ভিডিয়োয় করোনা নিয়ে সতর্কবার্তা দেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি। বাংলার গ্রামাঞ্চলগুলিতে করোনা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই কাজ ছিল তাঁর। গত দেড় মাসে সেই কাজে বড় সাফল্য পেয়েছেন নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পাঠানো ৮টি ভিডিয়ো বার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজে লেগেছে বলে জানা গিয়েছে। মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকনমিক রিসার্চ’-এ প্রকাশিত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সহকর্মীদের একটি রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
ফোনের কলার টিউন থেকে টিভি-রেডিয়োর মাধ্যমে গত কয়েক মাস ধরেই করোনার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে আসছে সরকার। কিছু মানুষ সচেতন হলেও একাংশ ততটা আমল দেয়নি সেই প্রচারে। দেশ জুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। লাগাতার বেড়ে চলেছে মৃত্যুসংখ্যাও। এমন পরিস্থিতিতে মে মাসের গোড়ার দিক থেকে ভিডিয়ো বার্তার মাধ্যমে করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নামেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজের ম্যাসাচুসেটসের বাড়ি থেকে ঝরঝরে বাংলায় আড়াই মিনিট দৈর্ঘ্যের মোট ৮টি ভিডিয়ো রেকর্ড করেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে ভিড় এড়িয়ে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যেখানে সেখানে থুতু না ফেলা এবং হাঁচি-কাশির সময় কনুই বা তোয়ালে অথবা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দেন তিনি। সেই সঙ্গে জানান, জ্বর-সর্দি-কাশি হলেই করোনা হয়েছে বলে ভাবার কোনও কারণ নেই। তবে কোনওরকম উপসর্গ দেখলেই এলাকায় কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের তা জানাতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘ঝুঁকি বাড়ছে’, করোনা নিয়ে রাজ্যকে একগুচ্ছ পরামর্শ অভিজিৎদের
তাঁর রেকর্ড করা সেই ভিডিয়ো বার্তা প্রথমে সামনে থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা ৭০০ স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রায় ১৮০০ প্রাক্তন ও বর্তমান গ্রামীণ নেতাকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী ২ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কাছে তা পৌঁছয়। তবে গোটা প্রক্রিয়াটাই সারা হয় ‘র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল’ পদ্ধতিতে। করোনা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কতটা বাড়ছে তা দেখতে, তাঁদের দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটি ভাগের কাছে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিডিয়োবার্তা পাঠানো হয়। বাকিদের সরকারি প্রচারবার্তা পাঠানো হয়।
তাতে দেখা যায়, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট মানুষের কথাতেই সাড়া দিচ্ছেন বহু মানুষ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোওয়া বা মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে মানুষ উপলব্ধি করেছেন।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তি করোনা মোকাবিলায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা মেনে গ্রামের বাইরে পা রাখেননি কেউ। পরিষ্কার করে হাত ধোওয়া, মাস্ক পরার প্রবণতাও বেড়ে গিয়েছিল মানুষের মধ্যে। শুধু তাই নয়, রোগ না লুকিয়ে জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ নিয়ে আগের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে ছুটে গিয়েছেন। গবেষকদের মতে, ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, অথবা কোনও বিখ্যাত অভিনেতা বা ক্রিকেটারের দেওয়া বার্তা অনেক বেশি কার্যকর হবে।
বাংলার মানুষের মধ্যে করোনা সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এস্থার দুফলো-সহ এমআইটি, হার্ভার্ড এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও হাত লাগিয়েছিলেন। রিপোর্টটি লেখায় যুক্ত ছিলেন জন সি মার্টিন সেন্টার ফর লিভার অ্যান্ড ইনোভেশনশের অভিজিৎ চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘কাকে দিয়ে বার্তা পাঠানো যায়, তা নিয়ে মতবিরোধ হচ্ছিল আমাদের। শেষ মেশ নোবেলজয়ীকে অর্থনীতিবিদকেই বেছে নিই আমরা। কারণ আমাদের মনে হয়েছিল, মানুষ ওঁকে শ্রদ্ধা করেন। তাই ওঁর কথা মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলবে।’’
আরও পড়ুন: বাড়ছে স্ক্রিনটাইম, অনলাইন ক্লাসের সময় বেঁধে দিল কেন্দ্র
আন্তর্জাতিক খ্যাতি থাকায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্কবার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তাপস রায়। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। তাই ওঁর মাধ্যমেই সতর্কবার্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী, যা ভাল কাজ দিয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখনও পর্যন্ত অতিমারি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই করে উঠতে পারেনি বহু দেশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy