২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় বা গত ৫ অগস্ট অযোধ্যায় হওয়া ভূমিপুজোর স্মৃতি বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গবাসীর মধ্যে উস্কে দেওয়ার কাজটাই করবে পরিষদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে রাজ্যে ‘হিন্দুত্বের হাওয়া’ তৈরি করতে আসরে নামছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অযোধ্যায় ইতিমধ্যেই রামমন্দির নির্মাণ শুরু হয়েছে। আর তার জন্য দেশজুড়ে অর্থসংগ্রহ অভিযানে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলা। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলবে সেই অভিযান। পরিষদের লক্ষ্য, বাংলার সর্বত্র বাড়ি-বাড়ি যাবেন সংগঠনের কর্মীরা। কে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, তার উপর কোনও গুরুত্ব না দিয়ে সব বাড়িতেই যাওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গোটা দেশেই পরিষদ এই অভিযান চালাবে। কিন্তু সংগঠন সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলায় এই অভিযানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরিষদের নেতারা যদিও দাবি করছেন, এই অভিযানের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনের কোনও যোগ নেই। তবে পাশাপাশিই তাঁদের অনেকে এটাও মেনে নিচ্ছেন যে, এর ফলে ‘নরেন্দ্র মোদী সরকার হিন্দু সমাজের কথা রেখেছেন’— এমন বার্তা দেওয়া যাবে। আর তাতে ভোটবাজারে ‘লাভবান’ হবে বিজেপি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিতর্কিত জমি হিন্দুদের হাতে যাওয়ার পরে থেকেই বিজেপি স্লোগান তুলেছিল— ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। তার পরে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজোয় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের উপস্থিতিতে পৌরোহিত্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। যার মাধ্যমে সঙ্ঘ পরিবার এই বার্তাই দিতে চেয়েছিল যে, মোদীর জন্যই সবকিছু সম্ভব হচ্ছে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় বা গত ৫ অগস্ট অযোধ্যায় হওয়া ভূমিপুজোর স্মৃতি বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গবাসীর মধ্যে উস্কে দেওয়ার কাজটাই করবে পরিষদ। লক্ষ্য একটাই— হিন্দু ভোট এককাট্টা করা। এমনিতেই বাংলার নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে নামার আগে সলতে পাকানোর সময় রাজ্য বিজেপির নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণ’-এর অভিযোগ ধারাবাহিক ভাবে তুলে থাকেন। তারও লক্ষ্য একটাই— বিধানসভা ভোটের আগে ভোটের মেরুকরণ। সেই কাজটিই আরও সুচারু এবং খোলামেলা ভাবে করতে নামছে পরিষদ।
পরিষদ সূত্রের খবর, এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হচ্ছে —‘নিধিসংগ্রহ মহাভিযান যোজনা’। আগামী ১৫ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির দিন শুরু হবে অভিযান। চলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি মাঘ পূর্ণিমার দিন পর্যন্ত। ওই পুরো সময় ধরেই গোটা দেশে অভিযান হবে। তবে বাংলার এক পরিষদ নেতা জানিয়েছেন, এই রাজ্যে অত বেশি সময় নেওয়া হবে না। বাংলায় এক মাসের মধ্যেই অভিযান শেষ করা ফেলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, তাতে ১৬ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজোর মধ্যেই রাজ্যের সর্বত্র অভিযান শেষ করে ফেলবেন পরিষদ সদস্যরা। রাজ্যে কী ভাবে কাজ হবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা নভেম্বর মাসেই চূড়ান্ত করবে পরিষদ। ২৮ নভেম্বর কলকাতায় আসছেন পরিষদের সর্বভারতীয় সংগঠন সম্পাদক বিনায়করাও দেশপাণ্ডে। তাঁর উপস্থিতিতেই ঠিক হবে বঙ্গে অভিযানের রূপরেখা।
শুধু বিশ্ব হিন্দু পরিষদই নয়, নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্য এখন গোটা সঙ্ঘ পরিবারের। এই অভিযানে সরাসরি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) না নামলেও পরিবারের অন্যান্য সংগঠনগুলি পরিষদের সঙ্গে কাজ করবে। তাদের অভিযানে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনকেও যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে পরিষদের। সংগঠনের সর্বভারতীয় সহ সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘এই কর্মসূচিতে পরিষদ তো বটেই, সেই সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবারের অন্যান্য সংগঠনের সদস্যরাও যোগ দেবেন। সাধুসন্তরাও সঙ্গে থাকবেন। অযোধ্যায় নির্মীয়মাণ রাম মন্দিরের জন্য গোটা বাংলা জুড়ে মানুষের কাছে আমরা অর্থসাহায্য চাইব ।’’ বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। সেই কারণেই কি রাজ্যে বিজেপির পক্ষে হিন্দুত্বের হাওয়া তৈরি করতে এই অভিযানে নামছে পরিষদ? শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘রাজনীতি আমাদের কাজ নয়। তাই আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ জাতীয় গর্ব। তার অংশীদার বাংলাও। ভূমিপূজনের সময়ে বাংলার বিভিন্ন পূণ্যভূমি থেকে মাটি আর নদীর জল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অযোধ্যায়। এ বার বাংলার মানুষের নিধি সংগ্রহ করা হবে। রাম মন্দির সকলের। তাই সকলের অংশগ্রহণ চাই। এই ভাবনাটা তৈরি হবে সকলের মধ্যে।’’
পরিষদের সঙ্গে পরিবারের সব সংগঠন সহযোগিতা করলেও এই কর্মসূচিতে ঘোষিত ভাবে যোগ দেবে না বিজেপি। তবে কোনও বিজেপি নেতা বা কর্মী যদি অভিযানে যোগ দেন, তাতে ‘আপত্তি’ করবে না দল। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘রাম মন্দির কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটা একটা সামাজিক কাজ। তাতে যে কেউ অর্থসংগ্রহের কাজ করতে পারেন। এক্ষেত্রে বিজেপি কর্মী পরিচয়টা গৌণ। যাঁরা এই কাজ করবেন তাঁরা রামভক্ত।" এই অভিযানের ফলে বিজেপি বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক সুবিধা পাবে না? দিলীপের জবাব, "এই অভিযান না হলেও রাজ্যের মানুষ জানেন বিজেপি কথা রেখেছে। হিন্দু সমাজের দীর্ঘদিনের আবেগ রয়েছে রাম মন্দিরকে ঘিরে। সেই আবেগকে সম্মান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সেই কাজ করে বিজেপি আগেই মানুষের মন জয় করেছে।"
আরও পড়ুন: টুইট করে রাজ্যপাল অপরাধীদের আড়াল করছেন, আইনের তোপ দাগলেন কল্যাণ
শুধু অর্থসংগ্রহ নয়, এই অভিযানের মাধ্যমে রাজ্যে বড়মাপের জনসংযোগই লক্ষ্য পরিষদের। সাধারণ মানুষকে অন্দোলনের অংশ করে নিতে এই ধরনের অর্থসংগ্রহ অভিযান আগেও করেছে পরিষদ। কন্যাকুমারীতে ‘বিবেকানন্দ শিলা স্মারক’ নির্মাণের জন্য ১৯৬৫ সালে ১ টাকা করে কুপন নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়েছিল পরিষদ। ১৯৮৯ সালে ‘রামশিলা পূজন’ কর্মসূচিতেও ১ টাকা ২৫ পয়সার কুপন নিয়ে অভিযান চালিয়েছিল তারা। এ বার পরিষদ যা ঠিক করেছে, তাতে সর্বনিম্ন ১০ টাকার কুপন করা হচ্ছে। এটা ব্যক্তিগত দান হিসেবে নেওয়া হবে। এ ছাড়াও পরিবার পিছু ১০০ টাকার কুপন থাকবে। কেউ বেশি টাকা দিতে চাইলে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত নগদ নেওয়া হবে। এর উপর অর্থ দিতে গেলে তা অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত ‘শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র’ ট্রাস্টের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অনলাইনে জমা করতে হবে। পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে চেক, ড্রাফ্টও নেওয়া হবে। পেটিএম, গুগল পে, ভিম, ফোনপে-র মাধ্যমেও ট্রাস্টকে টাকা দেওয়া যাবে। রাজ্যে অভিযানের সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই সব তথ্যই জানানো হবে। সঙ্গে বলা হবে, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে অর্থসাহায্য করাটা কেন হিন্দুসমাজের ‘কর্তব্য’!
আরও পড়ুন: ২৬/১১-র মুম্বই হামলার ক্ষত কোনওদিন ভুলবে না ভারত: মোদী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy