পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে নামছেন আনিসুর।নিজস্ব চিত্র
খুনের পরে মাঝে প্রায় এক মাসের ব্যবধান। অবশেষে রবিবার গভীর রাতে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা কুরবান শা হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত তথা বিজেপি নেতা আনিসুর রহমান।
ঘটনাচক্রে, রবিবারই সামনে এসেছিল আনিসুরের একটি ভিডিয়ো বার্তা। তাতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পাশাপাশি, পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে কার্যত ‘হুমকি’ দিতে দেখা গিয়েছিল আনিসুরকে। সেই ভিডিয়ো প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পরেই পুলিশ জানায়, মেচেদা রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ধরা পড়েছেন আনিসুর এবং তাঁর এক সঙ্গী মোবারেক করিম খান।
গত ৭ অক্টোবর পাঁশকুড়ার মাইশোরায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি কুরবান। তাতে আনিসুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছাড়া ছিলেন তিনি। আনিসুরের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে এ দিন একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন জেলা পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার। সেখানে তিনি জানান, অভিযুক্তদের ধরতে মোট ১২ জন পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে সিটের সদস্যদের তদন্ত শুরু করেন।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, আগেই ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে এক জন— দীপক চক্রবর্তী এই তদন্তে পুলিশের মূল ‘চাবি কাঠি’ হিসাবে কাজ করেছে। পুলিশের দাবি, দীপক জেরায় জানায়, মাস দু’য়েক আগে পাঁশকুড়াতে বসেই কুরবানকে খুনের পরিকল্পনা করেন আনিসুর। তাতে যুক্ত ছিলেন ধৃত মোট ৮ জন এবং মাইশোরা এলাকা থেকে ফেরার দুই আনিসুর ঘনিষ্ঠ নেতা।
পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে আনিসুর ধৃত ও পলাতক অভিযুক্তদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব দেন। এক ধৃত তসলিম আরিফ ওরফে রাজাকে পাঁচ লক্ষ টাকায় কুরবানকে খুনের সুপারি দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রাজশহর গ্রামের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য এবং শ্যামবল্লভপুর গ্রামের এক পলাতক অভিযুক্তের দায়িত্বে ছিল আততায়ীদের এলাকায় আনা এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। ধৃত দীপক রাজশহরের পলাতক প্রাক্তন সদস্যের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি পুলিশের। দীপক আততায়ীদের দেখভাল করতেন। আর এক ধৃত নবারুণ মিশ্রের দায়িত্ব ছিল কুরবানের গতিবিধিতে নজর রাখা এবং তা দীপককে জানানো। দীপকের মাধ্যমে কুরবানের গতিবিধির খবর পৌঁছে যেত আততায়ীদের কাছে। পুলিশের দাবি, অন্য এক ধৃত নিশীথ পাল ওই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। আর আনিসুর ঘনিষ্ঠ মলয় ঘোষ আততায়ীদের বন্দুক-গুলির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বৈঠকে পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত মোবারেক প্রথম থেকে আনিসুরকে সাহায্য করেছেন। খুনের পরে আনিসুর প্রথমে রাজ্যের বাইরে চলে যান। তবে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ ধরা পড়ার পরে আনিসুর কার্যত নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন এবং বন্ধ হয়ে যায় নগদ টাকার জোগান। পুলিশের দাবি, টাকার ব্যবস্থা করতেই আনিসুর মেচেদা এলাকায় এসেছিলেন। তখনই তাঁকে ধরা হয়। কুরবান খুনের ঘটনায় যে দু’টি বাইক ব্যবহার করা হয়, তার একটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেসাকুমার বলেন, ‘‘এটি একটি রাজনৈতিক খুনের ঘটনা। কুরবানের উপরে আনিসুর আগেও হামলা করেছে। সে সব মামলা এখনও চলছে। আমরা আশা করছি ফেরার অভিযুক্তদেরও দ্রুত ধরতে পারব।’’
আনিসুর ধরা পড়ায় এদিন তমলুক আদালতে তাঁর আগাম জামিনের শুনানি প্রত্যাহার করা হয়। পুলিশ দুপুর ১২ টা ৪০ মিনিট নাগাদ আনিসুর এবং মোবারককে জেলা আদালত চত্বরের কোর্ট লকআপে নিয়ে আসে। সেখানে আনিসুর বলেন, ‘‘আমি নির্দোষ। যদি দোষী হই নিশ্চয় শাস্তি পাব। কিন্তু এই খুনের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চাইছি।’’ ওই সময় সেখানেই ছিলেন আনিসুরের মা আনসারি বেগম-সহ তাঁর কয়েকজন অনুগামী। আনসারিরও দাবি, ‘‘আমার ছেলে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। সিবিআই তদন্ত চাইছি।’’ আনিসুরের মা যখন ওই দাবি করছেন, তখন আদালত চত্বরেই ছিলেন নিহত কুরবানের দাদা আফজল শা। তিনি অবশ্য ছিলেন চুপ। তবে কুরবানের স্ত্রী শাবানা বানু খাতুন বলেন, ‘‘আনিসুরই আমার স্বামীকে খুন করিয়েছেন। ওঁর ফাঁসি হলে স্বামীর আত্মা শান্তি পাবে।’’
এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপম করের এজলাসে তোলা হয় আনিসুর এবং মোবারককে। সেখানে আনিসুরের পক্ষের আইনজীবী অরুণ ঘোষ ও লক্ষ্মণ মণ্ডল বলেন, ‘‘একজন রাজনৈতিক নেতা খুন হয়েছেন। আনিসুর একজন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ সরকারপক্ষের আইনজীবী সফিউল আলি খান অবশ্য ধৃতদের জামিনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক আনিসুর এবং মোবারকের ১৩ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy