Advertisement
E-Paper

তপ্ত সম্পর্ক, সতর্কতা বাড়ছে উত্তরের সীমান্তে

এর তিন বছর আগে, ২০১৭ সালে প্রায় দুই মাস ধরে চলেছিল ডোকলাম বিবাদ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২০ ০৮:২৫
Share
Save

উত্তরবঙ্গ ঘেঁষা ভারত-চিন সীমান্তে সামরিক গতিবিধি বাড়ছে। সেনা সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার লাদাখের ঘটনার পরে সীমান্তে নজরদারি তো বটেই, প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। লাদাখের ঘটনার পরে এখানকার চিন সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে এখনও চিনা বাহিনী কোনও অশান্তি তৈরির চেষ্টা করেনি। কিন্তু প্রস্তুত ভারতীয় সেনা। বাড়তি নজরদারি শুরু করে হয়েছে লাগোয়া নেপাল সীমান্তেও। কারণ, গত মাসেই লাদাখের মতো ঘটনা ঘটেছিল সিকিমের চিন সীমান্তে।

সেনা সূত্রের খবর, সেই সময়ে উত্তর সিকিমের নাকু লা সীমান্তে দুই সেনাবাহিনী মুখোমুখি চলে আসে। সেনাবাহিনীর কথায়, নাকু লা সেক্টরে সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে এগোচ্ছিল চিন। বিষয়টি দেখে ভারতীয় সেনা রুখে দাঁড়ায়। সেখানে চিন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল বলেই সেনা সূত্রে দাবি। অভিযোগ ছিল, সংর্ঘষে ৪ জন ভারতীয়, ৭ জন চিনা জওয়ান আহত হন। এই মাসের প্রথমেই চিফ অব আর্মি স্টাফ মনোজমুকুন্দ নারবানে সুকনা, বিন্নাগুড়ি সফরে এসে পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়ে যান।

এর তিন বছর আগে, ২০১৭ সালে প্রায় দুই মাস ধরে চলেছিল ডোকলাম বিবাদ। ভারত-চিন-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত ডোকা লা মালভূমি অঞ্চলকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। চিনা সেনা সীমান্ত লঙ্ঘন করে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে বুলডোজার দিয়ে দু’টি বাঙ্কার ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ ছিল। ওই অঞ্চলে দায়িত্বে থাকা ভারত তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (আইটিবিপি) ক্যাম্প সীমান্ত থেকে বেশ কিছুটা ভিতরে। টহল দেওয়ার সময় ভারতীয় জওয়ানরা সীমান্ত লাগোয়া বাঙ্কারগুলিতে বিশ্রাম নিতেন। এ ছাড়াও নিজেদের এলাকা না হওয়ার পরেও চিন এলাকায় রাস্তা তৈরি চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ। সামরিক কৌশলগত কারণে ভারত তা আটকে দিতেই দু’পক্ষ মুখোমুখি হয়ে যায়। পরে আলোচনায় সমাধান মেলে। এলাকা ঘুরে যান সেই সময়কাল সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত।

সীমান্ত সংবাদ

• উত্তরবঙ্গের নিকটবর্তী চিন সীমান্ত: পার্শ্ববর্তী রাজ্য সিকিমে

• শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব: সড়কে অন্তত ৩৭৮ কিলোমিটার

• সিকিমে চিন সীমান্ত: ২২০ কিলোমিটার বিস্তৃত

• সীমান্তের ওপারে: চিনের তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চল

• সীমান্ত চৌকি: ২০+

• সীমান্তে মোতায়েন: সেনাবাহিনী এবং আইটিবিপি (ভারত তিব্বত সীমান্ত পুলিশ)

• দায়িত্বে: ইস্টার্ন কম্যান্ডের ৩৩ কোর ত্রিশক্তি কর্পস

• বিশেষ দায়িত্বের শাখা: সেনা মাউন্টেন ডিভিশন (গ্যাংটক, কালিম্পং ও বিন্নাগুড়ি)

• সেনা সদর দফতর: শিলিগুড়ি লাগোয়া সুকনা

• আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: নাথু লা সীমান্ত দিয়ে ২০০৬ সাল থেকে বাণিজ্য শুরু হয়

• সমস্যাবহুল এলাকার উচ্চতা: নাথু লা (৪৩১০ মিটার), নাকু লা (৫৩৪৭ মিটার), ডোকলাম (৪৬৫৩ মিটার)

সিকিমে চিন সীমান্ত ২২০ কিলোমিটারের মতো। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর নাথু লা সীমান্তের বাণিজ্যপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ২০০৬ সালে তা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করতে খোলা হয়। করোনার আবহে আপাতত সীমান্ত বাণিজ্য পথটি বন্ধ। কিন্তু গত মে মাস থেকেই উত্তর সিকিম থেকে পূর্ব লাদাখের মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় চিনা বাহিনীর বিরুদ্ধে সীমান্তে নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। ভারতীয় সেনাও আরও কড়া হাতে কাজ শুরু করে। তার মধ্যেই ঘটে যায় নাকু লার ঘটনাটি।

সুকনা সেনা সদর দফতরের অফিসারেরা জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডর প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই চিকেন্স নেক বা করিডরের চারপাশে নেপাল, ভুটান, চিন এবং বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। সহজেই এই করিডর দিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পৌঁছনো যায়। তাই সামরিক এবং কৌশলগত কারণে বিশেষ করে চিন সীমান্তে বাড়তি নজর রাখা হয়। বাগডোগরা বা হাসিমারার মতো বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে আলাদা নজরদারি চলে। বুধবারও সিকিমে সেনাবাহিনীর গতিবিধি বাড়ানোর ছবি দেখা গিয়েছে।

সেনাবাহিনীর সুকনা ৩৩ কোরের এক পদস্থ কর্তা জানান, লাদাখে সংঘর্ষের কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশের সব চিন সীমান্তে বাড়তি সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উত্তরবঙ্গ ঘেঁষা সিকিমের চিন সীমান্ত তার থেকে বাদ যায়নি।

China India Border Army

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}