থমকে: বিক্ষোভের জেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খড়্গপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকল গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস। শনিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
নতুন নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের জেরে ব্যাহত হল ট্রেন পরিষেবা। তার জেরে দুর্ভোগ পোহালেন যাত্রীরা। ট্রেন অবরোধের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়ে থাকা ফাঁকা ট্রেনে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়েছে। এই গোলমালের জেরে বাতিল হয়েছে বহু দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেন। হাওড়া-খড়্গপুর ও শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখায় এ দিন রাত পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়নি। দক্ষিণ-পূর্ব রেল শনিবার মোট ১১টি দূরপাল্লার ট্রেন ও ৪০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করেছে। এ ছাড়াও, ৪টি ট্রেনের সময় বদল, ৪টি ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা ও ২টি ট্রেনকে ঘুরপথে চালানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং ডুয়ার্সের ট্রেনও বাতিল হয়। আজ রবিবার মালদহ-আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার, হাওড়া-আজিমগঞ্জ প্যাসেঞ্জার এবং রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস বাতিল করেছে রেল। বাতিল থাকবে কলকাতা-ডিব্রুগড় উড়ানও।
রেলের অশান্তি সব থেকে বড় আকার নিয়েছে মুর্শিদাবাদে। শনিবার বিকেল ৪টে নাগাদ কৃষ্ণপুর স্টেশন এবং কারশেডে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস-সহ চারটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগানো হয়েছে কৃষ্ণপুর স্টেশনের আরপিএফ ও জিআরপি অফিসেও। পরে বিক্ষোভকারীরা আগুন লাগিয়ে দেয় লালগোলা স্টেশন এবং বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে। কৃষ্ণপুর ও লালগোলা স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। তবে কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশ কিংবা আরপিএফের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। শুক্রবার বেলডাঙা স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন ফের ওই স্টেশনে আগুন লাগানো হয়। পুড়ে গিয়েছে স্টেশনের সব ঘর এবং কন্ট্রোল প্যানেল। সন্ধ্যায় নিমতিতা স্টেশনেও আগুন লাগায় বিক্ষোভকারীরা। স্টেশন চত্বরে রেলের অন্তত ৩০ জন কর্মী ও নিরাপত্তা কর্মী থাকেন। তাঁরা কী অবস্থায় রয়েছেন, তা রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। বিক্ষোভকারীরা এ দিন বিকেলে সারগাছি স্টেশনও ভাঙচুর করে।
সকাল থেকে অবরোধের জেরে মালদহ থেকে হাওড়াগামী ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস সকাল ৮টা নাগাদ আটকে পড়ে জঙ্গিপুর স্টেশনে। ওই ট্রেনের যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বাধ্য হয়ে রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের টিকিটের মূল্য ফেরত দেন। পোড়াডাঙা স্টেশনে অবরোধ শুরু হলে একাধিক ট্রেন আটকে পড়ে।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে মালদহ-কাটিহার প্যাসেঞ্জারে ঢিল ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। চালক-সহ কয়েক জন জখম হন। পরে একটি মালগাড়িতেও ভাঙচুর হয়েছে। হাঙ্গামা দেখে পালিয়ে যান যাত্রীরা। পরে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাসের ‘শেল’ ফাটিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। হরিশ্চন্দ্রপুরের স্টেশন ম্যানেজার রাজদীপ রাম বলেন, ‘‘রেলের প্রচুর সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে।’’ স্টেশনের কম্পিউটার সংরক্ষণ কেন্দ্রের বুকিং ক্লার্ক নুরজাহান বানু বলেন, ‘‘বিক্ষোভকারীরা ঢুকে সব ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। আমি প্রাণ বাঁচাতে আলমারিতে ঢুকে পড়ি।’’
এ দিন সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ বারাসাত-হাসনাবাদ শাখার হাড়োয়া রোড স্টেশনে অবরোধ শুরু হয়। সাড়ে সাতটা নাগাদ সন্ডালিয়া এবং লেবুতলা স্টেশনে অবরোধ শুরু হয়। তা চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। তার ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। বিকেলের পরে গোলমাল কমলে ট্রেন চলাচল শুরু করতেই ফের চলন্ত ট্রেন তাক করে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। যাত্রীদের নিরাপত্তার কারণে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ হাওড়ার সাঁকরাইল স্টেশনে ভাঙচুর করে টিকিট কাউন্টারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অবরোধ শুরু হয় বাউড়িয়াতেও। পরে চেঙ্গাইল এবং নলপুরেও অবরোধ শুরু হয়। তার জেরে যশোবন্তপুর দুরন্ত, পুণে দুরন্ত এক্সপ্রেস, দিঘা এসি, তিরুপতি হামসফর, গীতাঞ্জলি, এর্নাকুলাম অন্ত্যোদয়, করমণ্ডল, ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস বাতিল হয়। পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেসকে খড়গপুর স্টেশন এবং ভুবনেশ্বর-হাওড়া এক্সপ্রেসকে মেচেদা স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া হয়। রেল অবরোধের জেরে প্রচুর মানুষ কাছাকাছি ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে চলে আসেন। কিন্তু পথ অবরোধের জেরে সেখানেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভ-আন্দোলনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন, মুর্শিদাবাদে শান্তির বার্তা ইমামদের
শনিবার সকালে বীরভূমের মুরারই নতুন বাজার থেকে মিছিল বের হয়। পরে রেল অবরোধ হয়। অবরোধের ফলে ডাউন লাইনে বাঁশলৈ স্টেশনে আটকে যায় হাওড়াগামী শতাব্দী এক্সপ্রেস। ওই ট্রেনের যাত্রীরা জানান, স্টেশনে জল ও কোনও খাওয়ার দোকান ছিল না। কামরার এসি মেশিনও কাজ করছিল না। গৌতম ঘোষ নাম এক যাত্রী বলেন, ‘‘অনেকেই চিকিৎসা ও বিভিন্ন দরকারি কাজে কলকাতা যাচ্ছেন। অবরোধের ফলে আমাদের ভোগান্তি হল।’’ এর পাশাপাশি আরও কয়েকটি ট্রেন আটকে যায়। বেলা ২টো নাগাদ অবরোধ ওঠে। এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের কেশবপুর স্টেশনে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy