওই দিনই সন্ধ্যায় সুতপাকে খুন কি পূর্বপরিকল্পিত? ধরা পড়ার পর পুলিশি জেরায় কী বলেছিলেন সুশান্ত

সুতপাকে এক ঝলক দেখতেই সিনেমা হলে পৌঁছে গিয়েছিলেন সুশান্ত। কিন্তু সেখানে যা ঘটেছে, তার পর আর নিজেকে সামলাতে পারেননি! প্রতিশোধস্পৃহা থেকেই সুতপাকে কুপিয়ে খুন। খবর পুলিশ সূত্রে।

সুশান্ত চৌধুরী এবং সুতপা চৌধুরী।

সুশান্ত চৌধুরী এবং সুতপা চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০১
Share: Save:

প্রাক্তন প্রেমিকাকে এক ঝলক দেখতেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সিনেমাহলে। কিন্তু সেখানে যা ঘটেছে, তার পর আর নিজেকে সামলাতে পারেননি! পূর্বপরিকল্পিত নয়, বরং ‘তীব্র ঘৃণা আর উগ্র প্রতিশোধস্পৃহা’ থেকেই সুতপা চৌধুরীকে কুপিয়ে খুনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুশান্ত চৌধুরী। এমনটাই খবর পুলিশ সূত্রে। গত বছর ২ মে-ই কেন প্রাক্তন প্রেমিকাকে খুন করেছিলেন সুশান্ত, আদালতে জমা পড়া চার্জশিটে তার উল্লেখও রয়েছে।

বহরমপুরের গোরাবাজারের ২৬/৮ শহিদ সূর্য সেন রোড— যা লোকমুখে স্যুইমিং পুলের গলি নামে পরিচিত। সেখানে একটি মেসবাড়িতে থাকতেন বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রাণিবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা। সেখান থেকে খানিটা দূরে শহরের জনপ্রিয় ‘মোহনের মোড়’। সেই মোড়েই একটি শপিংমলের ‘মাল্টিপ্লেক্সে’ বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে একাই হেঁটে মেসে ফিরছিলেন। আর তখনই তাঁর পিছু নিয়েছিল প্রাক্তন প্রেমিক সুশান্ত। মেসের সামনে গলিতে সুতপাকে একা পেয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টাও করেছিলেন। তার পরেই কথা কাটাকাটি এবং শেষে ছুরি দিয়ে সুতপাকে কুপিয়ে খুন! গত বছর ২ মে সন্ধ্যায় ৬ টা ৩৫ মিনিটে ওই তরুণীর চিৎকারে লোকজন ছুটে এসে ওই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা সুতপাকে বাঁচাতে গেলে পিস্তল উঁচিয়ে (পরে পুলিশ জানতে পারে খেলনা পিস্তল) তাঁদের শাসাতেও দেখা যায় সুশান্তকে। এলাকাবাসীরা জানান, সেই সময় সুশান্ত বলছিলেন, এক জনকে খুন করলেও যা হবে, দশ জনকে খুন করলেও তাই হবে। প্রত্যক্ষদর্শীদের শাসানোর সময়েও সুতপাকে ক্রমাগত কোপ মারতে থাকেন সুশান্ত। প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়ো ফুটেজে তা দেখা গিয়েছে। সুতপা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়লে সেখান থেকে পালিয়ে যান যুবক। পরে সেই দিন রাতেই তিনি শমসেরগঞ্জে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার সুশান্তর ফাঁসির শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন বহরমপুরের দ্রুত নিষ্পত্তি আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক।

কিন্তু সেই দিনই কেন সুতপাকে খুন? ধরা পড়ার পর পুলিশি জেরায় তা স্বীকারও করেছিলেন সুশান্ত। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সুশান্ত জানিয়েছিলেন, সুতপা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এলেও তাঁকে মন থেকে ভুলতে পারিনি তিনি। বিহারের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলেও মন টেকেনি সেখানে। শুধুমাত্র সুতপাকে দেখার নেশায় বহরমপুরের একটি মেসবাড়ি ভাড়া করেছিলেন। সেখান থেকে টানা এক মাস সুতপার টিউশন থেকে শুরু করে বান্ধবীদের সঙ্গে তাঁর ঘুরতে যাওয়া— সবটাই নজরে রাখতেন সুশান্ত। যেখানে সুতপাকে দেখার সুযোগ থাকত, সব কাজ ফেলে সেখানেই ছুটে যেতেন তিনি। সুশান্তই পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর এই পিছু নেওয়া যে সুতপার নজরে পড়েনি, তা নয়। কিন্তু তরুণী তা এড়িয়ে চলতেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুশান্ত জেরায় স্বীকার করেছেন, ঘটনার দিন দুপুরে বহরমপুরের স্কোয়্যার ফিল্ডে নতুন প্রেমিকের সঙ্গে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন সুতপা। সেখানে একটি সিমেন্টের বেঞ্চে তাঁদেরকে বসে থাকতে দেখেছিলেন সুশান্ত। পরে সুতপা এবং তাঁর প্রেমিক সিনেমা দেখতে যান। সুশান্তও তাঁদের পিছন পিছন যান। সুতপারা সিনেমাহলের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার পর তিনি উল্টো দিকের একটি রেস্তরাঁয় অপেক্ষা করছিলেন। বিরতির সময় সুতপা ও তাঁর প্রেমিক বাইরে বেরিয়ে আসেন। সুশান্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, সেই সময় তাঁদের ‘ঘনিষ্ঠতা’ দেখে সহ্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। তড়িঘড়ি সেখান থেকে ফিরে যান মেসে। জামার ভিতরে কাটারি ও প্যান্টের পকেটে খেলনা বন্দুক নিয়ে ফিরে আসেন ওই সিনেমাহলের সামনে। সিনেমা শেষ হলে আবার সুতপার পিছু নেন তিনি। সুতপার প্রেমিক সুতপাকে গোরাবাজারের কাত্যায়নীর গলির সামনে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এর পর সুতপা হাঁটতে হাঁটতে মেসের কাছে পৌঁছতেই সামনে আসেন সুশান্ত। সুতপার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টাও করেন। কিন্তু তাঁকে দেখেই ছুটে মেসে ঢোকার চেষ্টা করেন সুতপা। সেই সময়েই কাটারি বার করে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করেন যুবক। সুতপাকে কোপাতে গিয়ে নিজের হাতেও কোপ লাগে। কিন্তু তাঁর কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সুশান্তের বক্তব্য, সুতপার মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে পালাতে পারছিলেন না। সেই কারণে খেলনা বন্দুক দেখিয়েই প্রতিবেশীদের হুমকি দিয়েছিলেন। গণপিটুনি খাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকলেও সেই সব কিছুই তাঁর মাথায় আসেনি বলেই জানিয়েছিলেন সুশান্ত।

মনোবিদদের একাংশের মতে, প্রেম-ভালবাসার সঙ্গে অধিকারবোধের এক রকম সম্পর্ক রয়েছে। সুতপার প্রত্যাখ্যান মানসিক ভাবে গ্রহণ করতে পারেনি সুশান্ত। প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি তরুণী অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ায় প্রতিশোধস্পৃহা তৈরি হয়েছিল সুশান্তের মধ্যে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হয় আমার, নয়তো কারও নও— এই প্রবণতা থেকেই সুশান্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এটা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা।’’ বৃহস্পতিবার রায়ের পর একই কথা বলেছেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সমাজে যে কোনও সম্পর্ক থেকেই বেরিয়ে আসার অধিকার রয়েছে সকলের। যেটা মেনে নিতে পারেনি সুশান্ত। এটা এক ধরনের জঘন্যতম অধিকারবোধের উদাহরণ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sutapa Chowdhury Murder Case Murshidabad Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy